মালদার রতুয়া 1 নম্বর ব্লকে প্রশাসনিক কর্তা ও তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ব্যালট বক্স চুরির অভিযোগ উঠেছে মালদা, 11 জুলাই: মধ্যরাতে স্ট্রংরুম থেকে ব্যালট বক্স চুরির অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ আরও অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতাতেই ব্যালট বক্স চুরি করেছে শাসক দল । সোমবার রাত একটা নাগাদ রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের স্ট্রং রুমে আসেন স্থানীয় বিডিও রাকেশ টোপ্পো এবং রতুয়া থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত ৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অজয়কুমার সিনহা ৷ বিডিও এবং আইসি স্ট্রং রুমে ঢুকে যান ৷ খানিক পরে সেখানে ঢুকতে যান অজয়কুমার ৷ সেখানে আটকে রাখা হয় ব্লক তৃণমূলের সভাপতিকে ৷ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, গোলমাল শুরু হওয়ায় সুযোগ বুঝে তাঁরা সবাই পালিয়ে যান ৷ এতে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয় ৷
ব্লক তৃণমূল সভাপতিকে স্ট্রং রুমে ঢুকতে দেখেই পাহারায় থাকা বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা 'চোর চোর' স্লোগান দিতে থাকেন ৷ অভিযোগ, সেই সময় বিরোধীদের দিকে ধেয়ে আসে তৃণমূলের লোকজন ৷ মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা ৷ সেখানেই আটক করে রাখা হয় ব্লক তৃণমূল সভাপতিকে ৷ পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷
আরও পড়ুন: বীরভূমে এনআইএ-এর হাতে গ্রেফতার তৃণমূল প্রার্থী
স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী মহম্মদ হাবিবুদ্দিন বলেন, "তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অজয় সিনহা ব্যালট বাক্স চুরি করতে এসেছিলেন ৷ স্ট্রং রুমে থাকা ব্যালট বাক্স পালটে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ৷ তাঁর সঙ্গে থানার আইসি এবং বিডিও-র সেটিং রয়েছে ৷" ওই কংগ্রেস কর্মী আরও জানান, একটি গাড়িতে ব্যালট বক্স নিয়ে এসেছিলেন আইসি, বিডিও ও তৃণমূল নেতা ৷ তাঁরা ব্যালট বক্স বদলের চেষ্টা করছিলেন ৷ এদিকে কংগ্রেস কর্মীরা অজয় সিনহাকে আটকে রাখেন ৷ উল্লেখ্য ভোটের পর থেকেই স্ট্রং রুম পাহারা দিচ্ছেন কংগ্রেস কর্মীরা ৷
কংগ্রেস কর্মীদের প্রশ্ন, "রাত দেড়টার সময় বিডিও আর আইসি কেন স্ট্রং রুমে ঢুকবেন ? তাঁদের বের করে দেওয়া হোক ৷ এরা সবাই চোর ৷ বিডিও আর আইসিও চোর ৷" অন্যদিকে তৃণমূলের রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বাহারাল অঞ্চল সভাপতি শেখ মিনুর পালটা অভিযোগ, "আমরা এখানে দাঁড়িয়েছিলাম ৷ সব দলের লোক স্ট্রং রুমের ভিতরে ঢুকেছে ৷ এরা আমাদের দেখেই চোর চোর বলে চিৎকার করছে ৷ আমাদের একটা ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে ৷ বিরোধীরা বাইরে থেকে সমাজবিরোধীদের নিয়ে এসেছে ৷"
শুধু রতুয়াই নয়, প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকেও ৷ সেখানেও রাত একটা নাগাদ ঝামেলা হয় ৷ তৃণমূলের নেতারা বৈষ্ণবনগর হাইস্কুলের স্ট্রং রুমে থাকা ব্যালট বক্স চুরির চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা ৷ আক্রান্ত হয় বৈষ্ণবনগর থানার আইসির গাড়ি ৷ তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় ৷ এই পরিস্থিতিতে আজ গণনা কতটা শান্তিপূর্ণ হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে ৷
এর আগে রবিবার মাঝরাতে মোথাবাড়ি হাইস্কুলের স্ট্রং রুমের ওয়াচ রুমে ঢুকতে গিয়ে বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন খোদ মন্ত্রী সাবিনা ৷ বিরোধীদের অভিযোগ, মন্ত্রীর নেতৃত্বে স্ট্রং রুম থেকে ব্যালট বক্স চুরির পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷ 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্ট্রং রুম থেকে ব্যালট বক্স চুরির সাক্ষী থেকেছে মালদাবাসী ৷
আরও পড়ুন: দিনহাটায় স্ট্রংরুমে ঢোকা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি বিবাদ, এলাকায় উত্তেজনা
সেবার ভোটে যে স্ট্রং রুম থেকে ব্যালট বক্স চুরি করে অন্য বক্স রেখে দেওয়া হয়েছিল, তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ গতকাল তিনি পরিষ্কারই জানিয়েছিলেন, ওই ভোটে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল ৷ এবার যাতে সেই ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রথম থেকে জেলার 15টি স্ট্রং রুমের প্রতিটির সামনে দিন-রাত পাহারা দিচ্ছেন বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা ৷