মালদা, 3 সেপ্টেম্বর : ফের গঙ্গার ভাঙনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত কালিয়াচকের 3 নম্বর ব্লক৷ আজ দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চিনাবাজার সংলগ্ন দুর্গারামটোলা গ্রামে গঙ্গার পার ভাঙনের জেরে তলিয়ে গিয়েছে অন্তত 15টি বাড়ি৷ প্রায় 35টি বাড়ির আসবাবপত্র ইতিমধ্যেই স্থানান্তরিত করা হয়েছে৷ যদিও সংখ্যা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয়দের হিসেবে গড়মিল ধরা পড়ছে৷
এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব মহম্মদ সামায়ুন রেজা দাবি, আজ ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত 50টি বাড়ি৷ শ’খানেক পরিবার গৃহহীন৷ নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে 15টি বাড়ি৷ যদিও এই সংখ্যা মানতে নারাজ ব্লক প্রশাসন ৷ তাদের দাবি, ভাঙনের জেরে তিনটি বাড়ি গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে৷ এদিকে ভাঙন রোধে নিয়ে সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ তুলে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের বিরুদ্ধে সবর হয়েছে জেলা কংগ্রেস ৷ বিক্ষোভ সভাও করা হয় কংগ্রেসের তরফে৷ উপস্থিত ছিলেন এলাকার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি, বিধায়ক তথা পুত্র ইশা খান চৌধুরি সহ স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আজ 34 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়৷
কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের চিনাবাজার গ্রামে গত রবিবারও ভাঙন দেখা দেয় ৷ মাত্র তিন ঘণ্টায় নদীতে তলিয়ে যায় 43টি বাড়ি৷ এরপর তিনদিন কোনও ভাঙন হয়নি৷ কিন্তু আজ ফের দুপুর আড়াইটে নাগাদ চিনাবাজার সংলগ্ন দুর্গারামটোলায় ধাক্কা দিতে শুরু করে নদীর স্রোত৷ এরপরই নদীতে ধসে যায় বাড়ি-ঘর গাছপালা৷ নদীর পাহল দেখেই স্থানীয়রা অনুমান করেন, ভাঙন আরও বাড়বে৷ তাই সময় থাকতে অনেকেই নিজেদের বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে শুরু করে৷
খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ, ব্লক অফিসের আধিকারিকেরা৷ প্রায় চারটে পর্যন্ত চলে গঙ্গার তাণ্ডব৷ ওই এলাকার বাসিন্দা, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন, INTTUC-র ব্লক সভাপতি মহম্মদ সামায়ুন রেজা বলেন, "ঘণ্টা দেড়েকের ভাঙনে আজ গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে 15টি বাড়ি৷ নদীর গতিপ্রকৃতি দেখে স্থানীয়রা প্রায় 35টি বাড়ি নিজেরাই ভেঙে সরিয়ে নিয়েছে৷ আমরা গোটা ঘটনার রিপোর্ট জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছি৷ ব্লক প্রশাসনের কাছে থেকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও ত্রিপলেরও আবেদন জানানো হয়েছে৷" তিনি আরও বলেন, "আজ প্রায় 300 মিটার গঙ্গার পার সংলগ্ন এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চলে ৷ জলের স্রোতে তিন থেকে পাঁচ মিটার জমি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে৷"
যদিও কালিয়াচক তিন ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভাঙনে মাত্র তিনটি বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে৷ তবে কতজন নিজেদের বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে তা এখনও প্রশাসনের জানা নেই৷
এরপরই সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ তুলে পথে নামে কংগ্রেস ৷ বৈষ্ণবনগরের 17 মাইল এলাকায় গঙ্গার ভাঙন রোধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্পৃহতার অভিযোগ তুলে একটি বিক্ষোভ সভা করা হয়৷ সভা শুরুর আগে সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি চিনাবাজার এলাকা পরিদর্শন করেন৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র, সুজাপুরের বিধায়ক ইশা খান চৌধুরিও৷
আবু হাসেম খান চৌধুরি বলেন, "2016 সালে এলাকারই সরকারটোলায় গঙ্গার তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছিল মানুষ৷ 150টিরও বেশি বাড়ি একদিনের ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল৷ তখন থেকে আমি একাধিকবার ভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছি৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি৷ কেন্দ্র এই জেলার ভাঙনরোধে কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছে না৷ রাজ্য সরকারও কেন্দ্রকে কোনও চাপ দিচ্ছে না৷ অসহায় মানুষজনের সমস্যা আরও বাড়ছে৷ এভাবেই ধীরে ধীরে মালদা জেলার মানচিত্র পালটে যাচ্ছে৷ ভাঙনরোধে স্থায়ী কাজ না করা হলে আমরা এই এলাকার মানুষকে নিয়ে প্রয়োজনে দিল্লিতে ধরনায় বসব৷"