পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Tram World Cafe: ছিল ট্রাম লাইন, এখন সেখানেই সুসজ্জিত ক্যাফে - Tram World now debuts at Tram Cafe

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বদলে গেল ট্রাম ওয়ার্ল্ড ৷ ফুলের টব, রেল ট্র্যাকের উপরে বসানো হয়েছে আরামদায়ক সোফা, টেবিল ও চেয়ার । ট্রাম ওয়ার্ল্ডই এখন হয়ে উঠেছে ট্রাম ক্যাফে (Tram World Cafe) ।

Tram World Cafe
ট্রাম ওয়ার্ল্ড ক্যাফে

By

Published : Dec 27, 2022, 1:31 PM IST

Updated : Dec 28, 2022, 9:32 AM IST

ট্রাম লাইনে গড়ে উঠেছে সুসজ্জিত ক্যাফে, দেখুন ভিডিয়ো

কলকাতা, 27 ডিসেম্বর:হাঁস ছিল সজারু, (ব্যাকরণ মানি না) হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না । সুকুমার রায়ের এই ছড়াটি ছেলেবেলায় আমরা সবাই পড়েছি । তবে এই ছড়ার সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া হবে বালিগঞ্জের কাছে গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপোর ট্রাম ওয়ার্ল্ডের । ট্রাম ওয়ার্ল্ডে ট্রাম লাইনের উপরেই রাখা হয়েছে রজনীগন্ধার ফুলের টব । ট্রাকের উপরে বসানো হয়েছে আরামদায়ক সোফা, টেবিল ও চেয়ার । ট্রাম ওয়ার্ল্ড এখন ট্রাম ক্যাফে (Tram World Cafe) হয়ে উঠেছে । এখানে রয়েছে রেস্তোরাঁ । বালিগঞ্জ ফাঁড়ির এই ট্রাম ডিপোর একাংশকে এভাবেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে ।

বালিগঞ্জের ট্রামের হোল্ডিং চত্বরটি ট্রাম ডিপোতে রূপান্তরিত করা হয় । তারপর আরও এক ধাপ এগিয়ে ডিপোর একাংশের ট্রাম মিউজিয়াম বা ট্রাম ওয়ার্ল্ডে রূপান্তরিত করা হয় । আর বর্তমানে সেই ট্রাম মিউজিয়ামের একাংশকে ট্রাম ক্যাফেতে রূপান্তরিত করা হয়েছে ।

ট্রাম ওয়ার্ল্ডের ছাউনির বাইরের অংশে যে দুটি পুরনো ট্রাম রাখা ছিল সে দুটিকে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোতে পাঠানোর পর ওই অংশটি খালি করা হয় । আর তারপরেই ওই অংশটিকে ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ক্যাফেটি ।

সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থাকে ট্রাম ওয়ার্ল্ডের একটি পুরনো ট্রাম সমেত ছাউনির বাইরের খোলা জায়গাটি লিজ দেওয়া হয়েছে । এই ট্রামটি কিছুদিন আগে পর্যন্ত মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হত । শহরের মানুষকে আবারও ট্রাম সম্মন্ধে সচেতন করতে এবং পুরনো ট্রামগুলিকে বাতিল না করে সেগুলিকে নতুন রূপ দেওয়াই ছিল এই ট্রাম ওয়ার্ল্ড মূল কারণ । শহরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে চলছে এমন বহু পুরনো ছবি লাগিয়ে দস্তুর মত একটি গ্যালারি করা হয় । ট্রাম কোম্পানির সবচেয়ে পুরনো ট্রামটিও শোভা পাচ্ছে এখানে । গোড়ার দিকে টিকিট কেটে মানুষজন এই ট্রাম ওয়ার্ল্ড দেখতে এলেও পরের দিকে শহরবাসী এই মিউজিয়াম নিয়ে উৎসাহ হারায় । ট্রাম ওয়ার্ল্ডের এক কর্মী জানান, ট্রাম ওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে তার জায়গায় এখন ট্রাম ওয়ার্ল্ড ক্যাফে খুলে গিয়েছে বলে এখন আর এখানে ঢুকতে হলে টিকিট কাটতে হয় না ।

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, সেভাবে প্রচার না হওয়ায় শহরবাসী ট্রাম ওয়ার্ল্ড নিয়ে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে সেটা জানতেই পারেননি । ঠিক একইভাবে অধুনা প্রজন্মকে বিলুপ্তপ্রায় ট্রামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে বিভিন্ন সময় ট্রাম নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছে । ট্রাম রেস্তোরাঁ, ট্রাম লাইব্রেরি, ইকো পার্কের স্ট্রিট ফুড ট্রাম রেস্তোরাঁ, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়নি বলে অচিরেই বন্ধ সেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ।

আরও পড়ুন:রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কলকাতার ট্রামও দৌড়বে, মানেন জার্মান গবেষক মার্টিন স্নাইডার

শহর কলকাতায় আগে যে বহরে ট্রাম চলত তা আর এখন চলে না । আমফানের আগে বেশ কয়েকটি রুট চালু থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র কয়েকটি । তাই যেহেতু ট্রাম পরিষেবা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে এবং বেশ কয়েকটি ডিপো বন্ধ হয়ে রয়েছে তাই ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির বাড়তি জমি ফেলে না রেখে সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আয় করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে । ঠিক যেমনটা হয়েছে রেলের ক্ষেত্রে ।

তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ ট্রাম গবেষক ও ট্রাম প্রেমী ডক্টর দেবাশিস ভট্টাচার্য যিনি ক্যালকাটা ট্রাউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত । তিনি বলেন, "রেল তার বাড়তি জমি ভাড়া দিলেও পরিষেবা বন্ধ করে না । একবার ট্রাম ওয়ার্ল্ড করা হল তারপর সেখানেই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ট্রাম ক্যাফে করা হল । এর থেকে স্পষ্ট যে আসলে ট্রাম বা ট্রামের জমি নিয়ে কী করতে চায় সেই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কারও সম্যক ধারণাই নেই । আর পরিবহণ বিভাগের ট্রাম চালাবার সদিচ্ছা থাকলে তো এই ডিপোটিকে ট্রাম ওয়ার্ল্ড বা ক্যাফেতে রূপান্তরিত করার করার কোনও প্রয়োজনই পড়ত না । আগে এখানে 65টি ট্রাম থাকতো । যার মধ্যে প্রতিদিন 55টি ট্রাম পরিষেবা দিত । বর্তমানে সারাদিনে চারটে বড় জোর ছয়টি ট্রাম বেরতো এই ডিপো থেকে । তাই এত জায়গার আর প্রয়োজনও নেই ।"

গত এক মাস হল চালু হয়েছে এই ট্রাম ক্যাফে । যদিও প্রথমে এখানে হুক্কা বার এবং পানশালা করার কথা হয়েছিল । তবে সম্প্রতি হুক্কা বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায় । অন্যদিকে, ট্রাম ওয়ার্ল্ডের খুব কাছে একটি স্কুল ও একটি মসজিদ আছে বলে পানশালার অনুমতিও মেলেনি ।

ক্যালকাটা ট্রাম উইসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত আর এক ট্রাম প্রেমী রুদ্রনীল রায়চৌধুরী বলেন, "আগে এই ডিপোতে 12টি লুপ লাইন বা ট্র্যাক ছিল । পরে ডিপোতেই সিটিসি বাসের জন্য ব্যবহারশুরু হল । তিন থেকে চারটি ট্র্যাকই বাসের চার্জিং-এর জন্য দিয়ে দেওয়া হয় তখন । বর্তমানে চারটি লাইন দিয়ে ট্রাম যাতায়াত করে । তবে বেশিরভাগ লাইন পড়ে গিয়েছে ট্রাম ওয়ার্ল্ডের অংশেই । মোদ্দা কথা যেটা দাঁড়ালো যে একটি চালু ডিপোর চালু লাইনগুলি মিউজিয়াম বা রেস্তোরাঁ চালাবার জন্য দিয়ে দেওয়া হল । এই অংশ ট্রাম চালাবার জন্য আর ব্যবহার যোগ্য থাকছে না । ভবিষ্যতেও যে ওই অংশ উপর দিয়ে আবার ট্রাম চালানো যেতে পারে তারও কোনও সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না । কারণ ওখানে পিট লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । লাইনগুলি বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।"

আরও পড়ুন:কলকাতায় বিপন্ন পরিবেশবান্ধব ট্রাম, গণপরিবহণকে ফেরাতে জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে

গত বছর ডিসেম্বর মাসেই ঘটা করে যে ট্রাম ওয়ার্ল্ড শুরু হয়েছিল তার বর্ষপূর্তি হতে না হতেই সেখানেই গড়ে উঠল ট্রাম ক্যাফে ৷ তাই এই ট্রাম ক্যাফের ভবিষৎ কী বর্ণময় নাকি আবার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও অন্য রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে ট্রাম ওয়ার্ল্ড? এই প্রশ্নের উত্তর পেতেও ডব্লুউবিটিসি ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের এমডি রাজেনবীর সিং কাপুরকে প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি ৷ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও উত্তর দেননি । যোগাযোগ করা যায়নি ডব্লুউবিটিসি ডেপুটি এমডি কৌশিক সরকারের সঙ্গেও ।

Last Updated : Dec 28, 2022, 9:32 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details