কলকাতা, 12 ফেব্রুয়ারি : আবারও বড় ভাঙন তৃণমূলে । রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে গা থেকে ঘাসফুলের জার্সি ঝেড়ে ফেললেন ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী । আজ রাজ্যসভায় অধিবেশন চলাকালীন তিনি পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন । অধিবেশন কক্ষে তিনি জানান, রাজ্যে হিংসার ঘটনা ঘটছে । কিন্তু, এখানে কিছু বলতে পারছি না ।
তিনি বলেন, "দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমায় এখানে পাঠিয়েছে। রাজ্যে যে হিংসা চলছে তাতে কিছু করতে পারছি না। তাই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার অন্তরাত্মা বলছে, যদি এখানে বসে থেকে কিছু না করতে পারি তাহলে আমার পদত্যাগ করাই ভালো। আমি পশ্চিমবঙ্গবাসীর হয়ে কাজ করে যাব।"
দীনেশ ত্রিবেদী দলত্যাগী হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে বিজেপি নেতাদের দিক থেকে । বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, "বাংলার রাজনীতিতে কেউ দেশ ও সমাজের সেবা করতে চাইলে, তৃণমূলে তাঁদের কোনও সম্মান দেওয়া হয় না । তাঁরা তৃণমূলে থাকতেই পারবেন না । বিশেষ করে পিসি ও ভাইপোর অহংকারের কারণে কোনও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি তৃণমূলে থাকতে পারেন না । আমার মনে হয়, দীনেশ ত্রিবেদী অনেকটা দেরি করে সিদ্ধান্ত নিলেন । দীনেশ ত্রিবেদীও বিজেপিতে আসতে চাইলে তাঁকে স্বাগত ।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পাগলামির" জন্যই বড় বড় নেতারা দলত্যাগী হচ্ছেন । বর্ষীয়ান নেতা দীনেশ ত্রিবেদী তৃণমূল ছাড়ার পর এইভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ । বললেন, "ভালো মানুষ, খারাপ দলে ফেঁসে গিয়েছিলেন । এখন সেখান থেকে মুক্তি চাইছেন । বাংলাকে মুক্ত করতে চাইছেন ।" তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে । সেই কারণেই কখনও প্রধানমন্ত্রী, কখনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার কখনও জে পি নাড্ডার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনে শব্দপ্রয়োগ করছেন বলেও মনে করছেন তিনি ।
আরও পড়ুন : রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা, তৃণমূলও ছাড়লেন দীনেশ ত্রিবেদী
বিষয়টিকে অবশ্য বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ শমীক ভট্টাচার্য । তাঁর কথায়, এটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয় । বললেন, "এই নিয়ে বাড়তি কিছু আমাদের বলার নেই ।" তবে দীনেশ ত্রিবেদী দল ছাড়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে তাঁর যোগদান নিয়ে । সেক্ষেত্রে নতুন বাংলা গড়ার স্বার্থে, "নেতা যদি নীতি ভুলে প্রায়শ্চিত্ত করতে আসেন", তাঁকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য ।
দীনেশ ত্রিবেদীর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা জিইয়ে রাখলেন শমীক ভট্টাচার্য দীনেশ ত্রিবেদী দলত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংও । বললেন, "রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করায় খুশি । " আগামী দিনে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি ।
একসঙ্গে কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে, জানালেন অর্জুন সিং বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছেন না বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় । তবে দীনেশ ত্রিবেদীর এই সিদ্ধান্তে যে একেবারেই খুশি নন সৌগত, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট । দলের বিরুদ্ধে দীনেশ ত্রিবেদীর কোনও ক্ষোভ ছিল কি না, প্রশ্ন করায় জবাব এল, এই বিষয়ে কোনওদিনই দীনেশ ত্রিবেদী কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি ।
কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত, দীনেশ ত্রিবেদীর প্রসঙ্গে মন্তব্য সৌগত রায়ের এদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী "করুণা" প্রকাশ করেছেন দীনেশ ত্রিবেদীর জন্য । "অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে" তিনি কোথায় যাচ্ছেন সেই নিয়েই প্রশ্ন তোলেন সুজন । বলেন, "ওঁর দমটা ঠিক ভালো হচ্ছিল না লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর । রাজ্যসভায় জিতেও তাঁর দমটা ভালো নেই । যে দলে তিনি ছিলেন সেই দলে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে । এখন যে দলে তিনি যাচ্ছেন সেই নিয়ে তো দম আরও বেশি বন্ধ হয় ।"
অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, দীনেশ ত্রিবেদী প্রসঙ্গ প্রশ্ন সুজন চক্রবর্তীর