কলকাতা, 7 মার্চ : ব্রিগেড থেকে বাংলায় প্রকৃত পরিবর্তনের ডাক প্রধানমন্ত্রীর ৷ আশ্বাস দিলেন যা যা বাংলা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তা সবই ফিরিয়ে দেবেন ৷ 75 বছরের স্বাধীনতার দিকে যেমন ভারত এগিয়েছে তেমনই বাংলার উন্নয়ন এগিয়ে যাবে ৷ আগামী পাঁচ বছরে বাংলার যে উন্নয়ন হবে তার সুফল পঁচিশ বছর ধরে মানুষ ভোগ করতে পারবেন বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী ৷
আজ ছিল বিজেপির শক্তি পরীক্ষার এক বড় পরীক্ষা ৷ ব্রিগেড সবসময় যে কোনও রাজনৈতিক দলের শক্তি পরীক্ষার প্রধান হাতিয়ার ৷ গত সপ্তাহে যুক্ত মোর্চা এই ব্রিগেডকে হাতিয়ার করে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে ৷ রাজ্য পুলিশের নথি বলছে, সেদিন আড়াই লাখের বেশি জমায়েত হয়েছিল ব্রিগেডে ৷ আজ বিজেপির কাছে নিজেদের প্রতিষ্ঠা শুধু নয়, শক্তির প্রমাণ দেওয়ার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল ৷ সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া সব্যসাচী দত্ত দাবি করলেন 20 লাখের বেশি জমায়েত হয়েছে এবারের ব্রিগেডে ৷ 20 লাখ জমায়েতের দাবি হয়ত কিছুটা হলেও অতিরঞ্জিত ৷ কিন্তু যেভাবে গত দুদিন ধরে কাতারে কাতারে মানুষকে ব্রিগেডমুখী হতে দেখা গিয়েছে তা নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরের কাছে অক্সিজেন ৷ আজ মোদির সামনে বিশাল জমায়েত করা চ্যালেঞ্জ ছিল রাজ্য বিজেপি নেতাদের ৷ মোটের উপর অনেকটাই সফল তারা ৷
আরও পড়ুন : বাংলাকে বাঁচাবেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মিঠুন, ব্রিগেড থেকে বার্তা শুভেন্দুর
আজকের মোদির ব্রিগেড জমায়েত যদি লক্ষ করা যায় তাহলে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে পড়বে ৷ এক ) মিঠুন চক্রবর্তীকে বিজেপিতে যোগদান করানো ৷ মিঠুন প্রথমে সিপিআইএম, পরবর্তীকালে তৃণমূল ৷ ঘাসফুলের পতাকা ধরে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন ৷ তারপর বেশ কিছু বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ৷ রাজনীতি এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন ৷ সেই মিঠুন চক্রবর্তীকে আজ ব্রিগেডে নিয়ে এল বিজেপি ৷ যোগদান করাল ৷ দুই ) ব্রিগেড থেকে শুভেন্দুকে সামনে রেখে লড়াইয়ের বার্তা তৈরি করল ৷ নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রার্থী করে ইতিমধ্যেই অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে ৷ এইখানে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হয় ৷ 2011-তে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সমাবেশ ৷ যুব তৃণমূলের ব্যানারে ৷ শুভেন্দু অধিকারী তখন যুব তৃণমূল সভাপতি ৷ কিন্তু মঞ্চে দেখা গেল না তাঁকে ৷ মঞ্চ দাপাতে দেখা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ যে অভিষেকের বিরুদ্ধে আজ সবথেকে বেশি খড়্গহস্ত শুভেন্দু ৷ সেদিন যেভাবে ব্রিগেড থেকে শুভেন্দুকে সরানো হয়েছিল তার যেন মধুর বদলা ৷ আর তিন) ব্রিগেড থেকে নবান্ন দখলের ডাক মোদির ৷
ব্রিগেড থেকে প্রধানমন্ত্রীর হুঙ্কার, গত দশ বছর বাংলার মানুষ সময় নষ্ট করেছেন ৷ এখানকার বেকার যুবকরা চাকরি পায়নি ৷ শিল্পে পিছিয়ে গিয়েছে ৷ আঙুল তুললেন সিন্ডিকেট, কালোবাজারির বিরুদ্ধে ৷ মোদির কথায়, "এখন বাংলার মানুষ চোখের সামনে আপনজনের মৃত্যু দেখছে ৷ অন্যায় দেখছে৷ কাজ হারাচ্ছে ৷ তারা মুখ ফুটে নিজের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না ৷" শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা বেশ কিছুদিন ধরেই কাটমানি, তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ৷ আজ ব্রিগেড থেকে সেই তোলাবাজি, কাটমানির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী ৷ বাংলায় এক সুস্থ শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, "গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভোট দিন ৷ উন্নয়ন করতে ভোট দিন ৷ বাংলা যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভোট দিন ৷" বিজেপির আমলে বাংলায় কোনও তোষণের রাজনীতি থাকবে না বলেও দাবি করলেন তিনি ৷ বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে যুবকদের চাকরির পাশাপাশি ঝুপড়িবাসীদের ঘর দেওয়ার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : ব্রিগেডের মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দিলেন মিঠুন
তৃণমূলের পাশাপাশি সংযুক্ত মোর্চার বিরুদ্ধেও আঙুল তুললেন প্রধানমন্ত্রী ৷ একসময় বামেদের স্লোগান ছিল, কংগ্রেসের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও ৷ সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এবারের বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন বিমান, সূর্যরা ৷ বামেদের সেই স্লোগান তুলেই মোদির কটাক্ষ, আজ কোথায় গেল কালো হাত ?