পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Gambhira Festival: প্রথা মেনে মালদায় শুরু হল চারশো বছরের প্রাচীন গম্ভীরা উৎসব - মালদার প্রাচীনতম লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা উৎসব

প্রথা মেনে 2রা বৈশাখ মালদার শুরু হয়েছে প্রাচীনতম গম্ভীরা উৎসব ৷ অন্যবারের মতো এবারেও বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মানুষের ঢল নেমেছে ৷ 500 বছরের পুরনো এই গম্ভীরা উৎসব ৷ বুড়িকালী মা আর চামুণ্ডা মায়ের মিলন দিয়ে উৎসবের শুরু হয় ৷ তবে প্রাচীন লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানাচ্ছেন জেলাবাসী ৷ তাই তারা এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখার আবেদন করেছেন সকলের কাছে ৷

Gambhira Folk Festival
মালদার প্রাচীনতম গম্ভীরা উৎসব

By

Published : Apr 18, 2023, 6:01 PM IST

মালদায় শুরু হল চারশো বছরের প্রাচীন গম্ভীরা উৎসব

মালদা, 18 এপ্রিল: নতুন বঙ্গাব্দ পড়তেই প্রথা মেনে শুরু হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা উৎসব ৷ হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের ছায়ায় তৈরি এই লোকসংস্কৃতি মালদা জেলার অন্যতম পরিচিতি ৷ লোকসংস্কৃতির গবেষকদের একাংশের মতে, গম্ভীরা শব্দটির মূলে রয়েছে 'গম্ভীর' অর্থাৎ শিব ৷ জেলার বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক তাঁর লেখায় জানিয়েছেন, মালদা এবং দিনাজপুর এলাকা একসময় পৌন্ড্রবর্ধনভুক্ত ছিল ৷ পৌন্ড্রবর্ধনের অন্তর্গত বরেন্দ্রভূমির প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলি হল পৌন্ড্রিক, পৌন্ড্র, পৌন্ড্র-ক্ষত্রিয় ইত্যাদি ৷

এই জেলার পুরাতন মালদা, গাজোল, বামনগোলা ও হবিবপুর বরেন্দ্রভূমি অথবা বরিন্দ হিসাবে পরিচিত ৷ এই এলাকায় রাজবংশী, দেশিপলি, সাধুপলি প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বাস ৷ যাদের সঙ্গে কোচ, পৌন্ড্র প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ৷ এসব জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত উৎসবই গম্ভীরা ৷ গম্ভীরার আচারগত দিকটির অস্তিত্ব অতি প্রাচীন ৷ বৌদ্ধ সংস্কৃতির অন্যতম এই শাখার অস্তিত্ব শিব পুরাণেও পাওয়া যায় ৷ তুলনায় এর ব্যবহারিক দিকটি অনেক নবীন ৷ বর্তমানে যে গম্ভীরা মানুষের সামনে প্রদর্শিত হচ্ছে, তার উৎপত্তি 500 বছরের কিছু বেশি সময় আগে ৷ প্রবর্তনের সময় থেকেই গম্ভীরার এই ধারা মালদা জেলায় পালিত হয়ে আসছে ৷ এখনও তা অব্যাহত ৷

গম্ভীরার সঙ্গে মুখানাচের সুপ্রাচীন যোগাযোগ রয়েছে ৷ যদিও এর ব্যবহারিক ধারা প্রবর্তনের বেশ কিছু সময় পর গম্ভীরায় মুখানাচের অস্তিত্ব মেলে ৷ তবে তার বয়সও নেহাত কম নয় ৷ 400 বছরের বেশি সময় ধরে বৈশাখ মাসের শুরুতে পুরাতন মালদার বাচামারিতে ঐতিহ্যবাহী মুখা নাচের আয়োজন হয়ে আসছে ৷ চামুণ্ডা ও বুড়িকালীর মুখা পুজো ও মুখোশ নাচের মাধ্যমেই গম্ভীরা উৎসবের সূচনা হয় ৷ এবারও তার অন্যথা হয়নি ৷

রবিবার মধ্যরাতে মশাল নাচের মাধ্যমে এবারের গম্ভীরা উৎসবের পর্দা ওঠে ৷ সোমবার ভোরে আয়োজিত হয়েছে মুখোশ নাচ ৷ বাচামারি এলাকার দুই প্রান্তে, শক্তির দেবীর দুই রূপের মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন প্রচুর ভক্ত ৷ বাতাসার লুট, মুখোশ নাচের শিল্পীদের দেবীরূপে প্রণামের ঢল ৷ কারণ, এলাকার মানুষজন মনে করেন, এদিনই মা কালীর দুই রূপ, চামুণ্ডা ও বুড়িকালীর মিলন হয় ৷ এলাকার দুই প্রান্তে থাকা দুই বোনের মন্দির থেকে মুখা বছরের এই একটি দিনেই বেরিয়ে আসে ৷ দুই বোনের মিলনের সাক্ষী থাকতে শুধু এলাকা নয়, দূরদূরান্ত থেকেও অনেক মানুষ ভিড় করেন ৷

মালদার প্রাচীনতম লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা উৎসব

স্থানীয় বাসিন্দা শত্রুঘ্ন সিংহ বর্মা বলেন, "বাচামারি নিমতলি গম্ভীরা কমিটির তরফে আমরা জেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ৷ বর্তমান সময়ে প্রাচীন লোকসংস্কৃতি গম্ভীরা হারিয়ে যেতে বসেছে ৷ সেই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে আমরা প্রতি বছর উৎসবের আয়োজন করি ৷ এবারও সেই গম্ভীরা উৎসব পালিত হচ্ছে ৷ সারারাত বান ও মশাল নাচের সঙ্গে বৈশাখের তিন তারিখ ভোরে মুখোশ নাচের মাধ্যমে উৎসবের শুরু ৷ কথিত রয়েছে, প্রায় 500 বছর আগে এখানে মহানন্দা নদীর ঘাট থেকে দুই মায়ের মুখোশ উদ্ধার করেন এক সাধু ৷ সেই সময় থেকেই গম্ভীরায় এখানে মুখোশ নাচের প্রচলন ৷"

পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ জানান, প্রাচীনকাল থেকেই দোসরা বৈশাখ রাত থেকে এখানে গম্ভীরা উৎসব পালিত হচ্ছে ৷ বুড়িকালী মা আর চামুণ্ডা মায়ের মিলন দিয়ে উৎসবের শুরু হয় ৷ এই উৎসব কার্যত মিলন উৎসবের রূপ পেয়েছে ৷ এই উৎসব জেলার প্রাচীনতম উৎসব ৷ বহু মানুষের জমায়েত হয় ৷ প্রত্যেকে রীতি মেনে শ্রদ্ধার সঙ্গে এই উৎসব পালন করে থাকেন ৷

আরও পড়ুন:জেলার গম্ভীরা শিল্পের আধুনিকীকরণে রাজ্য সরকার ও ইউনেস্কোর যৌথ কর্মশালা

ABOUT THE AUTHOR

...view details