কলকাতা , 10 সেপ্টেম্বর : সারা রাত চেষ্টা করেও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্ত 78 বছরের এক বৃদ্ধ হাসপাতালে ভরতি হতে পারলেন না ৷ অভিযোগ , কলকাতার তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও কোনওটিতেই তাঁকে ভরতি করানো সম্ভব হয়নি । কারণ, এই রোগীর জন্য ICU-র বেড প্রয়োজন ছিল । আর , ওই তিনটি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, তাদের ICU-র বেড ফাঁকা নেই । অবশেষে, অন্য একটি হাসপাতালে ভরতি করানো হয় ৷ পরে জানা যায়, তিনি কোরোনায় আক্রান্ত । কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে ৷ ICU-র বেড না পাওয়ার এই ঘটনার চারদিনের মাথায় ওই রোগীর মৃত্যু হয় । এই ঘটনার জেরে বেসরকারি ওই তিনটি হাসপাতালের মধ্যে একটি হাসপাতালকে এক লাখ টাকা এবং বাকি দু'টি হাসপাতালকে 50 হাজার টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন অর্থাৎ, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) । অন্যদিকে , এক নবজাতকের রক্তের গ্রুপ ভুল বলার ঘটনার তিন বছর পর দমদমে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করল এই কমিশন।
78 বছরের ওই বৃদ্ধ COPD-র রোগী ছিলেন । এর জন্য আনন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়মিত তাঁর চিকিৎসা করানো হত । শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে আনন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই হাসপাতাল থেকে বলা হয় , এই রোগীর জন্য ICU-র বেড প্রয়োজন । কিন্তু, সেখানে ICU-র বেড ফাঁকা নেই । ওইদিন রাতে এই রোগীকে অন্য আরও দুইটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । হাসপাতাল দু’টির মধ্যে একটি বালিগঞ্জে অবস্থিত এবং অন্যটি তপসিয়ায় । অভিযোগ, এই দু'টি হাসপাতাল থেকেও বলা হয়, সেখানে ICU-র বেড ফাঁকা নেই । অবশেষে, অন্য একটি হাসপাতালে এই রোগীকে ভরতি করানো সম্ভব হয় । পরে তাঁর শরীরে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে । হাসপাতালে ভরতি করানোর চারদিনের মাথায় এই রোগীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় অভিযোগ জানানো হয় রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনে। এরপর ওই তিনটি হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করে আর্থিক জরিমানা করেছে কমিশন ।
তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও মেলেনি ICU-র বেড, জরিমানা কমিশনের
শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছিল ৷ তাই আনন্দপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন , সেখানেই প্রথমে গিয়েছিলেন 78 বছরের এক বৃদ্ধ ৷ অভিযোগ , ICU-র বেড ফাঁকা না থাকায় তাঁকে ভরতি নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ এরপর আরও দু’টি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও তাঁকে একই কারণে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ৷
কমিশন জানিয়েছে , ICU-র বেড ফাঁকা না থাকার কথা বলা হয়েছে । অথচ, এই রোগীর জন্য অন্য হাসপাতালে ICU-র বেডের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি । ICU-র বেডের ব্যবস্থা করে দিতে না পারা এবং যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে এই তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে । হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন ৷ অথচ, এমন রোগীর জন্য অন্য হাসপাতালেও ICU-র বেডের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি আনন্দপুরের ওই হাসপাতাল । তাই ওই হাসপাতালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে । পরিষেবায় গাফিলতি থাকার কারণে অন্য দু’টি বেসরকারি হাসপাতালকে 50 হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে । মৃত রোগীর মেয়ে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন । জরিমানার এই মোট দুই লাখ টাকা এই অভিযোগকারীকে দেওয়ার কথা বলেছে কমিশন । একইসঙ্গে কমিশন জানিয়েছে , অভিযোগকারী যদি জরিমানার অর্থ না নেন, তা হলে এই দুই লাখ টাকা মুখ্যমন্ত্রীর COVID-19 ত্রাণ তহবিলে দান করে দেবে কমিশন ।
অন্য একটি ঘটনায় দমদমের বেসরকারি একটি হাসপাতালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন । জন্মের পর এক নবজাতকের ব্লাড গ্রুপ ও-পজ়িটিভ বলে দমদমের ওই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল । জন্মের তিন বছর পরে ওই শিশুর শিরদাঁড়ায় অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দেয় । তখন অন্য একটি হাসপাতালে এই শিশুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । সেখানে এই শিশুর ব্লাড গ্রুপ জানানো হয় ও-নেগেটিভ। এই ঘটনায় গত বছরের শেষের দিকে অভিযোগ জানানো হয় কমিশনে । বিষয়টি খতিয়ে দেখে কমিশন । রক্তের গ্রুপের রিপোর্ট এইরকম ভুল বলার কারণে দমদমের বেসরকারি ওই হাসপাতালকে জরিমানা করেছে কমিশন।