মালদা, 4 নভেম্বর : পণের দাবিতে প্রাণ গেল এক অন্তঃসত্ত্বার ৷ তেমনই অভিযোগ উঠেছে রতুয়া দুই নম্বর ব্লকের পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষণপুর গ্রামে ৷ এই ঘটনায় আজ স্থানীয় পুখুরিয়া থানায় শ্বশুরবাড়ির ছ’জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের আম্মা ৷ অভিযোগ পেয়েই মৃতের শওহর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে শুরু হয়েছে পুলিশি তল্লাশি ৷ ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শেষে ওই বধূর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷
মৃত বধূর নাম আসমিনা বিবি ( 22 ) ৷ আব্বার বাড়ি পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেরই চাঁদপুর গ্রামে ৷ আব্বা শেখ সওকত বছর পাঁচেক আগে মারা গিয়েছেন ৷ তাঁর অবর্তমানে আসমিনার তিন দাদা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান ৷ চার বছর আগে দেখাশোনা করে তাঁর নিকাহ্ দেওয়া হয় এলাকারই পরাণপুর গ্রামের যুবক শেখ হাইউলের সঙ্গে ৷ সে’ও পেশায় শ্রমিক ৷ তাদের দু’বছরের একটি মেয়ে রয়েছে ৷ বর্তমানে আসমিনা সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন ৷
নিকাহের পর থেকে কাজকর্মে হাইউলের খুব একটা মন ছিল না বলে অভিযোগ ৷ সংসার টানতে সে শ্বশুরবাড়ির উপরেই ভরসা করত ৷ মাঝেমধ্যেই আব্বার বাড়ি থেকে টাকা ও জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য বিবিকে চাপ দিত ৷ কোনও কারণে বিবি সেসব আনতে অস্বীকার করলে আসমিনার উপর অত্যাচার চালাত ৷ সেই কাজে তাঁর আব্বা, আম্মা সহ কয়েকজন আত্মীয়ও মদত দিত বলে অভিযোগ ৷ এভাবেই সে নিজের মোটরবাইক, টিভি, আলমারি, সোফা ইত্যাদি নানা জিনিস শ্বশুরবাড়ি থেকে বাগিয়েছে ৷ লকডাউনের সময় থেকে হাইউল কাজকর্ম একেবারেই বন্ধ করে দেয় ৷
মালদায় খুন সাত মাসের অন্তঃসত্তা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সে আসমিনাকে আব্বার বাড়ি থেকে 20 হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলে ৷ আসমিনা আব্বার বাড়িতেও যান ৷ কিন্তু গতকাল তাঁর এক দূর সম্পর্কের ভাই মারা যাওয়ায় আব্বার বাড়িতে কেউ ছিল না ৷ তিনি শ্বশুরবাড়ি ফিরে গিয়ে হাইউল ও তাঁর বাড়ির লোকজনকে সেকথা খুলে বলেন ৷ কিন্তু তাঁর কথা মানতে চায়নি শ্বশুরবাড়ির কেউ ৷ অভিযোগ, এরপরেই পরিবারের সবাই মিলে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ৷ খুনের পর হাইউল ও তাঁর আম্মা সাহানাজ বিবি গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করে ৷ কিন্তু তাদের দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীর ৷ গ্রামবাসীরা দু’জনকে একটি ক্লাবে আটক করে রেখে তাঁদের বাড়িতে যায় ৷ দেখা যায়, ঘরের ভিতর পড়ে রয়েছে আসমিনার দেহ ৷ বাড়িতে কেউ নেই ৷ খবর দেওয়া হয় পুখুরিয়া থানায় ৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থানে যায় ৷ আসমিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় আড়াইডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ আজ সেখানেই তাঁর দেহের ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত হয় ৷ তারপর তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠায় পুলিশ৷
আসমিনার আম্মা জলেদা বেওয়া বলেন, "চার বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম৷ মেয়েকে কখনও শান্তিতে থাকতে থাকতে দেয়নি৷ ওকে কিছুই দিত না৷ এনিয়ে গ্রামে 10বার বিচার বসেছে ৷ বিচারের পর দশদিন ঠিক থাকতে না থাকতেই ফের অত্যাচার চালাত মেয়ের উপর ৷ বারবার খুনের হুমকি দিত ৷ গতকাল রাতে গ্রামের লোকজনই আমাদের খবর দেয়, মেয়েকে ওরা মেরে ফেলে দিয়েছে ৷ খবর পেয়ে আমরা মেয়ের বাড়িতে এসে দেখি, তিনটা ঘরেই তালা ৷ কেউ কোত্থাও নেই ৷ মেয়ে ভিতরে পড়ে রয়েছে ৷ ওদের দাবি মতো সব দিয়েছি ৷ তবু মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না ওরা ৷ ওরা আমার মেয়েকে কেড়ে নিল ৷ আমি ওদের ফাঁসি চাই ৷"
এই ঘটনায় আজ জলেদা বেওয়া পুখুরিয়া থানায় জামাই শেখ হাইউল, তার আব্বা মহিদুর রহমান, আম্মা সাহানাজ বিবি, মাসি লগিনা বিবি, মেসো সহিদুর ইসলাম ও মাসির ছেলে আইয়ুবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ থানার OC ঝোটন প্রসাদ জানিয়েছেন, "অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ হাইউল ও সাহানাজ বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ বাকি অভিযুক্তরা পলাতক ৷ তাঁদের খোঁজ চলছে ৷ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে৷ গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে ৷"