পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মহানগরের বুকে 165 বছরের পুরনো থানা যেন নবাবী মিউজিয়াম, উপভোগ করছে মানুষ - কলকাতা পুলিশ

Garden Reach Police Station মহানগরের বুকে 165 বছরের পুরনো থানা গার্ডেনরিচ ৷ কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (বন্দর) জাফর আজমল কিদওয়াইয়ের সৌজন্যে এই থানাই যেন আজ নবাবী মিউজিয়াম ৷ ইতিহাসের দলিল তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে মানুষ ৷

Garden Reach Police Station
165 বছরের পুরনো থানা গার্ডেনরিচ আজ মিউজিয়াম

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 18, 2023, 7:52 PM IST

165 বছরের পুরনো থানা গার্ডেনরিচ আজ মিউজিয়াম

কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: থানা মানেই এমন একটা জায়গা, যেখানে দিনরাত খুন-খারাপি, চুরি-ডাকাতির আসামীদের নিয়ে কারবার ৷ আবার কথায় আছে, বাঘে ছুঁলে 18 ঘা আর পুলিশে ছুঁলে নাকি 36 ৷ এ সব কারণেই থানা-পুলিশকে একটু এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করেন অনেকে ৷ তবে থানাও যে মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ মিলবে গার্ডেনরিচ থানায় গেলে ৷ পুরনো কলকাতার সাক্ষী 165 বছরের এই থানাই এখন যেন মিউজিয়াম ৷ যেখানে ধরা দেয় অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস ৷ থানায় ঢুকলে লখনউই ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আবহে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলার তৎকালীন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের সাম্রাজ্য ৷ সৌজন্যে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (বন্দর) জাফর আজমল কিদওয়াই ৷

গার্ডেনরিচ মেটিয়াবুরুজ এলাকার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল বাংলার তৎকালীন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের ৷ দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই ঐতিহ্যই থানায় স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন ডিসি পোর্ট জাফর আজমল কিদওয়াই ৷ যেই ভাবা, সেই কাজ ৷ এই এলাকার সঙ্গে জড়িত ইতিহাসের দলিল তুলে ধরে থানাকেই মিউজিয়ামে পরিণত করলেন ইতিহাসের এই ছাত্র ৷

ইতিহাসের পাতা খুললে জানা যায়, নবাব ওয়াজেদ আলি লখনউয়ে শেষ জীবন না কাটিয়ে কলকাতার মেটিয়াবুরুজ গার্ডেনরিচ চত্বরে তাঁর শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন । কিন্তু নবাবের আমলে মেটিয়াবুরুজে কলকাতা পুলিশের প্রবেশাধিকার ছিল না । নবাব মেটিয়াবুরুজে এসে একটি মাটির কেল্লা বানিয়েছিলেন, যা ছিল মেটিয়াবুরুজে এবং গার্ডেনরিচ চত্বরে । এই শক্তপোক্ত মাটির কেল্লা থেকেই নজরদারি চলত ইংরেজদের গতিবিধির উপর ।

লখনউতে নিজের রাজত্ব হারিয়ে জীবনের শেষ 30টা বছর নবাব কাটিয়েছিলেন গার্ডেনরিচ মেটিয়াবুরুজ চত্বরে । সেই সময় সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালীন ইংরেজ বাহিনীর নজরবন্দি হয়ে গেলেন নবাব ৷ ফলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল ফোর্ট উইলিয়ামে । সিপাহী বিদ্রোহ থমকে যাওয়ার পর প্রায় আট মাস বাদে নির্বাসন থেকে মুক্তি দেওয়া হয় নবাব ওয়াজেদ আলি শাহকে । এরপরেই তিনি মেটিয়াবুরুজের উপর গড়ে তুললেন ছোটখাটো লখনউ সাম্রাজ্য ।

নবাবের সৌজন্যেই কলকাতায় বিশেষ সমাদৃত হল কত্থক নৃত্যের লখনউ ঘরানা ৷ তিনি নিজে নৃত্যের এই শৈলী শিখেছিলেন ৷ তাঁর আমন্ত্রণে কলকাতায় এসে বিশেষ সম্মান পান লখনউয়ের কত্থক শিল্পীরা ৷ উল্লেখ্য, লখনউ ঘরানার কিংবদন্তি কত্থক শিল্পী বিরজু মহারাজকে ওয়াজেদ আলি শাহ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল ৷ নবাবের লখনউ ঘরানার প্রতি এই পৃষ্ঠপোষকতার নিদর্শন ও ঐতিহ্য তুলে ধরতেই গার্ডেনরিচ থানার আবহে অবিরাম বেজে চলে লখনউ ঘরানার সঙ্গীত ৷ তৎকালীন সময়ে গার্ডেনরিচ চত্বরের নাম ছিল মুচি খোলা ৷ সেখানেই একটি বিশাল আকৃতির বাড়ি নির্মাণ করলেন নবাব ওয়াজেদ আলি ৷ যার নাম ছিল মহারাজা অফ বর্ধমান, বর্তমানে যেটি বিএনআর হাউস নামে খ্যাত ।

এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি পোর্ট জাফর আজমল ইটিভি ভারতকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন, "গার্ডেনরিচের সঙ্গে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ এবং সেই সময়ে লখনউ ঘরানার যে কালচার বা সম্পর্ক ছিল, তাকে ফের একবার তুলে ধরা হয়েছে । ফলে এটি থানা এবং তার সঙ্গে একটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে । যা ইতিহাসের গবেষক থেকে শুরু করে ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের বেশ উৎসাহিত করছে । অর্থাৎ এই থানায় অনেকেই নিজের নিজের অভিযোগ নিয়ে আসছেন, আবার অনেকে আসছেন নিজের ইতিহাসের জ্ঞান সঞ্চার করতে ।"

থানার বাইরে রয়েছে একাধিক সোফা ৷ সেখানে বসেই সময় কাটে নবীন থেকে প্রবীণদের । অনেকেই আসেন ইতিহাসের খোঁজে ৷ দেওয়ালে রয়েছে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের সঙ্গে মেটিয়াবুরুজ খিদিরপুরের সুসম্পর্কের সবিস্তার বর্ণনা । আর দিনরাত বেজে চলেছে লখনউয়ের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ৷ এই থানাই এখন প্রাচীন কলকাতার এক টুকরো ইতিহাসের পীঠস্থান ৷

আরও পড়ুন:

  1. বড়তলা থানায় ফুটে উঠেছে উত্তর কলকাতা ইতিহাস
  2. সংসারের পাশাপাশি দক্ষ হাতে থানা সামলাচ্ছেন শৃঙ্খলা
  3. এআই বাড়াচ্ছে অপরাধের আশঙ্কা, তদন্ত হবে কীভাবে? বিশেষ প্রশিক্ষণ লালবাজারের

ABOUT THE AUTHOR

...view details