কলকাতা, 5 জানুয়ারি: থ্রি ইডিয়টসের চিত্রনাট্য এ বার একেবারে বাস্তবের মাটিতে ৷ আমির খানের সেই ছবিতে আনকোড়া হাতে সন্তান প্রসবের রোমাঞ্চকর দৃশ্য শিহরণ জাগিয়েছিল দর্শকদের মনে ৷ এ বার সেই একই ঘটনার বাস্তব রূপ দেখা গেল শহর কলকাতায় ৷ প্রসববেদনায় কাতর এক গর্ভবতীকে রাস্তার উপরে রিকশায় প্রসব করালেন এক মহিলা (Woman delivers child)৷ নিজের মা হওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আর এক মায়ের পাশে দাঁড়ালেন তিনি ৷ গড়ে তুললেন অনন্য এক সম্প্রীতির নজির ৷
শীতের সকালে রাস্তাতেই (Baby Delivered on Road) পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন আলেয়া বিবি । নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে সন্তান প্রসবে সাহায্য করলেন টালিগঞ্জের অনিতা বর্ধন । এই সদ্যোজাতের জন্ম দিয়েই যেন তাঁর হাতেখড়ি হল চিকিৎসা বিজ্ঞানে । তবে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে ওই গর্ভবতী সাহায্য পেয়েছেন পুরো পাড়ার ।
বুধবার সকাল ৷ তখন ঘন কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন তিলোত্তমা । আচকাই দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স বক্তিয়ার শাহ সরণিতে শোনা গেল এক গর্ভবতীর আর্তনাদ । তীব্র পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন আলেয়া বিবি । রিকশা ডেকে তিনি স্বামীর সঙ্গে রওনা দেন এমআর বাঙুর হাসপাতালের উদ্দেশে । তবে সেই যাত্রা আর সম্পূর্ণ হয়নি । মাঝপথেই পেটের যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর হয় । তখনও হাসপাতাল পৌঁছতে লাগবে প্রায় 20 মিনিট।
এঁদের প্রচেষ্টায় রাস্তাতেই সন্তান প্রসব গর্ভবতীর আলেয়া যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন, “কেউ একটু সাহায্য করবেন !” কাকভোরে তাঁকে এই অবস্থায় দেখে পাড়ার সবাই হতবাক । ভয়ে এগিয়েও আসছেন না কেউ । তবে এক মুহূর্তও নষ্ট না করে আলেয়ার কাছে ছুটে গেলেন ওই পাড়ারই অনিতা বর্ধন । গর্ভবতী ওই তরুণীর কাছে তখন তিনিই ত্রাতা ৷ আলেয়াকে শুইয়ে অনিতা দেখলেন, বাচ্চার মাথাটা বাইরে বেরিয়ে আসছে । ফলে আর এক মূহূর্তও দেরি করা যাবে না ৷ সময়ের সামান্য এ দিক-ও দিক হলে হয়ে যেতে পারে সমূহ বিপদ ৷ সেখানে সেই অবস্থাতেই আলেয়ার সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নেন অনিতা ।
আরও পড়ুন:চলন্ত ট্রেনে সন্তান প্রসব মহিলার, 'মানবিক' রেল পুলিশের সহায়তায় ঘরে ফিরল সুস্থ মা-শিশু
তিনি পরে জানিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুই তাঁর জানা ছিল না । তিনি এক সাধারণ পরিবারের বধূ । বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহ করার ব্যবসা করেন । কিন্তু ঝড়-জল-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সবসময়ই তিনি এগিয়ে যান সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় । এ বারেও তার অন্যথা হল না । চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ হেন কাজ তাঁর সম্পূর্ণ অজানা । গর্ভবতীর যন্ত্রণা তাঁকে পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল ৷ তিনিও একজন মা ৷ তবে শুধু অনিতাই নন ৷ আলেয়ার এই সংকটের মুহূর্তে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান ওই পাড়ারই আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দা । এরপর অনিতা বর্ধনের নেতৃত্বে মলি ভট্টাচার্য, প্রিয়াঙ্কা দাস ও শান্তা চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে রাস্তাতেই বুধবার সকাল 9টা বেজে 27 মিনিটে একরত্তি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন আলেয়া বিবি ৷
অনিতা বর্ধন জানান, "অল্প চেষ্টাতে বাচ্চাটি বেরিয়ে এলেও, প্রথমে সে কাঁদছিল না । তখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ৷ কারণ আমিও একজন মা । এই সময় ঠিক কী হয় আমি তা জানি । তবে আমার তখন মনে পড়ে আমার সন্তান হওয়ার সময়েও প্রথমে বাচ্চা কাঁদেনি । চিকিৎসকরা সোজা করে ধরে পিঠ চাপড়ানোর পর কেঁদে উঠেছিল আমার মেয়ে । আমি সেই পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাই এবং তাতে সফল হই । তারপর একটা ব্লেড জোগার করে গরম জলে সেটাকে ধুয়ে সন্তান প্রসবের পর বাকি যে কাজগুলি সেগুলো করি । কারণ এই সময়ের মাঝে আমরা দেখছিলাম ক্রমে মা ঝিমিয়ে পড়ছিলেন । তবে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি । তখন আমি আমার জামাকাপড় ওকে দি এবং ওকে হাসপাতালে পাঠাই ।"
তবে সেখানেও বিপত্তি দেখা দেয় । পরিবার সূত্রে খবর, বাইরে যেহেতু ওই সন্তানের জন্ম হয়েছে সেই কারণে এমআর বাঙুর হাসপাতালে মাকে ভর্তি নেওয়া হলেও সন্তানকে প্রথমে ভর্তি নেওয়া হয়নি । তারপর কলকাতা পুলিশ ও গল্ফগ্রিন থানার সহযোগিতায় ওই দুজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয় । বর্তমানে ওই মা এবং সদ্যোজাত দুজনেই সম্পূ্র্ণ সুস্থ । আল ইজ ওয়েল...!!