পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Sep 18, 2020, 7:56 PM IST

ETV Bharat / state

চাকরি না হওয়ায় ফের মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন 35 জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি

নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী ৷ তবু এখনও তাঁদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করেনি জেলা প্রশাসন৷ এমটাই অভিযোগ 35জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গির ৷ তাই আরেকবার ফের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা ৷

কেএলও জঙ্গি
কেএলও জঙ্গি

মালদা, 18 সেপ্টেম্বর : গত মার্চে জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই সময় তিনি দেখা করেন মালদার প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিদের সঙ্গে৷ এই জঙ্গিরা সবাই মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছিলেন৷ সেই সময় আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের পুলিশ বিভাগে নিয়োগ করার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ শুধু আশ্বাস নয়, এবিষয়ে দ্রুত কাগজপত্র তৈরি করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে ৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মালদা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার আশ্বাসও যেন দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে ৷ নিজেদের চাকরির জন্য এই সময়ের মধ্যে একাধিক বার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দেখা করতে এসেছেন প্রাক্তন জঙ্গিরা ৷ কিন্তু এখনও তাদের চাকরি হয়নি ৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনও আশ্বাসও পাননি ৷ আজও তারা জেলার দুই প্রশাসনের প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে যান ৷ কয়েকদিনের মধ্যে আবার উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তারা জনিয়েছেন চাকরির ব্যাপারে আজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সদর্থক আশ্বাস না পেলে তারা ফের মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ হবেন ৷

পৃথক কামতাপুরি রাষ্ট্রের দাবিতে নব্বইয়ের দশকে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ৷ নিজেদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে 1995 সালের 28 ডিসেম্বর কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন জীবন সিংহ ও মিলটন বর্মণ৷ বিশেষত আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় এই সংগঠন বিস্তার লাভ করতে শুরু করে৷ ধীরে ধীরে এই সংগঠন জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে ৷ তখন থেকে 2010 সাল পর্যন্ত মালদার প্রচুর যুবক কেএলও সংগঠনে নাম লেখায়৷ হবিবপুর, বামনগোলা ও গাজোল ব্লকে কামতাপুরিদের বসবাস রয়েছে ৷ ফলে এই তিনটি ব্লকের উপরেই নজর পড়েছিল কেএলও শীর্ষ নেতৃত্বের৷ মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে এই এলাকার যুবকদের সংগঠনে টানা হত৷ শুধু ছেলেরাই নয়, বেশ কিছু মেয়েও সেই সময় এই সংগঠনে নাম লিখিয়েছিল৷ পরবর্তীতে কেএলও সংগঠনের প্রভাব কমতে শুরু করে৷ তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সব জঙ্গিদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানান৷ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মালদার 41 জন কেএলও জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে৷

মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন 35 জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি
আত্মসমর্পণের পর মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে৷ পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী তাদের স্পেশাল হোমগার্ড পদে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন ৷ সেইমতো তিনি প্রতিটি জেলার প্রশাসনকেও নির্দেশ দেন৷ তারপরই কিছুদিন আগে আলিপুরদুয়ারের 76 জন প্রাক্তন জঙ্গিকে হোমগার্ড পদে নিয়োগ করা হয়৷ এতেই আরও খানিকটা আশা বৃদ্ধি পায় মালদার আত্মসমর্পণকারী প্রাক্তন জঙ্গিদের ৷ কিন্তু মালদা প্রশাসনের মন্থরতায় তারা অধৈর্য হয়ে পড়েন ৷ তাই গত 4 মার্চ মালদায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তারা ৷ তাদের দ্রুত নিয়োগের জন্য মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নির্দেশও দেন৷ কিন্তু সেখানেই থমকে রয়েছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ৷

আজ জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন এমন প্রায় 35 প্রাক্তন জঙ্গি৷ তাদেরই একজন, গাজোলের মহম্মদ ইলিয়াস ৷ তিনি বলেন, "আমাদের যাতে স্পেশাল হোমগার্ড পদে দ্রুত নিয়োগ করা হয় তার জন্য আজ আমরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন জানাতে এসেছি ৷ গত 4 মার্চ আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম ৷ সেই সময় জেলা প্রশাসনকে আমাদের দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ প্রকাশ্য মঞ্চেও তিনি সে কথা জানিয়েছিলেন৷ তারপর থেকে আমরা মাঝেমধ্যেই জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে খবর নিয়ে আসছি ৷ প্রতিবারই আমাদের বলা হয়, তোমাদের সবকিছু হয়ে গিয়েছে ৷ দ্রুত নিয়োগ হয়ে যাবে৷ কিন্তু নিয়োগ এখনও হয়নি৷ আমাদের শুধু তারিখ দেওয়া হচ্ছে ৷ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের যেন দ্রুত নিয়োগ করা হয়, সেই দাবি নিয়ে আজও আমরা এখানে এসেছি ৷" লকডাউনের আগে আমরা হকারি কিংবা ছোটোখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতাম৷ কিন্তু লকডাউনে সবকিছুই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ এখন আমরা দারিদ্রতার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছি ৷ প্রয়োজনে আমরা আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details