মালদা, 17 জুন : একুশ শতকেও অষ্টাদশের ছবি ৷ সেই ছবি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এখনও কতটা পিছিয়ে আদিবাসী সমাজ ৷ মাস চারেক আগে মানসিক ভারসাম্য হারানো এক মহিলাকে বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়িতে ৷ শুধু দিনে নয়, রাতেও খোলা আকাশের নীচেই একদিন থাকতে হয়েছে তাঁকে ৷ কারণ, তাঁর দেখাশোনার কেউ নেই ৷ শেষ পর্যন্ত খবর পেয়ে পুলিশ ওই মহিলাকে শিকলমুক্ত করে ৷
পুরাতন মালদার ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের কুতুবপুর গ্রামে আদিবাসীদের বসবাস ৷ ওই গ্রামেই থাকেন সুজি মুর্মু নামে 36 বছরের এক মহিলা ৷ কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী নন্দ টুডু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৷ তারপর ছেলে শিবা আর মেয়ে পার্বতীকে নিয়ে ভাই আমিন মুর্মুর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন সুজি ৷ এতদিন ভালোই ছিলেন ৷ নিজেদের খানিকটা জমিতে চাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমিতে কাজকর্ম করে রোজগারও করতেন ৷ কিন্তু বিধি বাম ৷ মাস চারেক আগে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারান সুজি ৷ অবশ্য দিদিকে ফেলে দেননি আমিন ৷ দিদির চিকিৎসাও করাচ্ছিলেন তিনি ৷ কিন্তু অর্থাভাবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার ৷ দু'দিন আগে তিনি গ্রামের বাইরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান ৷ সেইদিন দিদিকে ঘরের বাইরে গাছের গুড়িতে শিকলে বেঁধে রেখে যান ৷ বুধবার দুপুরে শিকল বাঁধা সুজিকে দেখতে পেয়ে একজন গ্রামবাসী মালদা থানায় খবর দেন ৷ খবর পেয়েই পুলিশ গ্রামে গিয়ে সুজিকে শিকলমুক্ত করে ৷
সুজির বোন আরতি মুর্মুও কুতুবপুর গ্রামে থাকেন ৷ তাঁর বক্তব্য," ও আমার দিদি ৷ মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ খোলা থাকলে অন্যের বাড়ি থেকে ফল-ফুল পেড়ে নেয় ৷ কারওর কাপড়, কারওর বাসন নিয়ে চলে আসে ৷ এনিয়ে গ্রামের মানুষ অনেকবার অভিযোগ জানিয়েছে ৷ তার উপর ভাই নেই ৷ বিয়েবাড়ি গিয়েছে ৷ দেখার লোক নেই ৷ লোকের ক্ষতি করে বলে দিদিকে শিকলে বেঁধে রেখে গিয়েছে ভাই ৷ দিদির চিকিৎসা করিয়েছি ৷ ডাক্তার বলেছে ঠিক হতে সময় লাগবে ৷ ইতিমধ্যে 60-70 হাজার টাকা খরচ হয়েছে ৷ আমরা খেটে খাই ৷ অত টাকা কোথায় পাব ? জমি বন্ধক রেখে এতদিন চিকিৎসা চলেছে ৷ আর পারা যাচ্ছে না ৷ পুলিশ এসে শিকল খুলতে বলে ৷ আমরা শিকল খুলে দিয়েছি ৷"