কলকাতা, 15 জুন : রক্তের গ্রুপের উপর নির্ভর করে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে । সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের প্রচারের জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন রক্তদাতাদের অনেকে । দেখা দিচ্ছে রক্তদানে অনীহা । এর ফলে দেখা দিয়েছে A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট । এমনই জানিয়েছে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, রক্তদান সম্পর্কে সোশাল মিডিয়ায় কিছু অবৈজ্ঞানিক প্রচার চলছে । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও বলছেন, এর কোনও ক্লিনিকাল তথ্য-প্রমাণ নেই । রক্তের সংকট দূর করতে, আতঙ্কিত না হয়ে রক্তদানের জন্য মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে ।
B, A এবং O এই তিনটি পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল । কিন্তু, সপ্তাহ দুই ধরে A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে । সোশাল মিডিয়ার এমন অনেক প্রচার চলছে, যেখানে বলা হচ্ছে রক্তের গ্রুপ A হলে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায় । এর ফলে রক্তদানে অনীহা প্রকাশ করছেন A গ্রুপের অনেক রক্তদাতা । একথা জানিয়ে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কফি হাউস সোশাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অচিন্ত্য লাহা বলেন, "সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে যে, বিদেশের বিভিন্ন রিসার্চ জানিয়েছে, A গ্রুপের মানুষ COVID-19-এ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন । এর ফলে A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তদাতাদের মধ্যে রক্তদানে অনীহা তৈরি হয়েছে । যার জেরে A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট দেখা দিচ্ছে ।" তিনি আরও বলেন, "A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত নিতে গিয়ে কোনও দিনই সমস্যায় পড়তে হত না, কিন্তু এখন A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের দরকার হলে সঙ্গে করে A গ্রুপের রক্তের ডোনারকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে ।"
A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের এমন সংকট এর আগে দেখা গিয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে অচিন্ত্যবাবু বলেন, "এভাবে A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট আগে দেখিনি । মাঝে মধ্যে সংকট হয় । কিন্তু, A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট যেন অন্য চেহারা নিয়েছে ।" এই অবস্থায় রক্তদাতারা যাতে আতঙ্কিত না হয়ে রক্তদানের জন্য এগিয়ে আসেন তার জন্য কী করা হচ্ছে? তিনি বলেন, "আমরা বোঝাচ্ছি, কাকতালীয়ভাবে অন্য জায়গায় হয়ত এমন হয়ে গিয়েছে । তবে, এটা কোনও কারণ নয় ।" রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ বছর ধরে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেডিকেল ব্যাঙ্কের সম্পাদক ডি আশিস বলেন, "A পজ়িটিভ গ্রুপের রক্তের দরকারে যিনি রক্ত দিতে যাচ্ছেন, এমন অনেকের মধ্যে এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটতে পারে । A পজ়িটিভ হলেই COVID-19 হবে, এটা কোনও বিজ্ঞান নয়, এটা ঠিক নয় । এটা বাজে ধারণা ।" তিনি আরও বলেন, "রক্তদান সম্পর্কে বিভিন্নভাবে সোশাল মিডিয়ায় কিছু অবৈজ্ঞানিক প্রচার চলছে। এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার ।"
COVID-19-এর ভাইরাস SARC-COV-2-এর বয়স মাত্র ছয় মাস । এই ভাইরাসের গতি-প্রকৃতিই এখনও আমরা ভালো করে বুঝতে পারিনি । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই ভাইরাসের গতি প্রকৃতি নিয়ে নিশ্চিত না । আক্রান্তদের পরিসংখ্যান তুলনা করে এরকম অনেক কিছু আসতেই পারে। কিন্তু, A গ্রুপের রক্ত হলে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি, এ সব ফালতু চিন্তা করে লাভ নেই । একথা জানিয়ে কনসালট্যান্ট হেমাটোলজিস্ট চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, "আমার রক্তের গ্রুপ আমার জন্মের সময় ঠিক হয়ে গিয়েছে । আমার যদি ব্লাড ক্যান্সার হয় বা যদি ট্রান্সপ্লান্ট হয়, এসব ক্ষেত্রে রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার হিসাবে পরিবর্তন হতে পারে ।" বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "রক্তের গ্রুপ যখন আমি পালটাতে পারব না, সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, COVID-19-এর সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি মেনে চললে ভালো হয় ।"
COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করুন, অন্তত নাক-মুখ ঢেকে রাখুন । কোনও নতুন জায়গায় গেলে হাত ধুয়ে নেবেন। যেখানে বেশি মানুষ রয়েছেন সেখানে দুই ঘণ্টা অন্তর হাত ধুয়ে নেবেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এলে আবার হাত ধুয়ে নেবেন। বাড়িতে ফিরে ঘরে ঢোকার আগে পারলে জুতো ধুয়ে নেবেন অথবা, পাঁচ জোড়া জুতো রাখবেন, আজ যে জুতো পরে ফিরেছেন সেই জুতো আবার পাঁচ দিন পরে পরবেন। জামাকাপড় ওয়াশ করবেন । চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, "রক্তের গ্রুপ নিয়ে কিছু করতে পারবেন না। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয় যে, রক্তের কোনও গ্রুপের ক্ষেত্রে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে, তা হলে কি এখন রক্তের গ্রুপ চেঞ্জ করবেন? রক্তের কোনও গ্রুপের ক্ষেত্রে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে, এর কোনও ক্লিনিকাল তথ্য-প্রমাণ নেই । এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ নেই যে রক্তের মাধ্যমে COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে । আতঙ্কিত না হয়ে যদি রক্তদানের জন্য মানুষ এগিয়ে আসেন, তা হলে যাঁরা রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকেন, তাঁদের বাঁচতে সুবিধা হবে । চিকিৎসার কারণে যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরাও রক্ত পাবেন।"