চাঁচল (মালদা), 13 মে : প্রশাসনের মদতেই নদী চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ৷ সেই ছবি ধরা পড়েছে চাঁচলে ৷ একটি অভিযোগের ভিত্তিতে মাপজোকের পর কপালে ভাঁজ পড়েছে পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদেরও ৷ কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল ? নদীতে থাকা জায়গার পাট্টা কীভাবে মানুষকে দেওয়া হল ? তা বুঝতে পারছেন না তাঁরাও (Alleged Leasing of Lease in Mahananda River Basin With Help of Administration) ৷ এ নিয়ে দ্রুত ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েতে সদস্যরা ৷ পুরো ঘটনা নিয়ে মুখর বিরোধী শিবিরও ।
চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের স্বরূপগঞ্জ থেকে গাজোলের আলাল পর্যন্ত রয়েছে মহানন্দার একটি শাখা নদী ৷ মহানন্দা থেকে উৎপত্তি হয়ে সেটি ফের মহানন্দাতে গিয়েই মিশেছে ৷ মালদা জেলায় এই নদী মরা মহানন্দা নামে পরিচিত ৷ চাঁচলের বিস্তীর্ণ এলাকার জল নিকাশিতে প্রধান ভূমিকা এই মরা মহানন্দারই ৷ কিন্তু, দিনের পর দিন এই নদী চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ ফলে চাঁচলের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ৷ প্রতি বর্ষায় জমা জল চাঁচলের পরিচিত ছবি হয়ে উঠেছে ৷ অভিযোগ, প্রশাসনের মদতেই নদী চুরির ঘটনা ঘটছে ৷ এ নিয়ে অনেক আগেই সরব হয়েছিলেন স্থানীয় মানুষজন । এ বার প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও ৷
এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে আজ মরা মহানন্দার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তৃণমূল পরিচালিত চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা ৷ ওই ব্যক্তির অভিযোগের তিরে থাকা নির্মাণ কাজটিও তাঁরা পরিদর্শন করেন ৷ মাপজোক করে কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁদের ৷ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উৎপল তালুকদার বলেন, “আমরা বিষয়টি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি ৷ নদীটাই পাট্টা করে বিলি করে দেওয়া হয়েছে ৷ নদীর বুকে পাট্টার জমিতে অনেক পাকা বাড়িঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে ৷ কারা নদীর জমির পাট্টা দিল ? আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি ৷ এ নিয়ে বিডিও, এসডিও সহ বিএল অ্যান্ড এলআরও-কে চিঠি করব ৷ খুব তাড়াতাড়ি এ নিয়ে ব্যবস্থা করা হবে ৷ নইলে বর্ষায় জল নিকাশি কিছুতেই সম্ভব নয়।”
আরও পড়ুন : Bhabanipur Village Story : সেতুর আশায় মহানন্দা ও সুইয়ের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দারা
পঞ্চায়েত প্রধান আজমেরি খাতুনের প্রতিনিধি মোক্তার হোসেন জানান, “একটি জায়গা নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আজ সেই জমি মাপজোক করলাম ৷ এখানে সব দেখে আমাদের মাথাই খারাপ ৷ মহানন্দার নদীখাতের পাট্টা দিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ যে জায়গা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল, সেটিও নদীখাতের জমি ৷ অথচ সেই জমিকে বাস্তু দেখান হয়েছে ৷ নদীর বুকে একাধিক পাকা বাড়ি আর দোকান তৈরি হয়েছে ৷ আমরা এ নিয়ে বিডিও, এসডিও এবং বিএল অ্যান্ড এলআরও-কে চিঠি করব ৷ এ সব পাট্টা কিভাবে বাতিল করা যায় ? তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করব ৷ নদী দখলমুক্ত না করা গেলে চাঁচলের বিস্তীর্ণ এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়বে ৷”
প্রশাসনের মদতে মহানন্দার নদীখাতের পাট্টা বিলির অভিযোগ আরও পড়ুন : Landslide in North Bengal : মহানন্দা নদীর স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, পাহাড়ে বহু জায়গায় ধস
এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা ৷ এলাকার বিজেপি নেতা প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, “বর্তমানে গোটা রাজ্যেই পঞ্চায়েতগুলিতে শাসকদল বেনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছে ৷ মানুষের বিরোধী কার্যকলাপ চলছে ৷ চাঁচলের নিকাশির একমাত্র মাধ্য়ম মরা মহানন্দা ৷ প্রতি বছর বর্ষার আগে প্রশাসন সেই নদী সাফাইয়ের চেষ্টা করে ৷ কিন্তু, তাতে প্রশাসনকে বাধা দেওয়া হয় ৷ গত বছরও আমরা সেই ছবি দেখেছি ৷ নদীর অধিকাংশই দখল হয়ে গিয়েছে ৷ শুনতে পেয়েছি, নদীর জমি নাকি পাট্টা দিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ আশির দশক থেকেই নাকি পাট্টা দেওয়া হয়েছে ৷ সেই সময় বাম সরকার কীভাবে এই কাজ করল জানি না ৷ কিন্তু একটা কথা ঠিক, সরকারি আমলার হাত ছাড়া এই বেআইনি কাজ হতে পারে না ৷ আরও একটি কথা, এই জমিতে বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছে পঞ্চায়েত প্রশাসন ৷ তারাই বা কীভাবে এই জায়গায় বাড়ি তৈরির অনুমতি দিল ?’’ প্রশ্ন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের ৷ বিষয়টি নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠলেও এখনও পর্যন্ত ব্লক বা মহকুমা প্রশাসনের তরফে কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি ৷