কলকাতা, 21 মে : এবার কি তবে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ? বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির আনাচে কানাচে ৷ অন্তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, নেত্রী কোনওদিন ঋণ ফেলে রাখেন না ৷
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ লোকে বলে মমতার দলে ফার্স্ট বয় তিনি ৷ তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক ৷ মমতা যখন যোগমায়া কলেজে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তখন থেকে তিনি মমতাকে দেখছেন ৷ একসঙ্গে কাজ করা বলতে গেলে, মমতা যখন জেলা যুব কংগ্রেসের সম্পাদক হলেন, তখন থেকেই ৷ মমতারও বরাবর অগাধ ভরসা শোভনদেবের উপর ৷ মমতার কালীঘাটের বাড়ির একেবারে অন্দরমহলে যে হাতে গোনা কয়েকজনের অবাধ প্রবেশ, তাঁদের মধ্যে একজন শোভনদেব ৷ সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ, নেত্রীকে তুই বলে সম্বোধন করারও অধিকার ছিল তাঁর ৷
2 মে ফলঘোষণা হয়েছিল ৷ আজ 21 মে ৷ সর্বসাকুল্যে তিন সপ্তাহও পার করতে পারেনি ৷ তার মধ্যেই বিধায়ক পদে ইস্তফা ৷ ভবানীপুর কেন্দ্র মমতার জন্য ছেড়ে দিলেন শোভনদেব ৷ এত লড়াই করে জেতা কেন্দ্র ছেড়ে দেওয়ার পরেও নির্বিকার ৷ এটাই হয়ত শোভনদেব ৷
চুলে পাক ধরা সাদামাটা গোছের এই লোকটার কাছে দলটাই যেন সব ৷ আর তা হবে নাই বা কেন ৷ স্পোর্টসম্যান স্পিরিট তো এটাই ৷ অনেকেই হয়ত জানেন না, শোভনদেব খুব ভাল মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন এককালে ৷ বক্সিং রিং কাঁপিয়ে বেড়াতেন ৷ জাতীয় যুব বক্সিং দলের অধিনায়কত্ব করেছেন ৷ আন্তর্জাতিক স্তরের খেতাবও রয়েছে ৷ এখন বয়স হয়েছে ৷ রিং ছেড়েছেন ৷ কিন্তু স্পোর্টসম্যান স্পিরিট রয়েই গিয়েছে ৷
রাজনীতির মাঝেও সময় বের করে নেন নিজের ভাললাগার কাজগুলির জন্য ৷ ব্রাক্ষ্মণ ঘরের ছেলে ৷ সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মী পুজো এসব লেগেই থাকত ৷ এখনও পুজো করেন নিয়ম করে ৷ তৃণমূল ভবনের সরস্বতী পুজোর দায়িত্বও তাঁর উপরেই ৷ অত্যন্ত ছিমছাম, মিশুকে, ধর্মপ্রাণ গোছের মানুষ ৷ এ হেন মানুষের কখনও যে কোনও শত্রু থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক ৷
আগাগোড়াই সোজা-সাপটা কথা বলতে পছন্দ করেন শোভনদেব ৷ স্পষ্টবাদী ৷ শোনা যায়, মমতারও যে কাজটা পছন্দ হত না, সেটাও মুখের উপর বলে দিতে দু'বার ভাবেন না ৷ ঠিককে ঠিক, ভুলকে ভুল বলতে কুণ্ঠা করেননি কোনওদিন ৷ তবে মমতার প্রতি আনুগত্য কোনওদিন কমেনি ৷
রাজনীতিতে পা রাখার অনুপ্রেরণা বলতে গেলে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি ৷ তাঁকে দেখেই রাজনীতিতে আসা ৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ থেকে ৷ তবে ছাপোষা শোভনদেবের রাজনৈতিক ব্যাপ্তি জেলা বা মফঃস্বলগুলিতে সেভাবে একেবারেই ছিল না ৷ বরং খুব বেশি করে কলকাতা কেন্দ্রিক ৷ আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রিক ৷ ভবানীপুর, আশুতোষ কলেজ, হাজরা মোড় এই এলাকাগুলিই মূলত শোভনদেবের বিচরণক্ষেত্র ৷