কলকাতা, 23 জুলাই : ফের সরকারি বিধিনিষেধ ভেঙে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুয়ারে ভ্যাকসিনের ঘটনা কলকাতায় । বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া ক্লাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সুপারিশ করেছে কলকাতা পৌরনিগম । বেহালার পশ্চিম পুটিয়ারিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দি ইউনাইটেড ক্লাব কোভিড-19 ভ্যাকসিন দেওয়ার আয়োজন করে ।
আরও পড়ুন :দেবাঞ্জন মামলায় কলকাতা পৌরনিগমকে 6 দফা প্রশ্ন করে চিঠি পুলিশের
এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর রত্না সুর অভিযোগ করেছেন বেআইনিভাবে বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে । তবে এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারা কলকাতা পৌরনিগমের তরফে তাঁদের বাড়িতে এসে করোনার টিকা দেওয়ার দাবি তুলেছেন । বেহালার পশ্চিম পুটিয়ারি ক্লাবের তরফে রজত হালদার এই বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিনেশনের আয়োজন করেছিলেন । সাংসদ ও বিধায়কদের ছবি ব্যবহার করে এই শিবিরের পোস্টার তৈরি করেছিলেন তিনি । অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ভ্যাকসিনেশনের বিধিনিষেধ ভেঙে এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে 10 থেকে 12 জনকে কোভিড-19 ভ্যাকসিন দেওয়া হয় । সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই ভ্যাকসিন দেওয়ার ছবি শেয়ার করেন রজত । বহু প্রবীণ নাগরিককে এইভাবে ভ্য়াকসিন দেওয়া হয়েছে ।
বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর, কলকাতা পৌরনিগম, জানালেন পৌরনিগমের সদস্য অতীন ঘোষ এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কলকাতা পৌর নিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অতীন ঘোষ বলেন, "ওই বেসরকারি হাসপাতালকে রাজ্য সরকার একটা আউটরিচ ক্যাম্প করার অনুমতি দিয়েছে ৷ এই ক্যাম্প করতে গেলে একটা ভ্যাকসিনেশন সেন্টার আইডি তৈরি করতে হয় ৷ সেই আইডি তাদের দেওয়া হয়েছে ৷ সেটা সেন্টার থেকে ভ্যাকসিনেশনের জন্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিনেশনের জন্য নয় ৷" কারণ "দুয়ারে ভ্যাকসিন" নামক কোনও পরিকল্পনা রাজ্য সরকার নেয়নি, কলকাতা পৌরনগমও নেয়নি বলে পরিষ্কার জানান তিনি ৷ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর "দুয়ারে ভ্যাকসিন"-এর কোনও অনুমতি দেয়নি বলে জানিয়েছেন কলকাতা পৌরনগমের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ৷
বেআইনিভাবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ ছাড়া এই ক্লাব ও বেসরকারি হাসপাতাল বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে । বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দিতে হলে কী ধরনের সিভিসি দেওয়া হবে, সে রকম কোনও পরিকল্পনা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই, কলকাতা পৌরনিগমেরও নেই ৷ কারণ কলকাতা পৌরনিগম রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম মেনে চলে, জানিয়েছেন অতীন ঘোষ ৷
এদিন তিনি বলেন, "এই যে অভিযোগ আসছে, সেটা সত্যি হলে, তাঁরা নিয়মভঙ্গ করেছেন ৷ ভ্যাকসিনেশন সেন্টার করার অনুমতি দেওয়ার অধিকার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ৷" এমনকি ভ্যাকিসন দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবিক আর টেকনিক্যাল বিষয় দু'টি আলাদা বলে বুঝিয়ে দেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : ভ্যাকসিন দিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সরানো হল স্বাস্থ্য আধিকারিককে
একটা ভ্যাকসিনের ভায়াল খোলার পর 10-11 জনকে ভ্যাকসিন দিতে হবে ৷ তাঁদের ন্যূনতম আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে ৷ 84 বছরের কোনও প্রৌঢ়াকে ভ্যাকসিন দিতে গেলে, ভ্যাকসিনের ভায়াল খোলার পর আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে, এখানে একটা টেকনিক্যাল অসুবিধে রয়েছে বলে জানালেন অতীন ঘোষ ৷ তবে "যেদিন বিশেষজ্ঞরা সেই টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধানের রাস্তা বার করতে পারবেন, সেদিন সরকার দুয়ারে ভ্যাকসিন করার অনুমতি দেবেন ৷" 84 বছর বা এই ধরনের মানুষ, যাঁদের পক্ষে ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে গিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া সম্ভব নয়, তাঁদের একদিন না একদিন বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে ৷ কিন্তু তার জন্য যে বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন, তাঁরা বলে দেবেন সেই ভ্যাকসিনেশন কীভাবে হবে ৷
তিনি জানিয়েছেন দু'দিন আগে এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর তথা তৃণমূল পুর দলের মুখ্যসচেতক রত্না সুর এই ভ্যাকসিনেশনের ঘটনার অভিযোগ জানিয়েছেন কলকাতা পৌরনিগমে । কলকাতার কোনও ওয়ার্ডে যাতে দুয়ারে ভ্যাকসিন না হয়, তার জন্য সতর্ক করা হয়েছে স্বাস্থ্য আধিকারিক ও ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরদের ।