কলকাতা, 7 নভেম্বর : প্রয়াত সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন ৷ বয়স হয়েছিল 81 বছর ৷ তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সাহিত্য জগৎ ।
বেশ কিছু দিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন নবনীতা দেব সেন । একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ আজ বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর । আগামীকাল শেষকৃত্যসম্পন্ন হবে প্রখ্যাত সাহিত্যিকের ।
1938 সালের 13 জানুয়ারি তাঁর জন্ম ৷ অমর্ত্য সেনের প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেব সেন সাহিত্য কীর্তিতে নিজ গুণে উজ্জ্বল ছিলেন আজীবন ৷ 1959 সালে 'প্রথম প্রত্যয়' দিয়ে সাহিত্য জগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ৷ 1999-তে পেয়েছিলেন সাহিত্য আকাদেমি সম্মান । 2000 সালে পদ্মশ্রী সম্মান পান তিনি ৷
শুধু গুরুগম্ভীর সাহিত্য নয়, শিশু-কিশোর সাহিত্যেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য । ছোটোদের লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার ৷ শিশু-সাহিত্যে অবদানের জন্য চলতি বছরে 'বাল সাহিত্য' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি । 'জগমোহনবাবুর জগৎ','খগেনবাবুর পৃথিবী','পলাশপুরের পিকনিকের' মতো শিশু সাহিত্যগুলি তাঁরই কৃতিত্বের প্রমাণ ।
নবনীতা দেব সেনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্প জগৎ৷ শোক প্রকাশ করেছেন বহু বিশিষ্টজন ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে শোক জানান ৷ তিনি লেখেন, 'প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ নবনীতা দেব সেনের প্রয়াণে আমি গভীর শোকাহত । তাঁর অনুপস্থিতি অগণিত ছাত্রছাত্রী ও শুভাকাঙ্খী অনুভব করবেন । তাঁর পরিবারের প্রতি জানাই গভীর জানাই সমবেদনা ।'
সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেনের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ৷ সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হল বলে জানান তিনি ৷ প্রায় 60 বছর ধরে নবনীতা দেব সেনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শীর্ষেন্দুবাবুর ৷ প্রিয় বন্ধু নবনীতার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তিনি ৷ শীর্ষেন্দু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, "অসামান্য রসবোধ, অসামান্য লেখা তাঁর ৷ নানা স্বাদের লেখা লিখতেন তিনি ৷ প্রবন্ধ, কবিতা, ভ্রমণ, সাহিত্য, নিবন্ধ সবই লিখতে পারতেন অনায়াসে ৷ তাঁর অমলিন হাসি আমার মনে থাকবে ৷ ওর প্রাণশক্তি আমায় স্পর্শ করেছে ৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার ও বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল ৷"
বুদ্ধদেব গুহর পুরাতনী টপ্পা গানের গুণমুগ্ধ শ্রোতা ছিলেন নবনীতা দেব সেন । প্রতিবছর জন্মদিনে বুদ্ধদেব গুহকে নিজের বাড়ি 'ভালোবাসা'-তে আমন্ত্রণ জানাতেন নবনীতা । জন্মদিনে বুদ্ধদেবের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা টপ্পা গান শুনতে চাইতেন নবনীতা । প্রিয় বান্ধবীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে চোখের জল বাঁধ মানল না বুদ্ধদেবের ।
বুদ্ধদেব বলেন, "অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিচ্ছেদ মানতে পারেননি নবনীতা । সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে দীর্ঘদিন কষ্ট পেয়েছেন । প্রাণবন্ত প্রতিবাদী একটি মেয়ের মৃত্যু হল আজ ৷" নবনীতার থেকে প্রায় তিন বছরের বড় বুদ্ধদেব । বয়সে বড় হয়ে নবনীতার স্মৃতিচারণা করতে মোটেই ভাল লাগছিল না তাঁর । বললেন, "মনের অবস্থা ভালো নেই ।"
নবনীতা দেব সেনের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করলেন লেখক আবুল বাশারও ৷ তিনি বলেন, "সন্দেহ নেই বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হয়ে গেল ৷ আমার সঙ্গে ওনার তেমন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না ৷ চিনতাম ৷ উনিও আমায় চিনতেন ৷ দেখাও হতো ৷ আমার বইয়ের সমালোচনাও উনি করেছিলেন ৷ সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেনের একটি বিষয় আমায় খুব অবাক করত তা হল ওনার দ্বৈতসত্তা ৷ যখন গুরুগম্ভীর উপন্যাস লিখেছেন তখন একরকম আবার ওনার হাত থেকেই হালকা চালের লেখা বেরিয়েছে ৷ একজন অধ্যাপিকা কীভাবে এত সুন্দরভাবে দু'টো দিক বজায় রাখতে পারেন তা আমাকে বারবার ভাবিয়েছে ৷"
সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেনের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু । তিনি বলেন, "সাহিত্যে মগ্ন একজন মুক্তমনা মহিলা ছিলেন তিনি । বাংলা সাহিত্যের একজন অগ্রণী কবির মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করছি । বাংলা ও বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হল । সর্বোপরি দেব পরিবারের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করছি । তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ।"
প্রয়াত নবনীত দেব সেনের স্মৃতিচারণায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "'রোববার' পরিবারের এক সদস্যকে হারালাম ৷ প্রথম দিন থেকে 'ভালোবাসার বারান্দা' কলমটা উনি লিখতেন ৷ আজ খবর শোনার পরই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে ৷"