পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Brain Tumour : বাঁচতে চায় ছোট্ট সুহানা, সাহায্যের কাতর আর্জি দিশেহারা বাবা-মার - 6 years old girl suhana diagonosed with brain tumour

একদিন বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলে বাড়ি ফেরার পর সুহানা বলে, "মা খুব মাথা ব্যথা করছে ।" নুরবানু ভেবেছিলেন, ঘুমোলেই মেয়ের মাথা ব্যথা সেরে যাবে । কিন্তু তা হয়নি । পাঁচ মাসের মধ্যে সেই ব্যথা ধীরে ধীরে চলাফেরার শক্তি কেড়ে নেয় সুহানার । চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সুহানা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ।

Brain Tumour
Brain Tumour

By

Published : Sep 7, 2021, 6:31 PM IST

মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : ছ'বছর আগে ঘর আলো করে যখন সে এসেছিল, আনন্দের সীমা ছিল না মা-বাবার । প্রথম সন্তানের মুখ ভরা হাসি দেখে মেয়ের নাম রেখেছিলেন সুহানা । ধীরে ধীরে বড় হয়েছে । পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটোছুটি করেছে । মালদার চাঁচলের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ও নুরবানু খাতুন পাঁচ বছর বয়সে মেয়েকে স্কুলেও ভর্তি করেছিলেন । হঠাৎই বিনা মেঘে বজ্রপাত । একদিন বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলে বাড়ি ফেরার পর সুহানা বলে, "মা খুব মাথা ব্যথা করছে ।" নুরবানু ভেবেছিলেন, ঘুমোলেই মেয়ের মাথা ব্যথা সেরে যাবে । কিন্তু তা হয়নি । পাঁচ মাসের মধ্যে সেই ব্যথা ধীরে ধীরে চলাফেরার শক্তি কেড়ে নেয় সুহানার । চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সুহানা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত । দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন ।

খুব দ্রুত সুহানাকে দিল্লি অথবা বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা ৷ অস্ত্রোপচারের জন্য আনুমানিক 4-5 লাখ টাকা খরচ হবে । চিকিৎসকের এই ঘোষণায় মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে মা-বাবার । নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে এত টাকা কে দেবে ? স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে মেয়ের নাম নেই । সেই কার্ডে মেয়ের নাম তুলতে ব্লকে গিয়েছিলেন সফিকুল ইসলাম । তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের বাইরে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কোনও মূল্য নেই । এই পরিস্থিতিতে সুহানার ভরসা প্রতিবেশীরা । তাঁরাই চাঁদা তুলে ছোট্ট সুহানার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ।

সুহানার বাড়ি চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের বারোগাছিয়া গ্রামে । বাবা সফিকুল ইসলাম পেশায় কাঠমিস্ত্রির সহায়ক । মা নুরবানু খাতুন গৃহবধূ ৷ মাস ছয়েক আগেও আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই স্বাভাবিক ছিল সুহানা । সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত তার উচ্ছ্বলতায় ভেসে যেতেন বাড়ির সবাই । কিন্তু এখন সফিকুল সাহেবের বাড়িতে যেন কবরস্থানের স্তব্ধতা । মাঝেমধ্যে ছোট্ট মেয়েটির যন্ত্রণার চিৎকার ছাড়া কোনও আওয়াজ শোনা যায় না ।

আরও পড়ুন : Sadhan Pandey: চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে মুম্বই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সাধন পান্ডেকে

মেয়ের যন্ত্রণা চোখে দেখতে পারছেন না মা নুরবানু খাতুন ৷ বললেন, "মেয়ের মাথায় ফোসকার মতো হচ্ছে । সেসব পরে ঘায়ের মতো হয়ে যাচ্ছে । ও শান্তিতে থাকতেই পারছে না । ব্যথা সহ্য করতে না পেরে পাশে থাকা সবাইকে কামড়ে, আঁচড়ে দিচ্ছে । কেউ ওকে ধরে রাখতে পারে না । খেতে পারছে না । খাওয়াতে গেলে দেখছি জিভ একদিকে চলে যাচ্ছে । ঘুমও অনেক কমে গিয়েছে । মাঝেমধ্যে যন্ত্রণায় নিজের মাথা নিজেই আঁচড়ায় ।" একমাত্র সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা মা বলছেন, "মালদা মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেছেন, ওকে দিল্লি বা বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যেতে হবে । সেখানেই মাথায় অস্ত্রোপচার করতে হবে । তার জন্য পাঁচ লাখ টাকা খরচ হবে । এদিকে করোনার জন্য স্বামীর কাজকর্ম সেভাবে চলছে না । স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে আমার নাম রয়েছে । ব্লক থেকে বলেছে, কার্ডে সুহানার নামও তুলে দেওয়া হবে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ওই কার্ডে কোনও সুবিধে পাওয়া যাবে না । এখন প্রশাসন যদি কিছু সাহায্য করে তবে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারব । আমি সবার কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি ।" একই আবেদন জানিয়েছেন সুহানার বাবা সফিকুল ইসলাম ৷

এই পরিস্থিতিতে সুহানার পাশে রয়েছে বারোগাছিয়া গ্রামের মানুষ । গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ আলম, পারভেজ আলমরা জানিয়েছেন, তাঁরা সাধ্যমতো সফিকুল সাহেবকে অর্থ সাহায্য করার জন্য তৈরি রয়েছেন । কিন্তু এই বিপুল টাকা জোগাড় করার মতো ক্ষমতা গ্রামের মানুষগুলোর নেই । প্রশাসন কিংবা বিত্তবানরা একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ছোট্ট সুহানার মুখের হাসি ফিরে আসতে পারে । গোটা ঘটনা জেনে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, "আমার কাছে এমন আবেদন নিয়ে কেউ আসেনি । ভিনরাজ্যের কিছু হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসার সুবিধে পাওয়া যায় । আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা করছি ।"

আরও পড়ুন : Chandrakona : মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসার আর্জিতে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা মায়ের

ABOUT THE AUTHOR

...view details