মালদা, 24 ডিসেম্বর : পৌর নির্বাচনের আগে বড়দিন ও নতুন বর্ষবরণের কার্নিভাল নিয়ে গরম জেলার রাজনীতি । সূত্রের খবর, পৌরবোর্ডের প্রতি বিরক্ত হয়ে বেশ কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর নিজেদের উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় কার্নিভালের আয়োজন করেছেন । এনিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগড়ে না দিলেও পৌরবোর্ডের প্রতি একাধিক ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরের বিরক্তির সুর ধরা পড়েছে ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় (Christmas and New Year carnival celebration turns into TMC inner clash in Malda Municipal Corporation) ।
উল্লেখ্য, 2017 সালে প্রথম ইংরেজবাজার পৌরনিগমের তৎকালীন চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ এই শহরে বড়দিন ও বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে কার্নিভালের আয়োজন করেন । কিন্তু করোনার জেরে গত বছর পৌরসভার কার্নিভাল বন্ধ ছিল । সেই সময় পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার নিজের উদ্যোগে মালদা শহরের ভবানি মোড়ে কার্নিভালের আয়োজন করেন । এবছর ফের কার্নিভালের আয়োজন করছে ইংরেজবাজার পৌরনিগম ৷
অভিযোগ, পৌরনিগমের কার্নিভাল নিয়ে পৌরনিগমের ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরদের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি । এমনকি তাঁদের বৈঠকে ডাকা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী । এরপরে পৌরনিগমের একাধিক কো-অর্ডিনেটর নিজ নিজ এলাকায় কার্নিভালের উদ্যোগ নিয়েছেন । যদিও বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন পৌরনিগমের প্রশাসক সুমালা আগরওয়ালা ।
আরও পড়ুন : English Bazar Municipality Meeting : ভোট আসতেই নজরে জঞ্জাল সাফাই, ইংরেজবাজার পৌরসভায় জরুরি বৈঠক
কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, "কার্নিভাল ও বড়দিনের উৎসবের মধ্যে তফাত রয়েছে । ইংরেজবাজার পৌরনিগমের তরফ থেকে এর আগেও কার্নিভাল করা হয়েছিল । যাঁরা এই আয়োজন করেছিলেন, তাঁরাই জানেন কার্নিভাল কী ধরনের হয় । সাতদিন ধরে রাস্তা বন্ধ করে এই কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছিল । মানুষ পৌরনিগমের এই কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়েছিলেন । আবার এবছর পৌরনিগমের কার্নিভাল হচ্ছে । দুলাল সরকার নিজের উদ্যোগে কার্নিভাল করছেন । বালুরচরেও একটা মেলা হচ্ছে । সবাই নিজের নিজের মতো করে উৎসব পালন করছে । পৌরনিগম থেকে কার্নিভাল হলে অন্য কেউ উৎসব পালন করতে পারবে না, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই । আর পৌরনিগম যদি সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই আয়োজন করত, তবে হয়তো এই ধরনের কিছু হত না । বিষয়টি আমারও জানা ছিল না । পরে শুনতে পাচ্ছি পৌরনিগম থেকে কার্নিভালের আয়োজন করা হচ্ছে । পৌরনিগমের প্রশাসক নিজেদের প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে হয়তো আলোচনা করেছেন । সমস্ত কো-অর্ডিনেটরদের বিষয়টি জানা থাকলে সকলের কিছু মতামত থাকত । সর্বজনীন দুর্গোৎসবে যদি আমাকে না ডাকা হয়, আমি নিজে দুর্গাপুজোর আয়োজন করতেই পারি ।"
পৌরনিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, "কো-অর্ডিনেটররা পৌরনিগমের বিরুদ্ধে কার্নিভাল করছে এই কথাটা ভুল । পৌরনিগম কার্নিভালের আয়োজন করে থাকে । এবছরও হচ্ছে । পাশাপাশি কো-অর্ডিনেটররা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কার্নিভালের আয়োজন করছেন । তবে তার মানে এই নয় যে, তাঁরা পৌরসভার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কার্নিভালের আয়োজন করছেন । সমস্ত কো-অর্ডিনেটর একত্রিত হয়ে এই কার্নিভালের আয়োজন করলে আয়োজন বড় হতে পারত । তবে এটা বলা যাবে না, তাঁরা পৌরসভার থেকে আলাদা করে কার্নিভালের আয়োজন করছেন । অনেক ওয়ার্ড দূরে দূরে থাকায় কো-অর্ডিনেটররা এই আয়োজন করছেন । অনেক কো-অর্ডিনেটরের মনে কার্নিভাল নিয়ে ক্ষোভ থাকতেই পারে । কিন্তু তাঁরা প্রশাসককে কিছু জানাননি । যতি তাঁরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতেন তবে নিশ্চয় প্রশাসক কিছু ভাবনা চিন্তা করতেন।"
আরও পড়ুন : Malda TMC Inner Clash : মালদায় প্রকাশ্যে শাসক দলের কোন্দল, অপসারিত পঞ্চায়েত প্রধান
যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ পৌরনিগমের প্রশাসক সুমালা আগরওয়ালা । তিনি বলেন, "ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরদের কার্নিভালের বৈঠকে ডাকা হয়নি, এটা একদম ভুল কথা । সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । উৎসবের মরশুমে সবাই আনন্দ করে । গত বছর পৌরনিগম থেকে কার্নিভালের আয়োজন করা হয়নি । গতবছর কিছু কো-অর্ডিনেটর নিজের এলাকায় কার্নিভালের আয়োজন করেছিলেন । এবার তাঁদের পাশাপাশি আরও কয়েকজন নিজের এলাকায় কার্নিভালের আয়োজন করছেন । কো-অর্ডিনেটররা নিজেদের এলাকায় কার্নিভালের আয়োজন করলে আমরা তো বাধা দিতে পারি না ।"