মালদা, 21 জুন :দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় সোনার পদক এল মালদার কৃষক পরিবারের ছেলে সন্দীপ রাজবংশীর হাত ধরে(Body Builder of Malda District Wins Gold Medal in International Competition)। দিল্লিতে আয়োজিত জাতীয় স্তরের দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে বাংলা তথা মালদা জেলার নাম উজ্জ্বল করেছেন সন্দীপ ৷ দিল্লি থেকে মঙ্গলবার মালদায় ফিরতেই সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে ৷ মালদা টাউন স্টেশন থেকেই সোনার ছেলেকে নিয়ে হুড খোলা গাড়িতে শুরু হয় রোড শো ৷
পুরাতন মালদার আদিনা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ । বাবা কুলেশ রাজবংশী পেশায় কৃষক । নিজের বিঘা দশেক জমিতে চাষবাস করে সংসার চালান । মা হেমতী রাজবংশী গৃহবধূ ৷ তাঁদের দুই ছেলে । সন্দীপ ও ছোটন । বড় ছেলে সন্দীপ, গৌড় কলেজে পড়ার সময় থেকেই দেহসৌষ্ঠবের প্রেমে পড়ে যান । যোগাযোগ করেন মালদা শহরের 1 নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির জিম ট্রেনার জয়ন্ত বর্মনের সঙ্গে ।
প্রশিক্ষক জয়ন্ত বর্মনের সঙ্গে স্বর্ণ পদকজয়ী সন্দীপ রাজবংশী তারপর থেকেই জয়বাবুর প্রশিক্ষণেই 12 বছর ধরে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেন সন্দীপ । 6 বছর ধরে ওই জিমে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন সন্দীপ নিজেও । তবে দিনে নিয়মিত দু’ঘণ্টা করে প্র্যাকটিস করতেন তিনি । প্রশিক্ষকের অনুপ্রেরণাতেই বিভিন্ন দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন ৷ প্রথমে সাফল্য না পেলেও ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি দু’বার জাতীয় প্রতিযোগিতাতেও পদক পান সন্দীপ । তবে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বর্ণ পদক পাওয়ার পাশাপাশি তিনি দেশ-বিদেশে প্রফেশনাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার ছাড়পত্রও পেয়েছেন ।
আরও পড়ুন :Kick Boxing Competition : রাজ্যস্তরের কিক বক্সিং প্রতিযোগিতায় চাঁচলের তিন কিশোরের পদক জয়
সোমবার রাতে দিল্লি থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছন সন্দীপ । বুধবার সকালে শতাব্দী এক্সপ্রেসে মালদা শহরে এসে পৌঁছতেই সোনার ছেলেকে ঘিরে শুরু হয় বিজয় উৎসব । স্টেশনে তাঁকে সংবর্ধনা জানান প্রশিক্ষক জয়ন্ত বর্মন ৷ এরপর সেখান থেকে শোভাযাত্রা করে জিম পর্যন্ত নিয়ে আসা হয় সন্দীপকে ৷
সোনাজয়ী সন্দীপ বলেন, 17 থেকে 19 জুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে আইএফবিবি প্রো-লিগ দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতার আসর বসে । সেখানে 80 কেজি বিভাগে সোনা জিতে আমি প্রো-কার্ড পেয়েছি । অর্থাৎ, এখন থেকে আমি আন্তর্জাতিক প্রফেশনাল লিগে অংশগ্রহণ করতে পারব । এই কার্ড পেয়ে আমি দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় আসর, অলিম্পিয়ায় যাওয়ার রাস্তাটা তৈরি করে ফেললাম । এবার প্রো-লিগ খেলে কোয়ালিফাই করতে পারলে আমি অলিম্পিয়াতে যেতে পারব । আমার বিভাগে প্রথমে 30 জন প্রতিযোগী ছিলেন । পরবর্তীতে প্রতিটি বিভাগ মিলিয়ে প্রো-কার্ড প্রতিযোগিতা হয় । সেখানে আমি সোনা জিতেছি । ওভার অল বিভাগে ভারত-সহ ছিল কোরিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড ও বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিরা ছিলেন । ভবিষ্যতে অলিম্পিয়াতে অংশ নেওয়াই আমার স্বপ্ন ।"
দেশের হয়ে সোনা জিতলেন মালদা তথা বাংলার ছেলে সন্দীপ আরও পড়ুন :Malda Girl Get 2 Medal : ন্যাশনাল মিটে জোড়া পদক, মাতৃ দিবসের আগে মালদাকে গর্বিত করলেন মা তনুশ্রী
সন্দীপের প্রশিক্ষক জয়ন্ত বর্মনের কথায়, "12 বছর আগে সন্দীপ আমার এখানে ফিটনেসের জন্য আসে ৷ এরপর ওর অধ্যবসায় আর ধৈর্য দেখে ওকে বডি বিল্ডিংয়ে জোর দিতে বলি । ওর সঙ্গে জুলফি আলি ওরফে সোহেল বলে আরও একজন ছিল । ওরা দু’জনেই বডি বিল্ডিং শুরু করে । ওদের দু’জনকে 2010 সালে কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত মিস্টার বেঙ্গল প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাই । সেবার ভাল ফল করতে না পারলেও তারপর থেকে সন্দীপ মিস্টার বেঙ্গল, মিস্টার অসম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছ । ও পাঁচবার মিস্টার বেঙ্গল খেতাব জিতেছে । জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে দু’বার মিস্টার ইন্ডিয়া খেতাবও পেয়েছে । এবার ও প্রো কার্ড পেল । আমি খুব খুশি । আমি সবাইকে বলছি, যারা এখন জিমে ব্যায়াম করে, তারা যেন সন্দীপকে দেখে অনুপ্রেরণা নেয় । পরিশ্রম করলে যে ফল পাওয়া যায়, তার উদারহণ সন্দীপ । ভাল পরিশ্রম করলে অনেকেই সন্দীপের মতো হতে পারবে । আমি চাই, এবার সন্দীপ মিস্টার এশিয়া, মিস্টার ওয়ার্ল্ড, মিস্টার অলিম্পিয়া খেতাবগুলিও জিতে মালদার মুখ উজ্জ্বল করুক ।"
উল্লেখ্য, এর আগে ত্রিপুরার মেয়ে তথা চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নার্স লিপিকা দেবনাথের সাফল্যে গর্বিত হয়েছিলেন মালদাবাসী । দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় জাতীয় স্তরে সাফল্য পেয়েছিলেন লিপিকা ।
আরও পড়ুন :Karate Championship medal At Kandi : ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ানশিপে পদক আসায় খুশির হাওয়া কান্দিতে