মালদা, 8 জানুয়ারি : অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদার রতুয়া 2নং ব্লকের পরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীতলা গ্রামে৷ পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই চারজনকে আটক করেছে পুখুরিয়া থানার পুলিশ৷ গতকাল রাত 10টা নাগাদ ওই ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার হয়৷ খুনের কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
মৃত ছাত্রের নাম অনীক দাস৷ বয়স 13 বছর৷ পরানপুর হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সে৷ বাবা আশিসকুমার দাস পেশায় ব্যবসায়ী৷ পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ অনীকের বাড়ির সামনে একটি খোলা চিঠি পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ তাতে লেখা ছিল, অনীককে অপহরণ করা হয়েছে৷ গোটা ঘটনা জানাজানি হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়৷ চারদিকে অনীকের খোঁজ শুরু হয়৷ ঘণ্টা তিনেক পর বাড়ি পাশেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে অনীকের মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়৷ তার গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচানো ছিল৷ খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পুখুরিয়া থানায়৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থানে উপস্থিত হলে প্রথমে পুলিশকে মৃতদেহ উদ্ধারে বাধা দেয় স্থানীয়রা৷ অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখানো হয়৷ শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷ অনীকের মৃতদেহ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ৷ আজ সকালে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে৷
অনীকের বাবা আশিস দাস বলেন, “ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না৷ ছেলে বিকেলে প্রতিদিন খেলতে যায়৷ খেলাধূলা করে বাড়ি ফিরে মুড়ি খায়৷ তারপর সে কম্পিউটার ঘাঁটছিল৷ হঠাৎ সে দিদিকে বলে, অংশুকে ডেকে নিয়ে আসছি৷ ব্যাডমিন্টন খেলব৷ অংশু আমার ছেলেরই বন্ধু৷ প্রতিদিন সন্ধেয় একসঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলে ওরা৷ একথা বলে ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷ খানিক বাদে ফোন করে অংশু ছেলের খোঁজ করে৷ তাকে বলা হয়, অনীক তার বাড়িতেই গিয়েছে৷ তখন অংশু জানায়, অনীক হয়তো তার দাদার সঙ্গে আছে৷ এরপর আমার স্ত্রী অংশুর দাদাকে ফোন করে ছেলের খবর নিলে সে জানায়, অনীক তার সঙ্গে নেই৷ সে খোঁজ করে অনীককে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ এতেই আমার স্ত্রীর সন্দেহ হয়৷ এরপর গেট খুলে বাড়ি থেকে বের হতেই সামনে একটা চিঠি পড়ে থাকতে দেখে আমার স্ত্রী ও মেয়ে৷ তাঁরা ওই চিঠিটি পড়ে দেখে, সেখানে লেখা রয়েছে, অনীককে অপহরণ করা হয়েছে৷ ততক্ষণে আমার স্ত্রী অংশুদের বাড়িতে চলে গিয়েছে৷ চিঠিটা একটা বাচ্চার হাতে লেখা৷ মেয়ে চিঠিটা নিয়ে অংশুদের বাড়িতে যায়৷ অংশুর মা চিঠিটা পড়ছিল৷ কিন্তু তারপর থেকেই সেটা আর পাওয়া যাচ্ছে না৷ পাশের বাড়িতে একটি ছেলে রয়েছে৷ সে গাঁজা বিক্রি করে৷ আমি একবার তাকে এসব করতে নিষেধ করেছিলাম৷ আমার সন্দেহ, এই ঘটনায় পাশের বাড়ির বিতান, অংশুরা সবাই জড়িত৷”
পুখুরিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় মৃত কিশোরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রাতেই অংশু দাস, তার দাদা লাকি দাস, মা অনীতা দাস ও প্রতিবেশী এক যুবতি মেধা দাসকে আটক করা হয়েছে৷ আপাতত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ মৃতদেহটি আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে৷ আপাতত একটি খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে৷