মালদা, 2 ডিসেম্বর: এসএসসির (SSC) কর্তৃপক্ষের তরফে প্রকাশিত 183 জন অযোগ্য শিক্ষকদের যে তালিকা, সেখানে নাম থাকা 24 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মালদা জেলার গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন স্কুলে ছড়িয়ে রয়েছেন ৷ যাদের ভবিষ্যৎ এখনও অন্ধকারে ৷ তাঁদের কাছে পড়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোচ্ছে, সেটাও কারও জানা নেই ৷ তালিকায় থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকা এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতেও রাজি নন ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা ৷ বিষয়টিকে নির্বাচনী ইস্যু তৈরি করার দিকেও এগোচ্ছে তারা ৷ যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিজেপির (BJP) দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "শুধু নিয়োগ নয়, যেভাবে একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার, এই রাজ্য সরকারের আমলে প্রতিটি স্তর দুর্নীতিতে ছেয়ে রয়েছে ৷ পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে রাজ্য সরকার, সবাই সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত ৷ এর সঙ্গে যে মন্ত্রীরাও জড়িত, সেটাও প্রকাশ্যে এসেছে ৷
আরও পড়ুন:নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে বেসরকারি ডিএলএড কলেজ কর্তৃপক্ষকে তলব ইডির
তিনি আরও বলেন, "মালদায় 24 জন অযোগ্য শিক্ষক কাজ করছেন ৷ কোন জেলায় কত অযোগ্য শিক্ষক রয়েছেন সেটা বড় কথা নয় ৷ বড় কথা হল, এই দুর্নীতিতে যেমন যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের ভবিষ্যতও আজ অন্ধকারে ৷ অনেকে হয়তো বাধ্য হয়েই অসৎ পথে চাকরি পেয়েছেন ৷ খোদ শিক্ষামন্ত্রী এই অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ৷ আদালতের নির্দেশে তিনি এখন জেলের ভিতরে ৷ কিন্তু এই সরকার তাঁদের চোর অপবাদ দিয়ে ভয়াবহ দিকে ঠেলে দিল ৷ আমাদের কাছে খবর রয়েছে, অনেক চাকরিপ্রার্থী জমি বিক্রি করে বা বন্দক রেখে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় চাকরি পেয়েছেন ৷ তাঁরা সেই ঋণ শোধ করতে পারছেন না ৷ তাঁদের মনে এখন আত্মহত্যার কথা উঁকি দিচ্ছে ৷ এসবের বিচার হওয়া প্রয়োজন ৷"
পাশপাশি তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, কোর্ট যা করার করবে, তাঁরা এদের যেন শাস্তি দেন ৷ এই সরকারের সামান্য নৈতিক দায়িত্ব থাকলে তারা গদি থেকে সরে যেত ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে এখন এটাই ইস্যু ৷ আমরা নয়, মানুষই এই ইস্যু তৈরি করে দিয়েছে ৷ এরা পুলিশ ও প্রশাসনকে দলদাস করে রেখেছে ৷ এতে মানুষ খানিকটা আতঙ্কিত ৷ কিন্তু আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে মানুষের যখন সাহস থাকবে, তখন পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ৷
প্রকাশিত সেই তালিকায় নাম রয়েছে মালদার 24 জন শিক্ষক-শিক্ষিকার আরও পড়ুন:শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি মীনাক্ষীর
এই দলের নেতা-নেত্রীদের ঘরের বাইরে বেরোনো বন্ধ হয়ে যাবে ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ নিজের ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের কথাও তিনি এদিন প্রকাশ করেছেন ৷ এখন থেকেই পুলিশ ও প্রশাসনের প্ল্যানিং দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ৷ বিজেপি শিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে 107 ধারায় মামলা দায়ের করতে শুরু করেছে ৷ কী হবে জানা নেই৷"
সিপিএমের (CPM) রাজ্য কমিটির সদস্য জামিল ফিরদৌস এপ্রসঙ্গে বলেন, "গোটা রাজ্যে যেভাবে দুর্নীতি শুরু হয়েছে, আদালতের হস্তক্ষেপ না থাকলে তার কিছুই জানা যেত না ৷ আদালতের জন্যই জানতে পারছি, অযোগ্য হলেও টাকার বিনিময়ে অনেকে শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন ৷ চোরের এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি ৷ আপাতত মালদা জেলার 24 জন অযোগ্য শিক্ষকের নাম প্রকাশিত হয়েছে ৷ আমার মনে হয়, ঠিকমতো তদন্ত হলে আরও অনেক এমন নাম বেরিয়ে আসবে ৷ শুধু মালদা নয়, পুরো রাজ্যেই অনেক অযোগ্য শিক্ষক বেরিয়ে আসবে ৷"
আরও পড়ুন:প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের জামিনের আবেদন মানিকের
তিনি আরও বলেন, "এসবের জন্য 2011 সালের পর থেকে 2022 সাল পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলিতে সাত লক্ষ পড়ুয়া কমে গিয়েছে ৷ ক্লাস এইট পাশ করেও এখন অনেকে শিক্ষকের চাকরি করছে ৷ টাকার বিনিময়ে তৃণমূল রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে কলুষিত করে দিয়েছে ৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে আমাদের জোরদার আন্দোলনে নামতে হবে ৷ আর পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে তো কোনও কথাই হবে না ৷ নবান্নের 14তলা থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত দুর্নীতির পাহাড় ৷ দুর্নীতির জন্য মালদার জেলাশাসককে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্র টাকা দিয়েছে ৷ প্রশাসনের উপর থেকে নীচ পর্যন্তও দুর্নীতিতে জড়িত ৷ তাই আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপিকে সরাতে আমরা সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে লড়াই করব ৷ পঞ্চায়েতকে আমাদের দখলে নিয়ে আসতেই হবে ৷"
বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি ছড়াচ্ছে শাসকদলের (TMC) অন্দরেও ৷ তা দেখা গিয়েছে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র শুভময় বসুর মধ্যেও ৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বিচারাধীন বিষয় নিয়ে দলের কোনও বক্তব্য নেই ৷ তবে আইন যা বলবে, সেটাই দল মেনে চলবে ৷ এই রাজ্যে অন্য কারণে এখন বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এক হয়ে গিয়েছে ৷ এরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন ও পাশে থাকার বার্তা পছন্দ করছে না ৷ যেন-তেন প্রকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিব্রত করাই এদের উদ্দেশ্য ৷ এরা কোর্টে গিয়ে বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিচ্ছে ৷ মানুষ সব দেখছে, বুঝছেও ৷ একটা কথাই বলতে পারি, কোর্ট যে নির্দেশ দেবে, আমাদের দল ও সরকার সেই নির্দেশ মেনে চলবে ৷"
আরও পড়ুন:মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলকে ফের তলব ইডির