কলকাতা, 15 জুন : ভারত এবং চিনের মধ্যে চলা সংঘাতজনক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মুখ খোলা উচিত প্রধানমন্ত্রীর । শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে জাতির উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য পেশ করা উচিত বলে মনে করেন বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি । ETV ভারতের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে অধীরের দাবি, '' প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী । এটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।"
শুধু ভারত-চিন নয়, সাক্ষাত্কারে দেশের বর্তমান নানা বিষয় নিয়েও মুখ খুলেছেন অধীর । বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক থেকে কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজের-দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি ।
লাদাখ, লকডাউন এবং শ্রমিক
পূর্ব লাদাখের ইশুতে ভারত এবং চিনের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তলানিতে ঠেকেছে । এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলা উচিত বলে দাবি অধীরের । তাঁর কথায়, "কূটনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা সম্পর্কে পুরোপুরি নিরব রয়েছে কেন্দ্র । ওই জায়গায় সীমান্ত লঙ্ঘণ হচ্ছে । বিষয়টি যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং চিন্তার, সে প্রসঙ্গে দেশের সেনাবাহিনী এবং বিশেষজ্ঞরা সরকারকে সতর্কও করেছে । দেশের মানুষ অস্থির । ওই এলাকায় ঠিক কী ঘটছে সে সম্পর্কে তারা জানতে চায় । প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী । আমি মনে করি এটাও একটা সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।"
দেশজুড়ে লকডাউনের সময় চালু হওয়া শ্রমিক স্পেশাল নিয়েও মুখ খোলেন অধীর । বিষয়টিকে ফের একবার 'মৃত্যুকূপ' হিসেবে কটাক্ষ করতেও ছাড়লেন না । এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস সাংসদের দাবি, "রেলের অস্বচ্ছ এবং ভুল পরিকল্পনার এ-এক জ্বলন্ত উদাহরণ । ভারতীয় রেল প্রতিদিন কম বেশি 2.5 কোটি যাত্রী পরিবহণ করে । কিন্তু, সরকার যখন ভিন রাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য 'শ্রমিক স্পেশাল' ট্রেন চালু করল, তখন সে দিকে বিন্দুমাত্র নজর দিল না । কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না । ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকী কয়েক দিন পর্যন্ত পথে আটকে থেকে দেরি করতে থাকল ট্রেনগুলো । ফলে এই প্রচন্ড গরমে নাজেহাল হতে হল পরিযায়ী শ্রমিকদের । পরিকল্পনা ভুলের আরও একটি চরমতম নিদর্শন, কম করে 90 জন শ্রমিকের মৃত্যু । আর এই শ্রমিক ট্রেনগুলোকে 'মৃত্যুকূপ' ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছি না ।"
পরিযায়ী শ্রমিক
লকডাউন নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মোদি সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন অধীর । "ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের বিষয়ে সরকার বিন্দুমাত্র যত্নশীল নয় । অসহায় মানুষগুলো পিছিয়ে পড়ছেন । আরও অনেক বড় বিপদের আশঙ্কা করে তাঁরা ফিরেছেন । তাঁদের দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য সরকারের তরফ থেকে কেউ এগিয়ে আসেননি । ভয়ে ভয়ে তাঁরা পথ চলতে শুরু করেছিলেন । কেউ হেঁটে, কেউ সাইকেলই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কেন ? উত্তর একটাই, অপরিকল্পিত লকডাউন । এটা সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা । এই পরিকল্পনাবিহীন লকডাউন দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করল ।"
"আফ্রিকাতেও এমন ঘটনা ঘটে না । COVID-19 প্যানডেমিকের জন্য প্রায় 200 টি দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু, কোথাও এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি । দুর্ভাগ্যজনক কিছু প্রাণ ট্রেন কাটা পড়েছেন, ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন, অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন । আমরা মৃত্যু মিছিলের সাক্ষী থেকেছি । আমাদের দেশে এমনটা কি হওয়ার ছিল ? এটা যেন দেশভাগের কথা মনে করিয়ে দিল । এটা খুবই দুর্ভাগ্যের যে, বর্তমানে গেটা দেশ ভারত এবং ইন্ডিয়ার মধ্যে বিভাজিত ।" ETV ভারতকে বললেন অধীর ।
দেখুন অধীররঞ্জন চৌধুরির সাক্ষাৎকার ভারতীয় অর্থনীতি
COVID-19 প্যানডেমিক এবং লকডাউনের জেরে থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে গতি দিতে মোদি সরকার 20 লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছে । কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণারও কড়া সমালোচনা করে অধীর বলেন, "এই প্যাকেজ ঘোষণা ছাড়া কিছু নয় । লম্বা চওড়া কথা আর বিশাল সব প্রতিশ্রুতি ছড়ানোর জন্য এই সরকারের সুখ্যাতি কম নয় । ২০ লক্ষ কোটি টাকার ঘোষণাকে তাই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই খুদকুঁড়ো বলে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। আজকের কোরোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির হাল ফেরাতে 'প্যাকেজে'র মোড়কে তারা যেটা করেছে, তা আসলে GDP-র মাত্র এক শতাংশ বরাদ্দ ছাড়া কিছু নয় । আগের ঘোষণাগুলিকে ফের একবার বলা ছাড়া প্যাকেজের প্রায় পুরোটাই অন্তঃসারশূন্য । এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে । কংগ্রেস বার বার একটি কথা বলেছিল । প্রতিটি গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এককালীন দশ হাজার টাকা এবং আগামী ছয় মাস 7500 টাকা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল । এটাই একমাত্র সমাধানের পথ । কারণ, সাধারণ মানুষের হাতে যদি টাকা থাকই তবেই চাহিদা তৈরি হবে । আমাদের নেতা সনিয়া গান্ধি এবং রাহুল গান্ধি বার বার এই কথাগুলোই বলেছেন ।"
"কংগ্রেস মনে করে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য কোরোনা ভাইরাস কোনও কারণ নয় । প্যানডেমিকের অনেক আগে থেকেই আমাদের অর্থনীতি ধুঁকছে । কোরোনা ভাইরাসের আগে মাত্র 3.1 বার্ষিক আর্থিক উন্নয়ণের গতিই প্রমাণ করে দেশের অর্থনীতির আসল ছবিটা । কোরোনার আগে বেকারত্বের হার ছিল 8.5 শতাংশ, যা গত 42 বছরের মধ্যে সব থেকে ভয়াবহ । আর এখন কোরোনা ভাইরাস পরবর্তী সময় হারটি পৌঁছেছে 27 শতাংশে । রপ্তানির পরিমান কমছে । শুধুমাত্র কৃষিক্ষেত্রে সামান্য উন্নতি চোখে পড়েছে । আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দুই ভাগে ভাগ করে দেখতে হবে । একটি কোরোনার আগে । অপরটি কোরোনা প্যানডেমিকের আঘাতের পর । তাহলেই সব তথ্য স্পষ্ট হয়ে যাবে, সকলে বুঝতে পারবে আসল ছবিটা ।" দাবি অধীরের ।