পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Rabindra Sarobar: জল শুকিয়ে মাটিতে জন্মেছে ঘাস, পলি জমে রবীন্দ্র সরোবর কি বিপদের মুখে? - water level decreasing day by day

102 বছর ধরে তোলা হয়নি পলি ! তীব্র গরম ও প্রখর রৌদ্রে ক্রমশ জল শুকিয়ে বিপদের মুখে অগ্রসর হচ্ছে রবীন্দ্র সরোবর বলে আশংকায় পরিবেশকর্মীরা ৷

Rabindra Sarobar
রবীন্দ্র সরোবর

By

Published : May 8, 2023, 10:33 PM IST

কলকাতা, 8 মে: দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবর ৷ বিগত কয়েক বছরে একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে লেকটি ৷ জল ভরতি রবীন্দ্র সরোবরকে দেখতেই সকলে অভ্যস্ত ৷ তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তার অন্য রূপ ৷ তীব্র গরমে ক্রমশ জলহীন হয়ে পড়ছে রবীন্দ্র সরোবর । তবে মাত্রাতিরিক্ত গরম আগেও পড়েছে ৷ কিন্তু এই ছবি তখনও ধরা পড়েনি ৷ অস্বাভাবিকভাবে লেকের জল শুকিয়ে যাওয়া চিন্তায় ফেলেছে স্থানীয়দের ৷ জাতীয় সরোবরের তকমা পাওয়া এই লেকটি বিপন্ন হলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবনেও ৷ শতাব্দী প্রাচীন এই সরোবর নিয়ে এমনই আশংকা প্রকাশ করেছেন পরিবেশপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞরা ৷

বিপদের আশংকায় পরিবেশকর্মীরা

জানা গিয়েছে, সরোবরের ধার ধরে খানিকটা পলি তোলার কাজ করেছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) । তবে কয়েক মাস ধরে চলছে তীব্র গরম, বাড়ছে উষ্ণতা । আর তার জেরেই নজিরবিহীনভাবে দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের জলস্তর বেশ খানিকটা কমেছে । এতটাই নেমেছে যে চার দিক থেকে বেরিয়ে এসেছে মাটি । রোদে শুকিয়েছে সেই মাটি । সেখানে জন্মেছে ঘাস । চেহারা নিয়েছে খেলার মাঠের মত । জাতীয় সরোবরের এমন চেহারা কি শুধুই তীব্র গরমের জেরে ? ঘটনার পর থেকেই প্রাতঃভ্রমণকারী থেকে শুরু করে আমজনতার মনে এই প্রশ্নই উঠছে ।

102 বছর ধরে তোলা হয়নি পলি

স্থানীয়দের দাবি, 190 একর রবীন্দ্র সরোবরের জায়গায় 90 একর জুড়ে রয়েছে জলাশয় । আর বাকি গাছগাছালির বাফার জোন । ইংরেজ আমলে তৈরি হয় এই সরোবর । একটি চ্যানেল ছিল যা আদিগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত করেছিল এই সরোবরকে । তবে আদিগঙ্গার উপর মেট্রোর কাজ হওয়ার জেরে সেই জায়গা আটকে দেওয়া হয়েছিল । অন্যদিকে, ইংরেজ আমলে তৈরির পর থেকে 102 বছর যাবৎ একবারও পলি তোলা হয়নি গোটা জলাশয়ের । যার জেরে নিচে প্রায় 8-9 ফুট শক্ত পলির স্তর জমেছে । এই সরোবর দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে । সেই এলাকায় তৈরি কার্বন ও ধূলিকণা এখানকার জল ও গাছ শোষণ করে দূষণ হাত থেকে রক্ষা করে নাগরিকদের ।

জল শুকিয়ে যাওয়া চিন্তায় ফেলেছে স্থানীয়দের

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জলাশয় ভূগর্ভস্থ জল ভরতির অন্যতম কেন্দ্র । সেখানে 8-9 ফুট শক্ত পলির আস্তরণ থাকায় ভূগর্ভস্থ জল মাটির উপরে আসা বা বৃষ্টির জমা জল মাটির নীচে যাওয়ার সব পথ বন্ধ । এমনকী সরোবরের গা লাগোয়া মাটিতেও এখন আর বেশি জল ঢুকতে পারে না । তাই সরোবর সঠিকভাবে রক্ষা করতে গেলে গোটা জলাশয়ের পলি তোলার উপর জোর দিতে হবে । যাতে মাটির নীচে যেমন জল যেতে পারে ৷ তেমন নীচের জল উপরে উঠতে পারে । আশেপাশের মাটিতেও জল যেতে পারে । আর তা না হয়ে জল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে সরোবর বিপদের মুখে দাঁড়াবে । আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জন জীবনে । আশেপাশের মাটি জল শূন্য হয়ে শুকিয়ে গেলে তাতে ফাটল ধরতে থাকবে । বহুতলগুলির ভিতের ক্ষতি হবে । জলাশয়ের আশেপাশের বাফার জনের ক্ষতি হবে । আর এর ফলে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে বাতাসের যে কার্বন দূষিত ধূলিকণা শোষণ করত, সেই প্রক্রিয়াতে প্রভাব পড়বে ।

রোদে শুকিয়েছে মাটি

প্রাতঃভ্রমণকারী সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষের কথায়, দীর্ঘ 20-25 বছর এমনভাবে রবীন্দ্র সরোবরকে শুকিয়ে যেতে দেখেননি কেউ । এই সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে কেএমডিএ । তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিক । নামকে ওয়াস্তে কাজ করলে হবে না । আরও এক প্রাতঃভ্রমণকারী সুরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, "গরম পড়লে জল শুকোতে পারে কমবেশি । তবে অস্বাভাবিকভাবে জল কমে যেতে পারে না । পরিবেশ রক্ষায় এই সরোবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ৷ এটা রক্ষা না করতে পারলে বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে হবে ।"

জল শুকিয়ে মাটিতে জন্মেছে ঘাস

পরিবেশ আন্দোলনকারী থেকে প্রাতঃভ্রমণকারী সকলেরই অভিযোগ, কেএমডিএ উদাসীন । তবে কেএমডিএ'র এক আধিকারিক জানান, লেকের চারপাশে পলি তোলার কাজ হয়েছে সরোবরের গভীরতা বাড়াতে । তীব্র গরমের জেরেই জল কমেছে । সরোবর রক্ষায় যা করণীয় তাই করছে কর্তৃপক্ষ । জলাশয় থেকে জল বেরোনোর যে চ্যানেল সেটা আরও উচু করা হয়েছে । ফলে জলস্তর আরও বাড়বে ।

আরও পড়ুন:তিলোত্তমার গর্ব রবীন্দ্র সরোবর এখন ডেঙ্গির 'আঁতুড়ঘর'!

ABOUT THE AUTHOR

...view details