কলকাতা, 31 মার্চ : জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জ্বালা থেকে রেহাই পেতেই বিকল্প খুঁজতে এবার শহরে চলবে ট্রলি বাস । বিদেশের ধাঁচে এখানেও দেখা যাবে ট্রলি বাস (Trackless trolleys will run in Kolkata) । ট্রাম ট্র্যাকের ওভারহেডের তার থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে চলেবে এই ইলেকট্রিক বাস । অবশ্য় ট্রলি বাস চালানোর পরিকল্পনা যে আসলে ট্রামকে একেবারে লাটে তুলে দেওয়ার জন্য তেমনটা মনে করছেন শহরের ট্রাম গবেষক ও প্রেমীরা ।
ট্রলি বাসের অপর নাম ট্র্যাকলেস ট্রলি । কারণ ট্রামের তার থেকে বিদ্যুৎ নিলেও বাসটি চালাতে নির্দিষ্ট কোনও ট্র্য়াকের প্রয়োজন পড়ে না কারণ এতে লাগানো থাকে রবারের টায়ার । সম্প্রতি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই কথা জানিয়েছেন । প্রথমে ইউক্রেন থেকে আনার কথা ছিল বাসটি । তবে যুদ্ধের জন্য সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয় । এবার এই বাসটি আনা হচ্ছে পোল্যান্ড থেকে । শহরের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাম ট্র্যাক পাতা রয়েছে যার বেশিরভাগই এখন আর ব্যবহার হয় না । কোনও ব্রিজের ভার কমাতে, আবার কখনও ট্রাম যানজটের সৃষ্টি করে বিভিন্ন কারণে তাই আজ শহরের বেশিরভাগ ট্রাম রুটই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।
এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ দফতর যে ট্রলি বাস চালাবার পরিকল্পনা নিয়েছে তা যে আসলে ট্রামকে একেবারে লাটে তুলে দেওয়ার জন্য তেমনটাই মনে করছেন শহরের ট্রাম গবেষকরা ।
কলকাতার রাস্তায় চালানোর জন্য পোল্যান্ড থেকে আনা হচ্ছে এই ট্রলি বাসগুলি আরও পড়ুন :Tram restaurant at Eco park: ট্রামেই রেস্তোরাঁ, ইকো পার্কে জিয়া নস্টাল !
ট্রামপ্রেমী ও গবেষক ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, "আসলে এটা আর কিছুই নয় সাধারণ মানুষকে একটা ভুলানো বা চমক দেওয়ার জন্য যে বাকি সভ্য দেশগুলির মত আমাদের শহরেও চলবে ট্রলিবাস । এই বাস কোনওদিনই চলবে না । পরিবহণ দফতরের কাছে যখন বিকল্প উপায় রয়েছে যেটা সবথেকে ভালো দূষণমুক্ত তখন সেটার দিকে রাজ্য সরকার ফিরেও তাকাচ্ছে না । পরিবহণ দফতর জ্বালানীর বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ইলেকট্রিক ই-বাস বা ইলেকট্রিক যানচলাচলের কথা বলছে, তাহলে তার প্রতি এত অনীহা কেন ।"
তিনি আরও বলেন, "1970 সালে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেডের থেকে একটি ট্রলিবাস শহরে নিয়ে আসে ৷ তারাতলা থেকে বেহালা ট্রাম ডিপো পর্যন্ত সফলভাবে ট্রায়াল রানও হয় । তারপর থেকে বাসটিকে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোতে রাখা হয় । তারপর বাসটি ঝড়ের জলে নষ্ট হয়ে গেলে সেটিকে কাটা দরে বিক্রি করে দেওয়া হয় ।"
শহরের আর এক ট্রামপ্রেমী স্বর্ণাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, "শহরে ট্রলি বাস চলবে । এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই । তবে এখানে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে । তা হল ট্রলিবাস চালানো যেমন অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ তেমনই এই বাস চলতে অনেক বেশি বিদ্যুৎতের প্রয়োজন পড়ে । এছাড়া ট্রলিবাসের আয়ুও অনেক কম । অন্যদিকে, 50 থেকে 60 বছরের পুরানো ট্রাম এখনও পুরোদস্তুর চলছে । তাই আমাদের শহরে যখন ট্রামের পরিকাঠামো রয়েছে তাহলে ট্রামের ধাঁচেই ট্রলিবাস কেন আনা হচ্ছে ?"