দার্জিলিং, 31 মার্চ: ফের কি শিবির বদল বিমল গুরুংয়ের (Bimal Gurung news)? শান্তির পাহাড়ে ফের গোর্খাল্যান্ড (Gorkhaland movement) নিয়ে অশান্তির মেঘ ? গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের (Darjeeling politics) কথায় সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট ৷
আবার পাহাড়ে আশঙ্কার কালো মেঘ ! আপাতত চিন্তা একটাই, শান্তির পাহাড়ে আবার কি মাথা চাড়া দেবে গোর্খাল্যান্ডের জুজু ? একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বিমল গুরুং আবার কি নিজের অবস্থান বদলাবেন ? শিবির বদল করে তিনি কি এ বার আবার বিজেপির বন্ধু হবেন ! এমনই হাজার প্রশ্ন এই মুহূর্তে ঘোরাফেরা করছে দার্জিলিং পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ।
গত কয়েকদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দার্জিলিংয়ে । পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি জিটিএ এবং দীর্ঘদিন না হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচন দ্রুত করতে চান । এই অবস্থায় উল্টো সুর তৃণমূল কংগ্রেসের বন্ধু রাজনৈতিক দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার গলায় । জিজেএম সুপ্রিমো স্পষ্ট বলছেন, এখনই পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন চান না তিনি । বরং তিনি চান, পাহাড় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ।
এই পর্যন্ত দেখে মনে হতেই পারে এতে আশঙ্কার কি আছে ? কিন্তু তথ্য বলছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার রাজনৈতিক সমাধান চাওয়ার পেছনেই রয়েছে নতুন সমীকরণ । একইসঙ্গে রয়েছে আশঙ্কার মেঘও । এ কারণেই আগামী 2 এপ্রিল একটি কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন বিমল গুরুং । তথ্য বলছে, সেখানে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাকে । অথচ সেখানে ডাকা হয়নি রাজ্যের শাসকদলের কোনও প্রতিনিধিকে ।
আরও পড়ুন:Darjeeling politics: বেসুরো গুরুং, স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের দাবিতে আমরণ অনশনের হুমকি
এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাজনৈতিক মহল । কারণ রাজু বিস্তা আগেই জানিয়েছেন, পাহাড় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহী বিজেপি । প্রয়োজনে আলাদা রাজ্য নিয়েও ভাবনা চিন্তা করতে তাদের আপত্তি নেই । এই অবস্থায় বিমল গুরুং এবং রাজু বিস্তার এক আসনে আসার সম্ভাবনায় পাহাড়ে উত্তাপ ছড়াতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা ।
রাজনৈতিক মহলের মতে, নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে রাখতে এমনটা করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না বিমল গুরুংয়ের । একুশের বিধানসভা নির্বাচন এবং সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে অনেকটা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা । বিগত সময়ে মোর্চাকে সরিয়ে পাহাড়ে অনেকটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বিজেপি এবং নবগঠিত রাজনৈতিক দল হামরো পার্টি । আর এই অবস্থায় নতুন করে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে কৌশল বদলাচ্ছে বিমল গুরুংয়ের দল ।
এ দিন এই নিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তা ছাত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ভাগের রাজনীতিকে সমর্থন করে না তৃণমূল । তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনওভাবেই বাংলা ভাগকে সমর্থন করবে না । তবে তৃণমূল কংগ্রেস সব সময় উন্নয়নের পক্ষে, শান্তির পক্ষে । মুখ্যমন্ত্রী নিজে বারবার শান্তি এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা বলেছেন । এই অবস্থায় কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনা বা অবস্থানকে পাহাড়ের মানুষও সমর্থন করবে না ।’’
আরও পড়ুন:Mamata Cooking Momo : প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে মোমো বানালেন মমতা, গলা মেলালেন গানে
অন্যদিকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা রোশন গিরি বলেন, "আমরা এই মুহূর্তে জিটিএ ইলেকশন চাইছি না । চাইছি পাহাড় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান । সে জন্যই দু‘তারিখের কনভেনশন ডাকা হয়েছে । আর এই কনভেনশন থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"
অতএব আগামী দিনে পাহাড়ের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনেকটাই নির্ভর করছে দু‘ তারিখের দিকে । তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে বিমল গুরুংকে রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার করে ভোটে নেমেছিল তৃণমূল, সেই গুরুং কিন্তু ক্রমেই গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকছে, অন্তত কনভেনশনে বিজেপি সাংসদকে ডাকা তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।