কলকাতা, 4 অগস্ট: বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে...৷ এর কোনও দ্বিমত নেই ৷ মায়ের কোলই যে শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তা সর্বজনবিদিত ৷ সব মা-ই তাঁর সন্তানকে প্রাণ দিয়ে আগলে রাখেন ৷ তবে প্রকৃতির নিয়মে প্রাণী জগতে ক্যাঙারুরা তাদের সন্তানকে আক্ষরিক অর্থেই নিজের শরীর দিয়ে আগলায় ৷ তাদের শরীরী গঠনই এমন যে, জন্মাবার পরও মায়ের পেটই শিশুর ঘরবাড়ি ৷ মানবসন্তানের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও এ বার ধার করা হচ্ছে ক্যাঙারুদের কনসেপ্ট ৷ সময়ের আগেই জন্মানো শিশু বা প্রিম্যাচিওর বেবিদের প্রাণসংশয় রুখতে 'ক্যাঙারু মাদার কেয়ার'-এর উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ অকাল জন্মের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কলকাতার এক হাসপাতালে এই বিষয়ে আয়োজিত কর্মশালায় রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ, ইউনিসেফ ও চিকিৎসকরা একযোগে এর পক্ষে সওয়াল করল ৷
বাড়ছে প্রি-টার্ম বেবির সংখ্যা: লাইফস্টাইল পরিবর্তন, দেরিতে বিয়ে, কমবয়সে গর্ভধারণ, সিজারিয়ান প্রসব এবং ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতি ব্যবহার করে জন্মানো শিশুর জন্মের ফলে এখন অনেকক্ষেত্রেই প্রি-টার্ম অর্থাৎ সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হতে দেখা যাচ্ছে ৷ আর সে সব ক্ষেত্রে শিশুর ওজনও কম হচ্ছে এবং তাঁকে বাঁচানোই হয়ে পড়ছে কঠিন চ্যালেঞ্জ ৷
ক্যাঙারু মাদার কেয়ার: আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যই কলকাতার একটি হাসপাতালে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয় ৷ সেই কর্মশালার ফাঁকে রাজ্য সরকারের 'মা ও শিশুমৃত্যু হ্রাসের জন্য টাস্ক ফোর্সের' সদস্য ডা. একে মল্লিক বলেন, "এখন নবজাতকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গর্ভাবস্থার পূর্ণ মেয়াদের আগে (প্রিটার্ম) এবং 2.5 কেজি ওজনের নিচে জন্মগ্রহণ করে । সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি, কারণ বেসরকারি হাসপাতালে আইভিএফ-এর মাধ্যমে জন্মের পরে শিশুদের এখানে ভর্তি করা হয় ৷"
তিনি আরও বলেন, "রাজ্য সরকারের নীতি এখন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের 20 শতাংশ সংঘটিত হয়, সেখানে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার খুব জরুরি ৷ এ ক্ষেত্রে ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংস্পর্শ এবং ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র স্তন্যপান করানো হয় ৷ এটি রাজ্যে নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করবে ।"
রাজ্যে কমেছে নবজাতকের মৃত্যুর হার: পশ্চিমবঙ্গে 2011 সালে নবজাতকের মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজার জীবিত জন্মানো শিশুর মধ্যে 24 এবং সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি এই পদ্ধতিগুলি ব্যবহারের কারণে এই হার এখন প্রতি হাজার জন্মানো শিশুতে 14-এ নেমে এসেছে ।