কলকাতা, 16 অক্টোবর: সাপের ছোবলের পাশাপাশি অন্য বিভিন্ন কারণে বিষক্রিয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হবে, তার জন্য আর.জি. কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বছর দুয়েক আগে তৈরি হয় পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টার । 2020 সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা বইতে থাকছে পয়জ়ন ইনফরমেশন ৷
এই সেন্টারের ইনচার্জ, চিকিৎসক সোমনাথ দাস বলেন, "শুধুমাত্র আমাদের দেশে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই সাপের ছোবলে মৃত্যুর হার এবং সাপের ছোবলের ঘটনা অত্যন্ত বেশি । ভারত বা পশ্চিমবঙ্গে সাপের ছোবলে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় সব সময় আমরা চেষ্টা করি, কীভাবে এই ঘটনাকে কমানো যায় ৷ এই সেন্টারের অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে সতর্ক করা হয়, যাতে তারা বুঝতে পারে, কাউকে সাপ ছোবলে কী করা যেতে পারে। এবং, সাপে যাতে না ছোবল মারে, তার জন্য কোন ধরনের প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে ।"
এই ইনফরমেশন সেন্টারের ওয়েবসাইট রয়েছে । অ্যাপ-ও তৈরি হয়েছে । সেই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সোমনাথ দাস বলেন, " আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি তৃণমূল স্তরে কীভাবে এই সচেতনতা আরও বাড়ানো যায় । সাপ ছোবলে কেউ আক্রান্ত হলে কিভাবে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে তা এবার পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা বইতে থাকবে ৷ আমাদের এই পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টারের নাম এবং অ্যাপের বিষয়টিও এই বইতে উল্লেখ করা হয়েছে । "
তিনি আরও বলেন, "পড়ুয়ারা যাতে ছোটবেলা থেকে সাপের সম্পর্কে জানতে পারে । সাপে ছোবলে কেউ আক্রান্ত হলে কী করনীয় ? সাপ ছোবল মারতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কী করা যেতে পারে ? কী ভাবে সাপ চিনবে ? এই সব প্রশ্নের উত্তর এই বইতে পেয়ে যাবে পড়ুয়ারা৷ সাধারণভাবে আমাদের দেশে যে কোনও ধরনের তথ্য প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ৷ কিন্তু ছোটদের মধ্যে এই বিষয়টি যদি জানানোর সুযোগ থাকে , তাহলে সাপের ছোবলের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে যায় । এমন ভাবনা-চিন্তা থেকেই শিক্ষা দপ্তর আমাদের পয়জন ইনফরমেশন সেন্টারের ফোন নম্বর এবং এর বিভিন্ন তথ্য বইতে রেখেছে ৷ "
কীভাবে সাপ চেনা যাবে, কোন সাপ বিষধর, সাপে কামড়ালে কী করনীয়, সাপকে রক্ষা করা-ই-বা কেন প্রয়োজন, সাপ সংক্রান্ত এমন বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য রাখা হয়েছে বইতে । তবে, অন্য কোনও প্রানীর সংস্পর্ষে বিষক্রিয়ার ঘটনায় কী করনীয়, এসব বিষয়ে এই বইতে কোনও তথ্য রাখা হয়নি । তবে সাপের পাশাপাশি অন্য কোনও কারণে বিষক্রিয়ার বিষয়গুলির সম্পর্কেও আর. জি. কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টারে ফোন করে অথবা ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ থেকে জেনে নেওয়া যায় ।
চিকিৎসক সোমনাথ দাস বলেন, " আমরা সব সময় চিন্তা করি সাপের ছোবলে মৃত্যু কমাতে হবে । এর ফলে শুধুমাত্র যে মানুষ বাঁচবেন, তা নয় । যে কোনও সরকারের অর্থনৈতিক লাভও হবে । আমাদের রাজ্যের নিয়ম, সাপের ছোবলে কারও মৃত্যু হলে, মৃতের পরিবারকে এক লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া হয় । যদি আমরা সাপের ছোবলে মৃত্যু কমাতে পারি, তাহলে এই টাকা বাঁচবে । এই টাকা অন্য কোনও কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে সরকার ৷ আমরা যদি সফলভাবে এই কাজটি করতে পারি, তাহলে সরকার এবং সমাজ বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে৷ আমরা তাই একদম ছোটদের থেকে শুরু করতে চাইছি । এর ফলে, তারা যখন পড়াশোনা করবে, তাদের মনের মধ্যে যদি এই বিষয়গুলি গেঁথে যাবে ৷ ফলে আগামী দিনে সচেতনতা অনেকটাউ বাড়বে ৷ এর ফলে সাপের ছোবলের ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যুর হার কমানো যাবে ।"