মালদা, 13 ফেব্রুয়ারি: নিজে বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত (Cancer-stricken Research at Oxford)৷ ছ'বছর মুম্বইয়ের নামী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হলেও এখনও কর্কট রোগের জাল থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারেননি ৷ কিন্তু রোগ ইচ্ছের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মালদার অঙ্কনার (Malda News)৷ এই মুহূর্তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (Malda Girl Researches in Oxford University) শিশুদের ভাইরাসঘটিত বিভিন্ন রোগের টিকা নিয়ে গবেষণায় মগ্ন তিনি ৷ গবেষণা চালাচ্ছেন কোভিড 19 বুস্টার ডোজের উন্নীতকরণ নিয়েও ৷ ভবিষ্যতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণাগারে কাজ করতে চান অঙ্কনা ৷
পুরো নাম অঙ্কনা সিংহ ৷ 26 বছর বয়সি অঙ্কনার বাড়ি মালদা শহরের হায়দারপুরে ৷ বাবা সুব্রত সিংহ ব্যবসায়ী ছিলেন ৷ গত বছর প্রয়াত হয়েছেন ৷ মা নিবেদিতা সিংহ গৃহবধূ ৷ মালদা শহরেরই একটি বেসরকারি স্কুল থেকে আইএসসি উত্তীর্ণ হন অঙ্কনা ৷ বাবা চেয়েছিলেন মেয়েকে বিজ্ঞানী করবেন ৷ তাই দক্ষিণ ভারতের একটি নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েকে জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করেন ৷ সেখান থেকে বিটেক উত্তীর্ণ হয়ে ফিনান্সে এমবিএ পড়তে শুরু করেন অঙ্কনা ৷
তখনই তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে ৷ জানা যায়, বিরল কনড্রোসারকোমা ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি ৷ অস্থি ও সংলগ্ন টিস্যুতে এই বিরল ধরনের ক্যানসার দেখা যায় বলে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যাচ্ছে ৷ 2016 থেকে 2022 পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা চলেছে মুম্বইয়ের এক নামকরা ক্যানসার হাসপাতালে ৷ তবে তাতে পড়াশোনায় ছেদ পড়েনি তাঁর ৷
দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলেও অঙ্কনা জেনেটিক্স গবেষণার স্বপ্ন দেখতেন ৷ সেই স্বপ্ন তাঁর সফল হয় 2022 সালের অক্টোবরে ৷ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পেডিয়াট্রিক ভ্যাকসিন গবেষণায় ডাক পান অঙ্কনা ৷ গত বছরের 3 অক্টোবর থেকে সেখানেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস ডেটা ম্যানেজার পদে গবেষণা করছেন তিনি ৷ কাজ করছেন কোভিডের বুস্টার ডোজের মান উন্নয়ন নিয়েও ৷
আরও পড়ুন:দেখেছেন মা-দিদার কষ্ট, ক্যানসার দিবসে চুল দান জঙ্গলমহলের শিক্ষিকার
বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ছাড়াও ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ভাষায় সাবলীল অঙ্কনা অক্সফোর্ড থেকে জানান, "বাবাই আমাকে এমন একটা জায়গায় দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন ৷ আমি বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য, তিনি আমার এই উত্তরণ দেখে যেতে পারলেন না ৷ গত বছর যখন অক্সফোর্ডের তরফে আমার নিয়োগপত্র হাতে এসে পৌঁছল, তখন বাবার শেষকৃত্য চলছে ৷ যখন শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়ি ৷ তবে কখনওই মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি ৷"
অঙ্কনার কথায়, "জানি, শরীর থাকলে রোগব্যধি হতেই পারে ৷ শ্রীরামকৃষ্ণও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৷ কিন্তু মানবকল্যাণ থেকে তিনি কখনও পিছনে সরে আসেননি ৷ তিনিই আমার প্রেরণা ৷ তাঁকে স্মরণ করেই সামনের দিকে তাকিয়ে চলেছি ৷ তবে সবেমাত্র 30 শতাংশ সিঁড়ি উঠতে পেরেছি ৷ এখনও অনেক পথ বাকি ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণা করে মানুষের কল্যাণে কাজ করা আমার লক্ষ্য ৷ ভবিষ্যতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণাগারে কাজ করার স্বপ্ন দেখি ৷ বাবা আমার আদর্শ ৷ তিনি চেয়েছিলেন, আমি যেন মালদা তথা দেশের নাম গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিই ৷ বাবার ইচ্ছে আমাকে পূরণ করতেই হবে ৷"