মালদা, 28 অগাস্ট : ডেঙ্গির আতঙ্কে কাঁপছে ইংরেজবাজার ব্লকের মিলকি গ্রাম পঞ্চায়েত । এই পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামে ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে ডেঙ্গির প্রকোপ । গ্রামগুলির বেশিরভাগ বাড়িতেই বাড়ছে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা । খোদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকও স্বীকার করেছেন, মাত্র তিন জন চিকিৎসক রয়েছেন ৷ তাঁরা প্রতিদিন কয়েকশো জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন । চলতি মরশুমে এখনও পর্যন্ত ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে 25 জন জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেছে বলে জানান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক । তবে, গ্রামবাসীদের দাবি, 25 জন নয় আরও বেশি সংখ্যক রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেছে ৷
মালদা শহর থেকে মিলকি গ্রাম পঞ্চায়েতের দূরত্ব মাত্র 16 কিলোমিটার । এই পঞ্চায়েতের সাতঘরিয়া ও আটগামা কলোনিতেই জ্বরের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি । সাতঘরিয়া গ্রামে গেলে এখন ধরা পড়ে অদ্ভুত দৃশ্য ৷ রাস্তাঘাট ফাঁকা ৷ প্রায় জনশূন্য বলা চলে ৷ কিন্তু এর কারণ কী ? গ্রামবাসীরা জানায়, প্রায় সবার বাড়িতেই জ্বরের থাবা । শরীরে ব্যথা আর বমি । ফলে সবাই ঘরেই থাকছে । অনেকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেও বেশিরভাগই মালদা শহরে জ্বরের চিকিৎসা করাচ্ছে ।
গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান শেখের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ঘরের ভিতরে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোচ্ছেন 26 বছরের ছেলে জাবেদ । শাহজাহান বলেন, "বাড়িতে সবাই জ্বরে আক্রান্ত । গত 16 দিন ধরে ছেলে ডেঙ্গিতে ভুগছে । তাঁকে মালদা মেডিকেল কলেজ ও ভরতি করেছিলাম । প্লেটলেট এক লাখের কম থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল থেকে ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে । আমি নিজেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলাম । এখন খানিকটা সুস্থ হলেও ভীষণ দুর্বল । গ্রামে প্রায় 400 বাড়ি । তার মধ্যে 250 বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে । গত একমাস ধরে এলাকায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে । গ্রামবাসীদের অনেকের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে । স্বাস্থ্যদপ্তর ও পঞ্চায়েত সব জানে । পঞ্চায়েতের তরফে একবার মশা মারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । তবে তা পর্যাপ্ত নয় । মিলকি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় উপচে । স্বাস্থ্যকর্মীরা নাজেহাল হয়ে পড়ছে ।"
মিরাজুল আনসারি নামে আর এক বাসিন্দা বলেন "প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় 800 রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন । মাঝেমধ্যে সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়ে যায় । এই রোগীদের প্রায় সবাই জ্বরে আক্রান্ত । ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে অনেকের রক্তে ।" স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরতি রয়েছে আটগামা কলোনির বাসিন্দা কিসমত মোমিন ৷ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এই কিশোর ৷ তার আব্বা আজাদ মোমিন বলেন, "শনিবার(24 অগাস্ট) থেকে ছেলের ভীষণ জ্বর । সঙ্গে মাথা আর পেট ব্যথা । মাঝেমধ্যে বমি করছে । রবিবার(25 অগাস্ট) বিকেলে ছেলেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরতি করেছি । রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেছে । আমাদের গ্রামে আরও অনেকের ডেঙ্গি হয়েছে । আমাদের পাড়াতেই তিন-চারজনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেছে । "
মিলকি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক তথা ইংরেজবাজার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শাহনাওয়াজ হোসেন ৷ তিনি বলেন, "আমাদের এখানে আউটডোরে প্রতিদিন 700 থেকে 750 জন রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন । তার মধ্যে প্রায় 400 রোগীই জ্বরে আক্রান্ত । জ্বরাক্রান্ত প্রতিটি রোগীর রক্ত আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করি । তবে, যাদের রক্ত পরীক্ষায় সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়ে তাদের রক্ত আমাদের এখানে PPP মডেলে যে ল্যাব রয়েছে সেখানে পরীক্ষা করাই । সেই ল্যাবে প্রতিদিনই একটি কিংবা দুটি ডেঙ্গি কেস ধরা পড়ে । ক্রিটিক্যাল কেস না হলে আমরা রোগীদের এখানেই সাতদিন ভরতি রেখে চিকিৎসা করি । তবে কারও রক্তের প্লেটলেট এক লাখের নীচে নেমে গেলে কিংবা শরীর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে আমরা সেই রোগীকে মালদা মেডিকেলে রেফার করে দিই । চলতি মরশুমে ইংরেজবাজার ব্লকে 25 জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেছে । তার মধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে গেছে । পরিকাঠামো পর্যাপ্ত না হলেও আমরা তিনজন চিকিৎসক সবাইকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি । অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও ডেঙ্গি প্রতিরোধে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন । ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা গত মার্চ থেকেই কাজে নেমে পড়েছি । তার ফলও মিলেছে । গত মরশুম থেকে এবার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কমেছে ।"