মালদা, 21 মার্চ: অবশেষে আমরা-ওরার বিভেদ মুছেছে ৷ সেই বিভেদ মুছিয়ে দিয়েছেন বিশেষভাবে সক্ষম এক যুবক চরণ সরকার ৷ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের জালিয়াতিতে তিনি নিজের পৈতৃক ভিটে হারানোর মুখে ৷ এ নিয়ে বহুবার বিএল অ্যান্ড এলআরও, বিডিও, এসডিওকে চিঠি দিয়ে তাঁর জমি তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন ওই যুবক ৷ কিন্তু তাতে কাজ হয়নি ৷ জেলাশাসকের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানালেও ফল মেলেনি ৷ ভিটেছাড়া হতে হলে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন, তার কোনও দিশা পাচ্ছেন না চরণ সরকার (Malda specially abled youth in trouble) ৷ ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে একযোগে সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরা ৷
মালদার কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের মোথাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগলপুর গ্রামের বাসিন্দা চরণ ৷ জন্ম থেকেই একটি পায়ে সমস্যা রয়েছে তাঁর ৷ শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় কাজকর্মও কিছু করতে পারেন না ৷ ওই গ্রামে তাঁর ঠাকুরদা ঘিসু মাঝি সরকারের আট কাঠা বাস্তুজমি ছিল ৷ তাঁর মৃত্যুর পর সেই জমি দুই ছেলে সুরেন ও নরেশ মণ্ডলের মধ্যে ভাগাভাগি হয় ৷ সুরেনবাবুর ছেলেই চরণ ৷ বাবার মৃত্যুর পর মা বিমলা সরকারকে নিয়ে তিনি সেই ভিটেতে বাস করছেন ৷ ওই জমিতে বিমলাদেবীর নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরও তৈরি হয়েছে (allegation against Land Department) ৷
চরণের অভিযোগ, তাঁর এক আত্মীয়া রীতা সরকার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে হাত করে ওই ভিটে তাঁর দুই ছেলে রনি ও দীপের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন ৷ বিষয়টি জানতে পেরে তিনি রেকর্ড ঠিক করার জন্য বহুবার ভূমি সংস্কার দফতরে গিয়েছেন ৷ কিন্তু দফতরের দালালরা রেকর্ড ঠিক করে দেওয়ার জন্য 10 হাজার টাকা দাবি করছে ৷ চরণের বক্তব্য, “বিএল অ্যান্ড এলআরও আমার ঠাকুরদার জমি দীপ আর রনির নামে রেকর্ড করে দিয়েছেন ৷ আমি অনেকবার তাঁর দফতরে গিয়েছি ৷ কিন্তু তিনি আমাকে আজকাল করে বারবার ঘুরিয়ে দিয়েছেন ৷ রেকর্ড ঠিক করতে দালালরা অনেক টাকা চাইছে ৷ আমি প্রতিবন্ধী ৷ কাজকর্ম করতে পারি না ৷ অত টাকা কোথায় পাব ! সব জায়গায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি ৷ কাজ হচ্ছে না ৷”
চরণের এই সমস্যায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ৷ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রর মতে, দালাল আর বিএল অ্যান্ড এলআরও যোগসাজশে জেলাজুড়ে এমন ঘটনা ঘটছে ৷ এদের পিছনে শাসকদলের মদত রয়েছে ৷ এই দফতরে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে ৷ অন্যদিকে জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কালীসাধন রায়ের বক্তব্য, শাসকদলের একটাই নীতি, অবাধে লুট করা ৷ তাদের মদতে ভূমি সংস্কার দফতরে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে ৷ সেটা মুখ্যমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন ৷ হয়তো তিনি এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বা চাইছেন না ৷ ফলে গরিব মানুষ ভিটেছাড়া হচ্ছেন ৷