মালদা, 6 জুন : "মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে........৷" জ্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তি থেকে পরবর্তী সাতদিন এমনই সব সুর বয়ে যায় ইতিহাস প্রসিদ্ধ রামকেলিতে ৷ প্রতিবছর ওই তিথি থেকে শুরু হয়ে যায় রামকেলি মেলা ৷ কয়েক লাখ মানুষের সমাবেশে গমগম করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গৌড়ভূমি ৷ কোনও একসময় এই মেলায় শুধুমাত্র কড়ে আঙুল দেখে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করত বৈষ্ণব পুরুষরা ৷ সেকারণে রামকেলির আর এক নাম গুপ্ত বৃন্দাবন ৷ রামকেলির ধুলোয় মিশে রয়েছে শ্রীচৈতন্যের ধর্মজাগরণের কাহিনিও৷ এগিয়ে আসছে সেই তিথি ৷ কিন্তু গৌড়ের পূণ্যভূমেও হানা দিয়েছে কোরোনা ৷ প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোরোনা সংক্রমণ রোধে এবার মেলার আয়োজন করা যাবে না ৷ মেলা কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গেছে, এর জেরে প্রায় 20 কোটি টাকার ক্ষতি হতে চলেছে ।
মালদা-মহদিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথ ধরে গেলে মালদা শহর থেকে 13 কিলোমিটার দূরে পিয়াসবাড়ি গ্রাম ৷ সেই গ্রামের মোড় থেকে ডানদিকে আরও এক কিলোমিটার গেলেই পড়বে রামকেলি ৷ বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের মধ্যেই এর অবস্থান ৷ ষোড়শ শতাব্দীতে ধর্মজাগরণের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের কাজ শুরু করেন শ্রীচৈতন্য ৷ সেই সূত্রেই তিনি নবদ্বীপ থেকে পদব্রজে বৃন্দাবনের উদ্দেশে রওনা দেন ৷ 1514 সালের জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির আগের দিন তিনি গৌড়ভূমে উপস্থিত হন ৷ তিনদিন গৌড়ে থাকেন । সেইসময় গৌড়ে রাজত্ব করছিলেন নবাব হুসেন শাহ ৷ নবাবের মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম দুই সদস্য ছিলেন সাকর মল্লিক ও দাবির খাস ৷ তাঁরা দু’জনেই চৈতন্যদেবের সংস্পর্শে এসে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন ৷ রামকেলিতে একটি তমাল গাছের নিচে তাঁদের দীক্ষা দেন চৈতন্যদেব ৷ এরপর থেকে সাকর মল্লিক সনাতন ও দাবির খাস রূপ গোস্বামী নামে পরিচিত হন৷ পরবর্তীতে তাঁরা সেই তমাল গাছের নিচে একটি মন্দির নির্মাণ করেন ৷ যদিও কালের নিয়মে সেই মন্দির এখন আর নেই ৷ চৈতন্যদেবের গৌড়ে আগমন উপলক্ষে রামকেলিতে মেলা শুরু করেন নিত্যানন্দ গোস্বামী বংশের গোস্বামী অটলবিহারী দেবানন্দ প্রভুপাদ ৷ সেই মেলাই রামকেলি মেলা নামে পরিচিত ।
সেই থেকে এখনও চলছে মেলা ৷ গোটা দেশ, এমনকী বিদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক লাখ বৈষ্ণব এই মেলায় অংশ নেন ৷ 6 বছর আগে এই মেলার দায়িত্ব নেয় মালদা জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন ৷ জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি থেকে প্রতিদিন ভোর হলেই শুরু হয় বাউল গানের আসর ৷ চলে হরিনাম সংকীর্তনও ৷ আখড়ায় আখড়ায় নাচে-গানে মেতে ওঠেন বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীরা ৷ দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে ৷