মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : দিন দিন ঝাপসা হচ্ছে চোখের আলো, তবু বাতাসে সুর ছড়াচ্ছেন ভগবান । সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ছেন শহরের রাস্তায় । হাতে পুরোনো একটা বেহালা । তারে ছড় উঠতেই বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা । আসক্ত শরীরটা একটানা বেশিক্ষণ টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না । খানিক বাদেই থমকাতে হয় । কোথাও বা রাস্তার পাশে বসেও পড়তে হয় । একটু ধাতস্থ হয়ে ফের পথ চলা । সুরের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ বাড়িয়ে দেন খুচরো নোট কিংবা কয়েন । পেট ভরতে সেটাই ভরসা ভগবানের ।
ভগবান মালি । দেখে মনে হবে বয়স বুঝি সত্তর পেরিয়েছে । কিন্তু তা নয়। অভাবী পেট বয়সটা অন্তত বছর পঁচিশেক বাড়িয়ে দিয়েছে । এখন 56 । দুই চোখেই ছানি । আলোতেও সবকিছু ঠিকমতো ঠাহর হয় না । বেশিরভাগ সময় স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অন্ন সংস্থানে । যা উপার্জন হয়, স্বামী-স্ত্রী আর এক ছেলের পেট কোনওরকমে চলে যায় । মালদা শহরের বালুচর এলাকায় একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকেন তাঁরা ।
ভগবানবাবুর দেশ কিন্তু মালদা নয় । তাঁরা আদপে গুজরাটের বাসিন্দা । আমেদাবাদে তাঁদের আত্মীয়রা এখনও রয়েছেন । পারিবারিক পেশা, বাসনের হকারি করা । তাঁর বাবা কস্তুর মালি আমেদাবাদ থেকে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন । কলকাতার রাসবিহারী এলাকায় জন্ম হয় ভগবানবাবুর । বাবার কাছেই বেহালায় হাতেখড়ি । ছোটোবেলায় দেখেছেন, বাবাও কলকাতার অলিতে গলিতে বেহালা বাজাতেন । কখনও বা কোনও মেহফিলে ডাক পড়ত । সবমিলিয়ে বাবার উপার্জন হত ভালোই ।