জেনারেল থেকে এসসির আবেদন তৃণমূল নেত্রীর, এই নিয়ে কী বলছে প্রশাসন ও খোদ নেত্রী ? মালদা, 16 ডিসেম্বর: পদের লোভে রাজপুত থেকে হতে যাচ্ছেন রাজবংশী ৷ মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য প্রতিভা সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি তাঁর জাতিগত শংসাপত্র বদলে ফেলেছেন ৷ বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে শাসকদলের অন্দরেও (Allegations Against TMC Leader of Fake Caste Certificate Application in Malda)৷ দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন ৷ যদিও প্রতিভাদেবীর দাবি, তিনি শংসাপত্র বদলের কোনও আবেদনই জানাননি ৷ প্রশাসনের ভুলে এই ঘটনা ঘটেছে ৷ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ৷
দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত প্রতিভা সিং ৷ আগে কংগ্রেস করলেও পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ একাধিকবার জেলা পরিষদ আসনে জিতেছেন তিনি ৷ কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন ৷ তিনি ও তাঁর পরিবারের সকলেই চাকুরিজীবী ৷ প্রতিটি সদস্য জেনারেল ক্যাটাগরিতে চাকরি পেয়েছেন ৷ এমনকি প্রতিভাদেবীও ৷ এর আগে জেনারেল প্রার্থী হিসাবেই তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৷ সেই তিনিই এবার তাঁর জাতিগত শংসাপত্র বদলের জন্য সদর মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৷ রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, গত 15 নভেম্বর প্রতিভাদেবী প্রশাসনের কাছে তাঁর জাতিগত শংসাপত্র বদলের আবেদন জানান ৷ তাঁর আবেদনের আইডি নম্বর SCWB06022022/69908 ৷ সেই আবেদনে তিনি নিজেকে রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত হিসাবে দাবি করেন ৷ নিজের ঠিকানা ইংরেজবাজার ব্লকের মিলকির ঘোষপাড়া দেখান ৷ নিয়মমাফিক শুনানি শেষে সদর মহকুমাশাসক তাঁর আবেদন মঞ্জুরও করেন ৷ এখন শুধু তাঁর তফশিলি শংসাপত্র বের হওয়াই বাকি ৷
আরও পড়ুন :আবাস যোজনায় সরকারি ঘর না-পাওয়ায় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ
প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিভাদেবী কেন এই কাজ করলেন ৷ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনটি তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে জেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে প্রতিভাদেবীর অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ৷ এবার তিনি সভাধিপতি পদের অন্যতম দাবিদার ৷ সেই পদ নিষ্কণ্টক করতেই তিনি এই বেআইনি কাজ করেছেন ৷
এই নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন,"প্রতিভা সিং আগে আমার ওয়ার্ডেই থাকতেন ৷ এখন বালুচরে চলে গিয়েছেন ৷ 1990 সাল থেকে আমি এখানকার জনপ্রতিনিধি ৷ প্রতিভাদের গোটা পরিবারকেই আমি চিনি ৷ তাঁরা রাজপুত ৷ মালদা শহরে এসে প্রথমে তাঁরা সর্বমঙ্গলা পল্লিতে থাকতেন ৷ পরে গোলাপট্টিতে চলে আসেন ৷ প্রতিভার দাদুর বাড়ি রতুয়ার কাহালা এলাকার নরোত্তমপুরে ৷ তাঁর পরিবারের প্রত্যেকে চাকরি করেন ৷ কারও তফশিলি জাতির শংসাপত্র নেই ৷ রাজপুত থেকে রাজবংশী হওয়া খুবই গর্হিত কাজ ৷ তিনি আইনের শপথ নিয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন ৷ ভুল হলফনামা জমা করে তিনি আইন বিরুদ্ধ কাজ করেছেন ৷ প্রশাসন কীভাবে তাঁকে তফশিলি জাতিভুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করল তা জানি না ৷ আমি শুধু জানি, তাঁরা কোনওদিন রাজবংশী নন ৷ তাঁরা রাজপুত ৷ কেন তিনি এই কাজ করলেন, তা তিনিই বলতে পারবেন ৷ দলীয় নেতৃত্ব আমার কাছে এই নিয়ে জানতে চাইলে আমি সত্যি ঘটনাই জানাব ৷"
আরও পড়ুন :পুলিশের খাতায় ফেরার তৃণমূল নেতাকে রেশনের ডিলারশিপ, অভিযোগ দায়ের
এই নিয়ে আজ ইটিভি ভারতের ক্যামেরার সামনে আসতে চাননি প্রতিভাদেবী ৷ ফোনে তিনি বলেন,"আমি তফশিলি জাতির শংসাপত্র পাওয়ার জন্য কোনও আবেদনই করিনি ৷ সরকারি ওয়েবসাইটে ভুল দেখাচ্ছে ৷ কিষাণদা কী বলেছেন, আমার জানা নেই ৷ আমি এব্যাপারে কিছু বলব না ৷ এই নিয়ে আমি কিছু জানতে পারলাম না, রিপোর্টার কীভাবে জেনে গেল ? আমি কোনও আবেদন করিনি ৷ রিপোর্টারকে এটাই লিখতে হবে ৷"
প্রশ্ন উঠেছে, ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী 15 নভেম্বর প্রতিভাদেবী তফসিলি জাতিভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন ৷ একমাসের মধ্যেই তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে ৷ যেখানে সাধারণ মানুষকে এই জাতিগত শংসাপত্র পেতে মাসের পর মাস প্রশাসনের দরজায় ঘুরতে হয়, সেখানে প্রতিভাদেবীর ক্ষেত্রে প্রশাসনের এত তৎপরতা কেন ? আজ ভারপ্রাপ্ত সদর মহকুমাশাসক ল্যাডেন লেপচাকে তাঁর দফতরে পাওয়া যায়নি ৷ জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়াও প্রশাসনিক কাজে বাইরে ছিলেন ৷ তবে ফোনে জেলাশাসক জানান, তিনি ঘটনাটির কিছুই জানেন না ৷ গোটা বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তবেই তিনি কোনও মন্তব্য করতে পারবেন ৷
আরও পড়ুন :জমি মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশ সরকারি আধিকারিকদের, জেলাশাসকের দ্বারস্থ মালদার কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি