কলকাতা, 19 ডিসেম্বর: ইউজিসি'র পূর্ব ভারতীয় দফতর রয়েছে যাবদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেকে ক্যাম্পাসে (UGC regional office at JU Saltlake campus) । কিন্তু, আগামীতে সেই দফতর আর থাকবে না বলেই খবর । কারণ, ইউজিসি কর্তৃপক্ষ তথা কেন্দ্রীয় সরকার যাবতীয় কাজ দিল্লি থেকে পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে । ফলে ইউজিসি'র পূর্ব ভারতীয় দফতরের মতো বাকি দফতরগুলিও (UGC regional offices) অস্তিত্ব হারাবে বলেই মনে করছে শিক্ষামহলের একাংশ । তাদের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ইউজিসি-কে কাজে লাগিয়ে একের পর এক ছাত্র -শিক্ষাবিরোধী নীতি ও পথ অবলম্বন করছে ।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বিরোধীদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে ইউজিসি'র (UGC) পূর্ব ভারতীয় দফতর তুলে দিচ্ছে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে আগামী দিনে ইউজিসি'র কাজ ও পরিষেবায় ব্যাপক হারে প্রভাব পড়তে পারে । যতই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বলা হোক না কেন, প্রয়োজনীয় কাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকবে । শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের কথায়, "আমরা প্রয়োজনে যখন ইউজিসি অফিস যেতাম তখনই সর্বক্ষণ কাউকে পেতাম না । বসে থাকতে হত । এখন অনলাইনে কাজ হওয়ায় যুক্তি দেখিয়ে দফতর বন্ধ করে দেওয়ার মানে শিক্ষা ব্যবস্থা ও বার্ষিক বরাদ্দে কোপ বসানো । আগে যে কোনও কাজে আবেদনের পাশাপাশি মুখ দেখানোর কথা বলা হত । মানে সরাসরি গিয়ে কাজ মিটিয়ে নেওয়া যেত । এখন তা হবে না । দিল্লি যেতে হবে । আপনি প্রয়োজনীয় কাজে আবেদন করবেন, কে কখন সেই আবেদন দেখবে, কী দেখবে না তার কোনও নিশ্চয়তা থাকবে না । সার্বিক ভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলেই মনে করি ।"
আরও পড়ুন:ফের রাজ্যকে স্বীকৃতি কেন্দ্রের, দেশের সেরা প্রকল্পের পুরস্কার পাচ্ছে দুয়ারে সরকার
এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় বলেন বলেন,"যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসের ভিতরে ইউজিসি'র পূর্বাঞ্চলের দফতরটি রয়েছে । তবে আমরা যেমনটা জানতে পেরেছি যে ইউজিসি'র সমস্ত আঞ্চলিক দফতরকে দিল্লিতে সদর কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হবে । সেই মতোই এই ক্যাম্পাসের দফতরও হয়তো তুলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি ইউজিসি'র দফতরের কোনও যোগাযোগ নেই ৷ তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজ থাকলে খুব সহজেই এই দফতরে গিয়ে কাজগুলি মিটিয়ে ফেলা যেত । এছড়াও পাশের রাজ্যগুলি থেকে আধিকারিকরা কলকাতায় এসে কাজ সেরে নিতে পারতেন । তবে এখন কোনও প্রয়োজন হলে সমস্ত ক্ষেত্রেই দিল্লিতে যেতে হবে বা দিল্লির অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ।"
ইউজিসি'র শিক্ষা-বিরোধী বিভিন্ন সার্কুলার জারি ও পূর্বাঞ্চলীয় শাখা তুলে দেওয়ার বিষয়টির প্রতিবাদে অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের তরফে অধ্যাপক মহঃ শাহনওয়াজের নেতৃত্বে চার জনের প্রতিনিধি দল ডেপুটেশন দিয়েছেন সোমবার । অধ্যাপক সংহতি মঞ্চের সম্পাদক মানস জানা বলেন, "এই শাখা বন্ধের প্রতিবাদে আমরা আজ স্মারকলিপি জমা দিলাম । আগামিতে এই সুযোগ থাকবে না । পড়ুয়া, শিক্ষা মহল সমস্যায় পড়বে । আর মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ও অ্যাকাডেমিক ব্যাংক অফ ক্রেডিট চালুর মাধ্যমে জ্ঞানের গভীরতা যেমন কমবে, ড্রপ আউট-এর সম্ভাবনাও বাড়বে । ক্লাস্টার অফ কলেজ চালুর মাধ্যমে প্রান্তিক কলেজগুলি আরও রুগ্ন হবে এবং এগুলির পরিকাঠামো পিপিপি মডেলের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে ৷ একইসঙ্গে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু করে বহু ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষার আঙিনা থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হবে । প্রফেসর অফ প্রাকটিস চালু হলে নির্ধারিত যোগ্যতামান ছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা শিক্ষাদানে যুক্ত হবেন । তাঁরা বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও সিলেবাস তৈরির মতো বিষয়েরও শরিক হওয়ার সুয়োগ পেয়ে যাবেন ।"