কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: থানা মানেই এমন একটা জায়গা, যেখানে দিনরাত খুন-খারাপি, চুরি-ডাকাতির আসামীদের নিয়ে কারবার ৷ আবার কথায় আছে, বাঘে ছুঁলে 18 ঘা আর পুলিশে ছুঁলে নাকি 36 ৷ এ সব কারণেই থানা-পুলিশকে একটু এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন অনেকে ৷ তবে থানাও যে মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ মিলবে গার্ডেনরিচ থানায় গেলে ৷ পুরনো কলকাতার সাক্ষী 165 বছরের এই থানাই এখন যেন মিউজিয়াম ৷ যেখানে ধরা দেয় অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস ৷ থানায় ঢুকলে লখনউই ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আবহে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলার তৎকালীন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের সাম্রাজ্য ৷ সৌজন্যে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (বন্দর) জাফর আজমল কিদওয়াই ৷
গার্ডেনরিচ মেটিয়াবুরুজ এলাকার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল বাংলার তৎকালীন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের ৷ দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই ঐতিহ্যই থানায় স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন ডিসি পোর্ট জাফর আজমল কিদওয়াই ৷ যেই ভাবা, সেই কাজ ৷ এই এলাকার সঙ্গে জড়িত ইতিহাসের দলিল তুলে ধরে থানাকেই মিউজিয়ামে পরিণত করলেন ইতিহাসের এই ছাত্র ৷
ইতিহাসের পাতা খুললে জানা যায়, নবাব ওয়াজেদ আলি লখনউয়ে শেষ জীবন না কাটিয়ে কলকাতার মেটিয়াবুরুজ গার্ডেনরিচ চত্বরে তাঁর শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন । কিন্তু নবাবের আমলে মেটিয়াবুরুজে কলকাতা পুলিশের প্রবেশাধিকার ছিল না । নবাব মেটিয়াবুরুজে এসে একটি মাটির কেল্লা বানিয়েছিলেন, যা ছিল মেটিয়াবুরুজে এবং গার্ডেনরিচ চত্বরে । এই শক্তপোক্ত মাটির কেল্লা থেকেই নজরদারি চলত ইংরেজদের গতিবিধির উপর ।
লখনউতে নিজের রাজত্ব হারিয়ে জীবনের শেষ 30টা বছর নবাব কাটিয়েছিলেন গার্ডেনরিচ মেটিয়াবুরুজ চত্বরে । সেই সময় সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালীন ইংরেজ বাহিনীর নজরবন্দি হয়ে গেলেন নবাব ৷ ফলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল ফোর্ট উইলিয়ামে । সিপাহী বিদ্রোহ থমকে যাওয়ার পর প্রায় আট মাস বাদে নির্বাসন থেকে মুক্তি দেওয়া হয় নবাব ওয়াজেদ আলি শাহকে । এরপরেই তিনি মেটিয়াবুরুজের উপর গড়ে তুললেন ছোটখাটো লখনউ সাম্রাজ্য ।