কলকাতা, 10 জানুয়ারি: কিংবদন্তি শিল্পী তো ছিলেনই, মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন একেবারে আম আদমি ৷ এত বড় মাপের একজন ব্যক্তি এতটা সাধারণ ও বিনয়ী হতে পারেন, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ উস্তাদ রশিদ খান ৷ প্রয়াত শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসে এ ভাবেই শিল্পীকে বর্ণনা করলেন তাঁর সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠরা ৷ আর মানুষ হিসেবে এতটা ভালো ছিলেন বলেই চোখের জল বাঁধ মানছে না অনেকেরই ৷ রবীন্দ্র সদনে রশিদ খানকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসে তাঁর মিষ্টি স্বভাবের কথাই বারবার উঠে এল সবার মুখে ৷ হৈমন্তী শুক্লা থেকে ঊষা উত্থুপ - ধরা ধরা গলায় সবাই বললেন, এ রকম একটা মানুষের এমন অকালপ্রয়াণ অবিশ্বাস্য ৷
বুধবার সকালে রবীন্দ্র সদনে ফুল ও মালায় ঢাকা ছিল উস্তাদের দেহ ৷ তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে ভিড় উপচে পড়ে ৷ শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন হৈমন্তী শুক্লা, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, কৌশিকী চক্রবর্তী, ঊষা উত্থুপ, মুনমুন সেন, জুন মালিয়া, কাঞ্চন মল্লিক, শতরূপ ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ বহু বিশিষ্টজন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে উস্তাদ রশিদ খানকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষশ্রদ্ধা জানানো হয় ৷ এরপর নাকতলার বাড়ি হয়ে শিল্পীর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর জন্মস্থান উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে ৷ সেখানেই চিরবিশ্রামে সমাধিস্থ করা হবে তাঁর দেহ ৷
এ দিন প্রয়াত শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা ৷ তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে ওর ভীষণ একটা মিষ্টি সম্পর্ক ছিল ৷ ও আমাকে ছেড়ে চলে গেল, এটা ভাবতেই পারছি না ৷ খুব মিষ্টি স্বভাবের ছেলে ছিল ৷ ও খুব বাংলা ভালোবাসতো ৷ বাঙালি খাবারও খুব ভালোবাসতো ৷ আমার সঙ্গে দেখা হলেই বলতো, একদিন আসো ৷ আমি বিরিয়ানি বানাব ৷ কখনও নিজেকে ভাবত না যে, আমি একজন বিরাট কেউ ৷ ওঁর সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক ছিল ৷ ভাইফোঁটা ছাড়াও যখন তখন চলে আসত ৷ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে আমার কোনও ভুল হলে ও আমাকে বলে দিত, দিদি এটা হবে ৷ উস্তাদ রশিদ খান যে আমার ভাই হবে আমি ভাবিনি ৷ ও এভাবে চলে গেল ভাবতে পারছি না ৷"