কলকাতা, 10 জানুয়ারি : দেখতে দেখতে 24 দিনে পড়ল পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলন । সরকারের থেকে দাবি আদায় করে নিতে সল্টলেকে গত 24 দিন ধরে লাগাতার অবস্থানে বসে রয়েছেন রাজ্যের পার্শ্ব শিক্ষকরা । আজ 24 দিন হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেননি তাঁরা । তবে দাবি না মিটলে এই অবস্থান চলবেই, তা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা ৷
পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, "সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো আমাদের মূল দাবি । আরটিই আইন 2009 এবং এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকতার ক্ষেত্রে কোনওরকম চুক্তিভিত্তিক লোক রাখা যাবে না । 2009 সালের শিক্ষার অধিকার আইনে বলা আছে, 3 বছরের মধ্যে সবার স্থায়ীকরণ করতে হবে ৷ এসব হলেও এই সরকার বেতন কাঠামো দেয়নি ।" তিনি আরও বলেন, "2011 সালে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ছয় থেকে তিন বছরের মধ্যে রাজ্যের সকল শিক্ষককে ধাপে ধাপে স্থায়ীকরণ করা হবে । তা এখনও কার্যকর করা হয়নি । মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের কর্মসূচি আজ 24 দিনে পা রেখেছে । যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে ।"
24তম দিনে পড়ল পার্শ্বশিক্ষকদের আন্দোলন গত 18 ডিসেম্বর থেকে সল্টলেক উন্নয়ন ভবনের বিপরীতে সেন্ট্রাল পার্কের গেটের সামনে অবস্থানে বসে রয়েছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা । দাবি, সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো । 2019 সালেও একইভাবে অবস্থান ও অনশন করে মিলেছিল প্রতিশ্রুতি । কিন্তু মাস ছয়েকের মধ্যেই সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণের দিকে হাঁটছে না বলে মনে করেছিলেন পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্যমঞ্চের নেতৃত্বরা । দাবি আদায়ে ফের রাস্তাকেই ঠিকানা করে নিয়েছেন পার্শ্বশিক্ষকরা । লড়াই আরও দীর্ঘ হবে জানাচ্ছেন অবস্থানকারীরা আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এক পার্শ্ব শিক্ষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ । তিনি বলেন, "এই দুর্মূল্যের বাজারে পার্শ্ব শিক্ষকদের জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে । মাত্র 4 হাজার টাকায় সংসার চালানো কোনওভাবেই সম্ভব হচ্ছে না । চরম আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা করাতে না পেরে গত মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের এক পার্শ্ব শিক্ষক আত্মহত্যা করেন ৷ তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে মৃতদেহ পর্যন্ত নিতে পারছেন না । আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি । আমরা লোক পাঠিয়েছি যাতে তাঁর সৎকারটা অন্তত হয় ।"
আরও পড়ুন : লকডাউনে কাজ হারিয়ে বাড়িতে, আত্মহত্যা পার্শ্ব শিক্ষকের
ভগীরথ ঘোষ আরও বলেন, "এই রাজ্যে মদ্যপান করে মানুষ মারা গেলে রাজ্য সরকার 2 লাখ টাকা পর্যন্ত দেয় । সেখানে একজন শিক্ষক মারা গেলে সরকারের তাকানোর সময় নেই । শিক্ষকরা দিনের পর দিন এভাবে মারা যাচ্ছে । এই সরকারের আমলে 284 জন পার্শ্ব শিক্ষককে একই কারণে হারিয়েছি । এটা বন্ধ করার জন্য আগামীদিনেও কর্মসূচি চালিয়ে যাব । এই সরকার পাথর ৷ তাই আমাদের আরও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে । আর তার জন্য আমরা প্রস্তুতও রয়েছি ।"