মালদা, 16 সেপ্টেম্বর : জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আজ মৃত্যু হল আরও এক শিশুর । এনিয়ে গতকাল থেকে এখনও পর্যন্ত মেডিক্যালে তিনটি শিশুর মৃত্যু হল । আজও অনেক শিশু জ্বর-সহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাধীন শিশুর সংখ্যা না জানালেও মাতৃমা বিভাগ সূত্রে খবর, সেই সংখ্যা দুশো ছাড়িয়েছে । পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ । মালদা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ আজও দাবি করেছেন, এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয় । প্রতি বছরই ঋতু বদলের মরসুমে এমন ঘটনা ঘটে থাকে ।
গতকাল উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্তা সুশান্ত রায় জলপাইগুড়িতে জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গের আট জেলার মধ্যে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় শিশু ভর্তি রয়েছে । গতকাল সেই সংখ্যাটি ছিল 196 । তিনি আরও জানান, গতকাল মালদা মেডিক্যালে দুটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে । 15টি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক । তার মধ্যে আজ সকালে মেডিক্যালে মৃত্যু হয় পাঁচ মাসের একটি শিশুর । তার নাম মঙ্গল ডোম । মালদা শহরের দক্ষিণ বালুচর এলাকার বাসিন্দা মৃত শিশুর পরিবারের অভিযোগ, কার্যত চিকিৎসার অভাবেই মঙ্গলের মৃত্যু হয়েছে ।
আরও পড়ুন :Fever : উত্তরবঙ্গের অজানা জ্বরের রহস্য সমাধান, শিশুদের নমুনায় মিলল ডেঙ্গু-স্ক্রাব টাইফাস
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত 7 সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে মঙ্গলকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় । শনিবার তাকে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয় । বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর ফের সে অসুস্থ হয়ে পড়ে । এবার জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টও শুরু হওয়ায় গত বুধবার ফের তাকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় । আজ সকালে মারা যায় মঙ্গল । শিশুটির এক আত্মীয়া অর্চনা মল্লিক বলেন, "জ্বর নিয়েই প্রথমে বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করা হয় । কিন্তু এখানে ওর কোনও চিকিৎসাই হচ্ছিল না । ডাক্তারবাবুরাও বাচ্চাকে সময়মতো দেখতে আসেননি । ডাক্তারবাবুরা শুধু বলে যাচ্ছিলেন, বাচ্চার অবস্থা খুব খারাপ । তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হবে । সেকথা বলে একবার বাচ্চাকে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয় । বাড়ি ফিরে সে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে । এবার তার শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল । ফের ওকে এখানে ভর্তি করা হলে আজ সকাল ছ'টা নাগাদ মারা যায় । এই মুহূর্তে গোটা ওয়ার্ডে প্রচুর বাচ্চা ভর্তি আছে । একটা বেডও খালি নেই ।”
আজ মেডিক্যালের শিশু বিভাগ পরিদর্শন করে অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, "পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমি চিকিৎসকদের একটি বিশেষ দল বানিয়েছি । এই দলে শিশু রোগ-সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের রাখা হয়েছে । এই বিশেষ দলটি জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের মনিটরিং করবে । তবে এই মুহূর্তে মেডিক্যালে যেসব শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে তাতে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই । আমরা গোটা বিষয় নিয়ে সচেতন রয়েছি । জ্বরের সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে । সাধারণত প্রতিদিনই 50-60 জন শিশু এখানে ভর্তি হয় । এবারও সেই সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি । এনিয়ে অযথা আতঙ্কের কিছু নেই । মূলত ঋতু পরিবর্তনের জন্যই শিশুদের জ্বর, সর্দি-কাশি হচ্ছে । প্রতিবারই এই সময় এমনটা হয়ে থাকে । পরিস্থিতি নিয়ে আজ আমরা একটি বৈঠকে বসছি । আজ কোনও শিশুর মৃত্যুর রিপোর্ট এখনও আমরা পাইনি ।"
আরও পড়ুন :Jalpaiguri Children in Fever : করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ, জলপাইগুড়িতে জ্বরে অসুস্থ বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণে মনিটরিং দল গঠন