মালদা, 14 অগস্ট: অনুমানই সত্যি হল ৷ বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মালদার কালিয়াচক 3 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করল তৃণমূল ৷ এই পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের, সহ-সভাপতি বিজেপির ৷ যে সময় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশকে বিজেপি মুক্ত করতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যখন প্রায় প্রতিদিনই বিজেপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছেন তিনি, ঠিক সেই সময় গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করল তাঁরই দল ৷ স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে ৷
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে 42 আসনের কালিয়াচক 3 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল 13টি, বিজেপি 11টি, কংগ্রেস 15টি, সিপিএম একটি ও অন্যান্যরা দু’টি আসন পেয়েছে ৷ ফলে এই পঞ্চায়েত সমিতির অবস্থান ত্রিশঙ্কু হয়ে যায় ৷ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করতে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল কংগ্রেস ৷ যদিও তাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিজেপির জয়ী 11 জন প্রার্থীকেই শিলিগুড়ির একটি বিলাসবহুল হোটেলের ডেরায় তুলে নিয়ে যায় ঘাসফুল শিবির ৷ এতদিন সেখানেই সবাইকে রাখা হয়েছিল ৷ সোমবার বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরুর মুখে তাঁদের পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে নিয়ে আসা হয় ৷
আরও পড়ুন:সুতিতে কংগ্রেস-বিজেপির সমর্থনে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিক্ষুব্ধ তৃণমূলী
এই ঘটনায় আগেই বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছিল ৷ ঘাসফুলের কাছে দলকে বিক্রি করার পারস্পরিক অভিযোগ তুলেছিলেন বৈষ্ণবনগরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বাধীনকুমার সরকার ও বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি তারক ঘোষ ৷ দলের দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ দাবি করেছিলেন, তৃণমূল তাঁদের জয়ী প্রার্থীদের অপহরণ করেছে ৷ যদিও অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হননি ৷ গোটা বিষয়টি তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি ৷
এদিন কংগ্রেসকে হারিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের নিরুপমা মণ্ডল ঘোষ এবং সহ-সভাপতি হয়েছেন বিজেপির প্রিয়াঙ্কা সরকার দাস ৷ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর নিরুপমাদেবী বলেন, “আজ সভাপতি পদের নির্বাচনে 25টি ভোট পেয়ে আমি জয়ী হয়েছি ৷ সভায় আমাদের দলের 13 জন প্রতিনিধি ছিলেন ৷ বাকি কারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমি জানি না ৷ আজ সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির প্রিয়াঙ্কা সরকার দাস ৷ সহকারি সভাপতির পদটি তফশিলি জাতি সংরক্ষিত ৷ এখানে তৃণমূলের কোনও তফসিলি জাতিভুক্ত জয়ী প্রার্থী নেই ৷ তাই প্রিয়াঙ্কা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ৷” কিন্তু প্রিয়াঙ্কাদেবী কত ভোট পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই তৃণমূলের বাকি সদস্যরা নিরুপমাদেবীকে সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যান ৷
আরও পড়ুন:পঞ্চায়েত বোর্ড তৃণমূলের, চাবি থাকল কংগ্রেসের হাতে; অবাক ছবি ইংরেজবাজারে
এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, “ওখানে ঠিক কী হয়েছে, তা আমার বিশদে জানা নেই ৷ তবে শুনেছি, আজ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনে বিরোধী সদস্যরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সামিল হতে আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন ৷ আর যেহেতু আমাদের কোনও তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলা সদস্য নেই, তাই সহ-সভাপতি হয়েছেন বিজেপির এক সদস্য ৷ বিষয়টি সম্পূর্ণ জানার পরই এনিয়ে বিশদে কিছু জানাতে পারব ৷”
অন্যদিকে বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষের বক্তব্য, “কালিয়াচক 3 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে আমাদের জয়ী সদস্যদের আগেই অপহরণ করেছিল তৃণমূলের লোকজন ৷ আজ সেখানে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় ঠিক কী হয়েছে, তার রিপোর্ট এখনও পাইনি ৷ রিপোর্ট পেলে পুরো বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে ৷ রাজ্যের নির্দেশ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ৷”
আরও পড়ুন:মালদায় অভিষেকের নির্দেশ অমান্য, বিক্ষুব্ধকে উপ-প্রধান করে পঞ্চায়েতে বোর্ড তৃণমূলের