মালদা, 19 এপ্রিল : কমিশনে তৃণমূল কংগ্রেস ও BJP-র বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস ও CPI(M) । গতকাল বিকেলে মালদা শহরে অনুমতি ছাড়াই পদযাত্রা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এর কিছুক্ষণ পরই BJP নেত্রী রূপা গাঙ্গুলিকে নিয়ে রোড শো করেন মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের BJP প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরি ।
গতকাল পাকুয়াহাটে জনসভা ছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মালদা শহরে পদযাত্রা করবেন। তাঁর নির্দেশ পেয়ে পাকুয়াহাটের সভামঞ্চ ছেড়ে মালদা চলে আসেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি সহ বেশ কয়েকজন নেতা । সেখানে সভা শেষ করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চপারে চলে আসেন মালদা শহরে । বিকেল সাড়ে 4টা নাগাদ শহরের রবীন্দ্র মূর্তি থেকে শুরু হয় তাঁর রোড শো । শহরের প্রায় সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ । এমনকি সাধারণ মানুষকেও রাস্তায় নামতে দেওয়া হয়নি । শহর ঘুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরাতন মালদার সাহাপুর সেতু মোড়ে পৌঁছোন । সেখান থেকে তিনি গাড়িতে চেপে চলে যান নারায়ণপুরের হোটেলে । এদিকে তাঁর পদযাত্রার পরপরই দক্ষিণ মালদার BJP প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরিকে নিয়ে রোড শো করেন রূপা গাঙ্গুলি । অবশ্য এক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি । ফলে ফের প্রবল যানজট দেখা দেয় শহরে ।
এই দুই রোড শোয়ের বিরুদ্ধে রাতেই জেলা নির্বাচন আধিকারিকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন CPI(M)-র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র । নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত অবজ়ারভারের কাছে একই অভিযোগ দায়ের করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলমও । আজ অম্বরবাবু বলেন, "নির্বাচন কমিশনের নিয়ম হল, কোনও সভা বা রোড শোয়ের জন্য সুবিধা অ্যাপসের মাধ্যমে 48 ঘণ্টা আগে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে । বিশেষত যেখানে স্টার কিংবা VVPI-রা প্রচারক হিসাবে থাকেন, সেখানে অবশ্যই এই অনুমতি নিতে হবে । কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত কেউ জানতেন না, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মালদা শহরে তৃণমূলের নির্বাচনি মিছিল হবে । এর কোনও আগাম অনুমতি ছিল না । কারণ, অনুমতি থাকলেই তার প্রচার করা হত । সন্ধেয় পূর্বতন অভিনেত্রী, বর্তমানে BJP নেত্রী রূপা গাঙ্গুলিও শহরে একটি রোড শো করেন । সেই শোয়েরও আগাম কোনও অনুমোদন ছিল বলে আমাদের জানা নেই । অর্থাৎ দুটি ক্ষেত্রেই নির্বাচনি আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে । এনিয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছি । আমার প্রশ্ন, যদি অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে, তবে কি নির্বাচন কমিশন তাদের ছাড় দেবে ?" গতকাল তৃণমূল নেত্রী দক্ষিণ মালদা লোকসভাকেন্দ্রের অন্তর্গত মালদা শহরে পদযাত্রা করেছিলেন । এই কেন্দ্রে এবার বামফ্রন্ট কোনও প্রার্থী দেয়নি । তাহলে কেন এই বিরোধিতা? উত্তরে অম্বরবাবু বলেন, "উত্তর বা দক্ষিণ বলে কোনও কথা নেই । মালদা শহর জেলাসদর । এখানে দুই কেন্দ্রের প্রার্থীর দেওয়াল লিখনই দেখতে পাওয়া যায় । ফলে এখানে কিছু হলে তার ছাপ গোটা জেলায় পড়ে ।" তৃতীয় দফার ভোটে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কমিশন বলছে 70 থেকে 80 শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয়বাহিনী থাকবে । কিন্তু তাঁদের দাবি, প্রত্যেক বুথেই এই বাহিনী নিয়োগ করতে হবে । কারণ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছে খুব খারাপ । অনেক মানুষ ভোট দিতে পারেননি । এবার মানুষ ভোট দিতে চান । তবে শুধু বুথে কেন্দ্রীয়বাহিনী তাঁরা চান না । তাঁদের দাবি, ভোটগ্রহণের অন্তত দু'দিন আগে এলাকায় টহলদারি করে কেন্দ্রীয়বাহিনীকে মানুষের আস্থা ফেরাতে হবে । দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে হবে । কারণ, এখন থেকেই গ্রামে গ্রামে মানুষকে হুমকি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে ।"এদিকে জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কালীসাধন রায় বলেন, "মোদি এবং দিদি, দুই দলের মধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কত বেশি কুকথা বলতে পারে ও নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করতে পারে । নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে মায়াবতী, যোগি আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । কিন্তু ভোট যত বেশি এগোচ্ছে, এরা তত বেশি নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করছে । গতকাল আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দিদি নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করেছেন । ভোট ঘোষণার পর থেকেই আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে যায় । মাইক ব্যবহার করে মিছিল করতে গেলে সুবিধা অ্যাপের মাধ্যমে আগাম অনুমোদন নিতে হয় । গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে মালদা শহরে যে নির্বাচনী মিছিল করা হয়েছে, আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, এর জন্য আগাম কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি । ঠিক একইভাবে দক্ষিণ মালদার প্রার্থীর সমর্থনে BJP নেত্রী রূপা গাঙ্গুলি গতকাল মালদা শহরে রোড শো করেছেন । তিনিও নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন । জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে এনিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন । কমিশনের কাছে এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও আর্জি জানিয়েছেন ।"