কলকাতা, 15 নভেম্বর: শহর কলকাতার প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের চোখের সামনে যে টুকরো চিত্রগুলো ভেসে ওঠে তার মধ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল (Victoria Memorial Hall) অন্যতম । কুইন্স রোডে প্রায় 116 বছর ধরে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যশালী এই স্থাপত্যকে কাবু করেছে বায়ু দূষণ (Damage of Victoria Memorial) । যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া এবং বায়ুদূষণের ফলে ভিক্টোরিয়ার শ্বেত শুভ্র মার্বেল পাথরে ছাপ পড়তে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ।
কথায় আছে প্রদীপের আলোর নিচেই থাকে নিকষ আঁধার ৷ একইভাবে নগর সভ্যতার যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনই রয়েছে তার কিছু মন্দ দিকও । শহর আধুনিক হচ্ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন এবং দূষণ । এই বিষাক্ত গ্যাস যেমন ক্ষতি করছে নাগরিকদের তেমনই রেহাই পাচ্ছে না ব্রিটিশ আমলে তৈরি সৌধও । শুধু ভিক্টোরিয়া কেন, ক্ষতি হচ্ছে শহরের অন্যান্য হেরিটেজ ভবনগুলিও ।
কিছুটা একই ব্যধিতে জর্জরিত হয়েছিল আগ্রার তাজমহল । শাহজাহানের রাজত্বকালে তৈরি হওয়া এই অসাধারণ স্মৃতিসৌধর ওপর ধীরে ধীরে দূষণ ও ধূলিকণার চাদর চাপতে চাপতে মার্বেলের রং কোথাও ধূসর হলুদ আবার কোথাও কালচে হলুদ হতে শুরু করে । এরপরেই 2018 সালে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয় । দেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল । এখানে আর্জি জানানো হয়েছিল যে, পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে একটি এই তাজমহল ৷ তা বাঁচাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক নয়ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক তাজমহল । এরপরেই নড়েচড়ে বসে সরকার । দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে শুরু হয় সংস্কারের কাজ । বর্তমানে কিছুটা হলেও ঠেকানো গিয়েছে ক্ষতি । বাঁচানো গিয়েছে তাজমহলকে ।
আরও পড়ুন:শতবর্ষ আগে সাধারণের জন্য খুলেছিল ভিক্টোরিয়ার দরজা
মহারানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতে এই সৌধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন বড়লাট লর্ড কার্জন । ইন্দো স্যারাসেনিক রিভাইভেল আর্কিটেকচার স্টাইলে (Indo-Saracenic Revival Architecture Style) এই সৌধর নকশা তৈরি করেন তৎকালীন নামজাদা শিল্পী স্যার উইলিয়াম এমারসন (William Emerson) । ভিক্টোরিয়ার বাইরের দিক তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছিল মাক্রানা মার্বেল (Makrana Marble) । তাজমহলের বাইরের দিকেও এই একই ধরনের মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে ।
যেহেতু একেবারে শহরের মাঝখানে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল এবং তার চারপাশ দিয়ে সর্বক্ষণ যাতায়াত করছে যানবাহন তাই দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেশি থাকে । আবার সামনেই ময়দান । একদিকে গাড়ির গ্যাস অন্যদিকে ধূলিকণা । এই দুই মিলে আরও জটিল করে তুলছে পরিস্থিতি ।
এই বিষয় পরিবেশ-প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ জানিয়েছেন, ডিজেল গাড়ির গ্যাস এবং ধূলিকণা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের শ্বেতপাথরের ক্ষতি করছে । বদলে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়ার সাদা মার্বেলের রং । কারণ গাড়ির একজস্ট পাইপ (Exhaust Pipe) থেকে যে সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার নির্গত হয় সেগুলি বাতাসে মিশে মার্বেলের ক্ষতি করে । তাই মেমোরিয়ালের চারপাশে চারটি ধাপের গ্রিন বেল্টের উপর জোর দিতে হবে ।