কলকাতা, 5 অগস্ট: বেহালা চৌরাস্তায় বেপোরোয়া লরির ধাক্কায় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় জনরোষের শিকার কলকাতা পুলিশ ৷ কেন ক্ষিপ্ত জনতাকে সামলাতে ব্যর্থ হল পুলিশ-প্রশাসন ? কেন সময় মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল না ? কেন আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি ? এমন একাধিক প্রশ্ন তুললেন কলকাতা পুলিশের আইপিএস মহলের একাংশ ৷ সেই নিয়েই একটি প্রাথমিক রিপোর্ট লালবাজারে জমা পড়েছে বলে সূত্রের খবর ৷ সেখানে গোলমালের সময় পর্যাপ্ত বাহিনীর অভাবকেই দুষেছেন তদন্তকারীরা ৷
বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সৌরনীল সরকার ৷ বাবার সঙ্গে সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার সময় পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সে ৷ সেই ঘটনায় জনতার রোষ গিয়ে পড়েছে পুলিশ প্রশাসনের উপর ৷ উন্মত্ত জনতার ছোড়া ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হন লালবাজারের পদস্থ কর্তারা ৷ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলকেও মাঠে নামতে হয় ৷ সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন তিনি ৷
পরবর্তী পর্যায়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন লালবাজারের কর্তারা ৷ সেখানে প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে এই জনরোষ ছড়িয়ে পড়ল ? কেন উন্মত্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না পুলিশ ? এই বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্টে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় ছিল সকাল ছ’টা ৷ প্রত্যেকটি থানা এবং অন্য ডিভিশনে ডিউটি পরিবর্তন হয় তখন ৷ নাইট ডিউটিতে থাকা পুলিশ কর্মীরা দায়িত্ব ছাড়েন ৷ আর সকালের ডিউটিতে থাকা পুলিশ কর্মীরা কাজে যোগ দেন ৷
আরও পড়ুন:বেহালাকাণ্ডে 2 টি ট্রাফিক গার্ডে হামলা, পুড়ল ভ্যান, নথি নিয়ে পালানোর অভিযোগ
এই ডিউটি বদলের সময়ের মধ্যেই বেহালা চৌরাস্তায় এই পথ দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ বেহালা, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুর, পর্ণশ্রী-সহ কলকাতা পুলিশের সাউথ-ওয়েস্ট ডিভিশনের প্রত্যেকটি থানায় সেই সময় পর্যাপ্ত বাহিনী ছিল না ৷ আর তাই কালীঘাট, চেতলা, নিউ আলিপুর থানা থেকে বাহিনী আনতে হয় ৷ তাছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে মহিলা পুলিশ না-থাকায় প্রথমদিকে জনরোষ থামাতে একাধিক বাধারও সম্মুখীন হন পুলিশকর্মীরা ৷
বেহালা মহিলা থানা, লালবাজার এবং অন্য ডিভিশন থেকে বেহালা চৌরাস্তায় অতিরিক্ত মহিলা পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে আসতে হয় ৷ এই পুরো বিষয়টি শেষ করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায় ৷ তার মধ্যেই ক্ষিপ্ত জনতা কলকাতা পুলিশের দু’টি ট্রাফিক গার্ডে ঢুকে অবাধে ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন:ঘরে ফিরল দেহ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সৌরনীলের বাড়িতে মন্ত্রী অরূপ
বাহিনী এসে পৌঁছানোর আগেই পরপর চারটি বাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর হয় ৷ তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটাতে বাধ্য হয় বলে তদন্তকারীরা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, বেহালার দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা দরকার ৷ কিন্তু, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার যে চরম পরিণতি গতকাল বেহালাবাসী দেখেছে, তার জন্য পুলিশের একাংশ দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না ৷ প্রথম পর্বের কাজ করতে পুলিশ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে ৷ তার ফলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায় ৷