রাতভর পুলিশ সুপারের দফতর ঘেরাওয়ে বিজেপি সাংসদের বক্তব্য মালদা, 23 জুলাই: বামনগোলার পাকুয়াহাটে মহিলা নির্যাতনের ঘটনায় বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি ৷ দলের মালদা জেলা নেতৃত্বের কার্যকলাপেই সেটা পরিষ্কার ৷ এই ঘটনা নিয়ে পুলিশ সুপারের জবাবদিহির দাবিতে গতকাল শনিবার দুপুর দু'টো থেকে বিজেপি নেতৃত্বের পুলিশ সুপার দফতর ঘেরাও কর্মসূচি জারি ৷ আজ থেকে বামনগোলা থানাতেও ঘেরাও কর্মসূচি চালু হবে বলে জানিয়েছেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷
এরই মধ্যে বিজেপির লাগানো প্লাসটিকের ছাউনি খোলা নিয়ে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে খানিকটা উত্তেজনা দেখা দেয় ৷ জনা তিনেক বিজেপি কর্মীকে লাঠি মারতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ৷ এই নিয়েও পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব ৷
পাকুয়াহাটে প্রকাশ্যে দুই মহিলার নির্যাতনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তোলপাড় রাজ্য ৷ নির্যাতিতাদের পাশে না দাঁড়িয়ে পুলিশ কীভাবে ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলা রুজু করে তাঁদের জেলে পাঠিয়েছে, তাও জেনে ফেলেছেন সবাই ৷ গোটা ঘটনায় দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তি এবং পুলিশ সুপারের জবাবদিহির দাবি তুলে গতকাল দুপুর থেকে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে বিজেপির মালদা জেলা নেতৃত্ব ৷ রাতভর সেখানেই কাটান দলের নেতা-কর্মীরা ৷
আজ রবিবার সকালে সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, "গতকাল দুপুর দুটো থেকে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে আমাদের অবস্থান চলছে ৷ পুলিশ সারা বাংলায় যেভাবে মহিলাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে, তার একটা নমুনা 18 জুলাই বামনগোলার পাকুয়াহাটে দুই মহিলাকে মারধরের ঘটনা ৷ সেখানে পুলিশের ষড়যন্ত্রেই ওই দুই মহিলাকে নির্যাতন করা হয়েছে ৷ পুলিশ সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা নেয় ৷ ফাঁড়িতে দুই মহিলাকে দু'ঘণ্টা বিবস্ত্র অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয় ৷ পরে জানা যায়, নির্যাতিতা দুই মহিলার বিরুদ্ধে ফাঁড়ি ভাঙচুরের মিথ্যে মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে দুই মহিলাকে জেলে পাঠানো হয়েছে ৷ এই ঘটনা খুব অমানবিক ৷ মহিলাদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদেই আমাদের অবস্থান ৷ এখনও পুলিশ সুপার আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি ৷ গোটা ঘটনার জবাব দেননি ৷ তিনি যতক্ষণ না গোটা ঘটনার জবাবদিহি করবেন, ততক্ষণ আমাদের অবস্থান চলবে ৷ এই ঘটনার মূল নায়ক বামনগোলা থানার আইসি ৷ তাই আজ বামনগোলা থানা ঘেরাও করে আমাদের কার্যকর্তারা বিক্ষোভ দেখাবেন ৷"
সাংসদের এই বক্তব্য দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে উত্তেজনা দেখা দেয় ৷ তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে বিক্ষোভকারী বিজেপি নেতা-কর্মীরা পুলিশ অফিসের গেটের বাইরে একটি প্লাসটিকের আচ্ছাদন টাঙিয়েছিলেন ৷ পুলিশ সেই আচ্ছাদন খুলে দেয় ৷ এই নিয়ে প্রতিবাদ জানালে বিজেপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা শুরু হয়ে যায় ৷ তারই মধ্যে দেখা যায়, গেরুয়া শিবিরের তিন কর্মী পাঁচিলে উঠে ওই প্লাসটিকটি ফের বাঁধার চেষ্টা করছেন ৷ সেই সময় তাঁদের লাঠি দিয়ে আঘাত করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ৷ এই ঘটনায় আগুনে যেন ঘি পড়ে ৷
আরও পড়ুন : দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ভিডিয়ো নিয়ে সরব বিজেপি, তদন্তে মালদা পুলিশ
উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা ৷ সাংসদের অভিযোগ, এক পুলিশকর্মী দলের মহিলা কর্মীদের গায়ে হাত তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "পুলিশ আমাদের মহিলা কার্যকর্তাদের গায়ে হাত দিয়েছে ৷ লাঠি চার্জ করেছে ৷ এই অমানবিক পুলিশের বিরুদ্ধে আমরা মহিলা কমিশনে যাব ৷ এই পুলিশ নির্লজ্জ ৷ কোনও অপরাধীকে এরা লাঠিপেটা করতে পারে না ৷ এরা মহিলাদের লাঠিপেটা করে ৷ আমাদের দাবি, পুলিশ সুপার-সহ এসব পুলিশকর্মীদের বরখাস্ত চাই ৷ এই রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি ৷"