পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

"মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট", হিরো হওয়ার বার্তা দিচ্ছে বিশ্ব হৃদয় দিবস - কলকাতা

ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'তে এবারের থিম "মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট" ৷

ছবিটি প্রতীকী

By

Published : Sep 29, 2019, 7:00 AM IST

Updated : Oct 1, 2019, 6:06 AM IST

কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : হার্টের অসুখ যখন থাবা বসায়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোটা ধরা যায় না । তাই ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও বাঁচানো যায় না রোগীকে । ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র আগে এই কথা বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায় । চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে'র থিম হল - "মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট"। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বন্ধু, পরিবারের সদস্য সহ যে কোনও মানুষের কাছে হার্টের হিরো হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে এই থিম ৷

গোটা পৃথিবীতে যদি অসুখের জেরে মৃত্যুর হার দেখা হয়, তাহলে প্রথম দিকেই থাকবে হার্টের অসুখ ৷ শুভাননবাবু বলেন, "মুশকিল হল, এই অসুখ একবার যখন থাবা বসাবে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পুরোটা ধরতে পারে না । ঠিক সময়ে চিকিৎসা করেও আমরা মানুষকে বাঁচাতে পারি না । সেজন্য সচেতনভাবে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । যেমন প্রতিরোধ । এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি । কারণ, প্রিভেনশন ইজ় বেটার দ্যান কিয়োর । যাঁরা হার্টের অসুখের চিকিৎসা করেন, তাঁদের সকলের এটা মনে রাখা উচিত, হার্টের অসুখকে প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে । মানুষকে বোঝাতে হবে । সচেতনতা আনতে হবে‌ । এখনও দেখি হার্টের অসুখ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের সচেতনতা নেই।"

এখন পরিস্থিতি কেমন ? শুভাননবাবু বলেন, "একটা দেশ যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যায়, তখন হার্টের অসুখ বাড়ে । আমরা দেখেছি 1960 সালে অ্যামেরিকার যখন আর্থিক জোয়ার এসেছিল, তখন হার্টের অসুখ সবথেকে বেশি হয়েছিল ৷ যখন কোনও দেশ উন্নত হয়ে যায়, তখন হার্টের অসুখ কমে । তারা বুঝতে পারে, কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত । জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয় ৷ নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, ওজন কম রাখা উচিত । সচেতনভাবে এগুলি করলে হার্টের অসুখ কমে যায় ।" অ্যামেরিকায় কেন এমন হয়েছিল? শুভাননবাবু বলেন, "বৃদ্ধারা দেখতেন, তাঁদের নাতি-নাতনিরা রুটির সঙ্গে মাখন খেতে পারছে না, দেখা গেল আর্থিক জোয়ার আসার পর মাখন সহজলভ্য হয়ে উঠল । যতটা দেওয়া উচিত, তার থেকে বেশি খাওয়া শুরু হল । জাঙ্ক ফুডের প্রচলন তখন থেকেই শুরু হল । মানুষের হাতে হঠাৎ টাকা এসে গেলে, সেটা খাওয়া-দাওয়ায় বেশি খরচ হয় ৷ কম হাঁটা-চলা হয়, কায়িক শ্রম কমে যায় ৷"

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভানন রায়

শুভাননবাবু বলেন, "হার্টের অসুখ হওয়ার দুটো কারণ আছে । একটা হচ্ছে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া । দ্বিতীয়ত, জাঙ্ক ফুড খাওয়া । অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সঙ্গে এরকম পরিস্থিতি আসে। আমাদের দেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতের দিকে যাচ্ছে । এই কারণে আমাদের দেশে হার্টের অসুখ বেড়েছে । ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে । আমরা দেখেছি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষেরও হার্টের অসুখ অনেক বেশি ৷ অনেক কম বয়সেই হয় । 30 বছর বয়সিরাও এখন হার্টের অসুখ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন । আমাদের দেশে প্রতিরোধের বিষয়টি আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে ভাবতে হবে ৷ মানুষকে বোঝাতে হবে । প্রতিরোধের উপায় তো ছোটোবেলা থেকেই শুরু করতে হয় । ছোটোরাও আজকাল ওভারওয়েট । তাদের খেলার সময় নেই । খেলার মাঠ নেই, সুযোগ নেই । ব্যায়াম করে না ৷ দিনরাত প্রতিযোগিতার মধ্যে দৌড়াচ্ছে । সেজন্য হার্টের অসুখ অনেক তাড়াতাড়ি হচ্ছে । ডায়াবেটিস হচ্ছে ৷ রক্ত চাপ বেড়ে যাচ্ছে । এগুলি ছোটোবেলা থেকেই সচেতনভাবে প্রতিরোধ করা উচিত।" কোন বয়সিদের মধ্যে হার্টের অসুখ বেশি দেখা যাচ্ছে ? শুভাননবাবু বলেন, "আগে 50-60 বছরের আগে হার্টের অসুখ খুব কম হত । এখন 30 বছরেও হচ্ছে । কলকাতার অবস্থা কেমন? শুভাননবাবু বলেন, "কলকাতার অবস্থা ভালো নয় । কারণ, কলকাতা সহ ভারতের শহরগুলিতে জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি ।"

প্রতিরোধে কী উপায় ? শুভাননবাবু বলেন, "একেবারে কম বয়স থেকেই শিশুদের খেলার জায়গা দিতে হবে ৷ বইয়ের ভার কমাতে হবে ৷ আনহেলথি কম্পিটিশন থেকে বাইরে আনতে হবে ৷ শিশুদের শেখানো হোক, সব পেশার মানুষের জন্যই সমাজে স্থান রয়েছে ৷ সবসময় যে চিকিৎসক হতে হবে, তার মানে নেই । একজন ফ্যাশন ডিজ়াইনার হলেও সমান রোজগার করতে পারবে । অভিনেতা হলে তার থেকেও বেশি রোজগার করতে পারবে । যার যেদিকে ইচ্ছা আছে, সেদিকে উৎসাহ দিতে হবে । ছোটোবেলা থেকেই এটা শুরু করলে বড় হয়ে ওভারওয়েট হবে না। ডায়াবেটিক হয়ে পড়বে না । নিয়মিত ব্যায়াম করলে ও সুষম খাবার খেলে হার্টের অসুখ কমে যাবে । যে কোনও বয়সেই এটা শুরু করা যায় । কিন্তু, ছোটো থেকেই শুরু করলে ভালো । সেজন্যই বলেছে হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা চাই । মাই হার্ট, ইয়োর হার্ট । আমি যদি অন্যের দুঃখকে বুঝতে না পারি, তা হলে চলবে না ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

থিমটি কতটা উপকারি হতে পারে ?শুভাননবাবু বলেন, "শঙ্খ ঘোষ একটি কবিতায় বলেছিলেন, কথা শুধু থেকে যায় কথার মনে । কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই । স্লোগানগুলিকে যদি আমরা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে তা উপকারি হবে । তাই স্লোগনটা বাস্তবে আনতে হবে ।"

Last Updated : Oct 1, 2019, 6:06 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details