কলকাতা, 25 মার্চ : পরিবর্তন নিত্যজীবনের সঙ্গী । তাই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলার পাঠ্যক্রমে বদল আনল সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় । বাংলায় স্নাতকোত্তর কোর্সের পাঠ্যক্রমে স্থান দেওয়া হল আদিবাসী সাহিত্যকে । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ অন্যান্য আধিকারিকদের দাবি, বাংলার পাঠ্যক্রমের মূলস্রোতে এই প্রথম জায়গা পেল আদিবাসী সাহিত্য । সেদিক থেকে বলা যেতে পারে, বাংলা পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাচ্ছে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ।
সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মূলধারার সাহিত্যে বাংলার আদিকাল থেকে এখনও পর্যন্ত সব লেখকদের রচনাই আমরা রাখি । কিন্তু, আদিবাসী সাহিত্যকে কোনও দিন মূলধারার সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি । আমরা আদিবাসী সাহিত্যকে পাঠ্যক্রমের মধ্যে এনেছি । আদিবাসী সাহিত্যের একটা অন্য রকমের বৈশিষ্ট্য আছে । তাঁরা যেখানে বসে, যেভাবে সাহিত্যটা রচনা করছেন সেটা বোধহয় শহরে বসে করা যায় না । এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটাকে বাদ দিয়ে এতদিন পাঠ্যক্রম হত । এবার প্রথম সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে তা যুক্ত করা হচ্ছে ।"
আরও পড়ুন : পড়ুয়াদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতার বিষয়ে শিক্ষা দিতে উদ্যোগী স্বাস্থ্য দফতর
চলতি বছর 18 জানুয়ারি সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়েছে নতুন এই পাঠ্যক্রম । যেখানে জায়গা পেয়েছে আদিবাসী সাহিত্য । পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন নিয়ে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, "আমাদের বাংলা এম.এ কোর্সের আগের যে পাঠ্যক্রম ছিল সেটাকে সংশোধন করে নতুন একট পাঠ্যক্রম আনা হয়েছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলের অনুমোদনে । নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে পাঠ্যক্রমটিকে । সেখানে পরতে পরতে কোর কোর্স এবং ঐচ্ছিক (অপশনাল) কোর্সে আদিবাসী সাহিত্যকে স্থান দেওয়া হয়েছে । স্নাতকোত্তরের প্রতিটি সেমেস্টারের পড়ুয়াদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে আদিবাসী সাহিত্য ।"
বাংলা স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমে আদিবাসী সাহিত্য নিয়ে কী বলছেন উপাচার্য ? পাঠ্যক্রমে আদিবাসী সাহিত্যকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অরুপ কুমার দাসের মস্তিষ্ক প্রসূত । তাঁর কথায়, "ব্যতিক্রমী পথে বাংলা পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে নতুন দিশার দিকে পা বাড়ালো সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় । যেখান থেকে দেড়'শো বছর আগে বিদ্যাসাগর মহাশয় সূচনা করেছিলেন আনন্দদায়ক বাংলা সাহিত্য পাঠের প্রবণতা ও পথচলা । আজ 2021 সালে সেই প্রতিষ্ঠান দেশ ও বিশ্বের সকলকে যেন দিশা দেখানোর মতো করে নিজেদের বাংলা এম.এ-র পাঠ্যক্রমে প্রবর্তন করেছে আদিবাসী ও প্রান্তিক জীবন-ভিত্তিক সাহিত্য। যে সংস্কৃত কলেজে শুধুই হিন্দু, ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়া আর সকলের পঠনের দ্বার ছিল রুদ্ধ । ক্রমে কায়স্থ ও সম্ভ্রান্ত ঘরের হিন্দুর জন্যই কেবল সুযোগ উণ্মুক্ত করা হয়েছিল শত সমালোচনা সত্ত্বেও । সেই সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আজ তাঁদের বাংলার পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলক কোর কোর্স এবং ঐচ্ছিক অপশনাল কোর্সে আদিবাসী ও প্রান্তিক জীবন-এর কথা রেখেছে । সংস্কৃতের ঐতিহ্যকে সঙ্গে রেখে, নতুন যুগকে, নব্যকালের চাহিদাকে আত্মসাৎ করে ছাত্র-ছাত্রীদের আদিবাসী ও প্রান্তিক জীবনের পাঠ দেবে। এমন ভাবনা বিশেষ বৈকি!"