কলকাতা, 4 জানুয়ারি:মঞ্চটা ছিলএক । কর্মী থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাও ছিল এক । কিন্তু গণশক্তির 57তম প্রতিষ্ঠা দিবসে সিপিএমের দুই নেতা ধরা দিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে (Two top CPM leaders behaved completely differently)। একজন দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত (Prakash Karat)। অন্যজন পলিটব্যুরোর সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)। রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল সম্পর্কে কোনও কথাই বললেন না কারাত । আর অন্যদিকে, স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বাংলার শাসক দল এবং তাঁর সর্বোচ্চ নেত্রীকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করলেন সেলিম ।
দুই নেতার বক্তব্যে এত পার্থক্য কেন? রাজনৈতিক মহল বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে । বিশেষ করে 2024 সালের লোকসভা (Lok Sabha election 2024) বা তার আগে হতে চলা বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিক থেকে দেখলে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতায় গণশক্তির অনুষ্ঠান যেদিন হচ্ছে তার মাত্র কয়েকদিন আগে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আরএসএসের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন । তাছাড়া অতীতে মমতা নিজেই বহুবার বলেছে, জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সিপিএমের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে তাঁর কোনও সমস্যা নেই । এরকমই নানা কারণে সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের অনুষ্ঠানে দুই নেতার দু'রকম আচরণ অবশ্যই চোখে পড়ার মতো।
দলের কলকাতা জেলা পার্টি অফিস প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে আয়োজিত বিশেষ সভায় 'দক্ষিণপন্থার বিপদ ও তার প্রতিরোধ' বিষয়ে ভাষণ দেন কারাত এবং সেলিম। বক্তব্যের শুরুতেই বিশ্বের দক্ষিণপন্থা, অতি দক্ষিণপন্থা, তার প্রভাব নিয়ে বলতে শুরু করেন কারাত। তারপর দেশের দক্ষিণপন্থা এবং অতি দক্ষিণপন্থার মাধ্যমে বিজেপি আরএসএস কীভাবে কাজ করছে তার ব্যাখ্যা দেন। ইউরোপ, ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশে অতি দক্ষিণপন্থার বাস্তবায়ন কীভাবে হচ্ছে সেটাও তুলে ধরেন। কিন্তু বিজেপি থেকে শুরু করে আরএসএসকে আক্রমণ করলেও নিজের ভাষণে একবারের জন্যও এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের উল্লেখ করেননি তিনি । বরং, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশে কীভাবে হিন্দুত্ববাদের মাধ্যমে বিজেপি ভোট শতাংশ বাড়িয়েছেন তাঁর ব্যাখ্যা করেন সিপিআইএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত।
আরও পড়ুন:আরএসএসকে রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক বিজয়নের
তবে একেবারে ভিন্ন অবস্থানে গিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। রাজ্যে অতি দক্ষিণপন্থা তথা আরএসএস-বিজেপির জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেন। সেলিমের কথায়, "অমিত শাহ রাজ্যে আসার দিনই বীরভূমের নেতাকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেল। এই সময়ে তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হল কী বলতে হবে। একইভাবে নজরুল মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি ধংসাত্মক কিছুই করেননি। তার মানে 10 বছরে নানারকম মিথ্যাচার দিয়ে বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনা ভোলাতে চাইলেন মমতা। এটাই দক্ষিণপন্থা। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন। সমাজের সব অংশের মানুষকে নিয়ে লড়তে হবে।"