কলকাতা, 24 ডিসেম্বর: ব্রিগেডের ময়দানে লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ। আর তাকে সামনে রেখেই রবিবাসরীয় বিকেলে চড়ল রাজনীতির পারদ, যদিও এবার লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের আসরের সঙ্গে সরাসরি কোনও রাজনীতির যোগ নেই। কিন্তু এই আয়োজনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতাদের আর তাই একে সামনে রেখে রাজনৈতিক তরজা সমানে চলেছে ৷
সকালবেলায় প্রথম রাজনৈতিক তরজার বিষয় অবশ্যই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের একটি বক্তব্য। এদিন সকাল থেকেই তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের মুখে উঠে আসে বিবেকানন্দের সেই বক্তব্য যেখানে তিনি জানিয়েছেন, 'গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালো।' একে পালটা কটাক্ষ করতে গিয়েই সুকান্ত মজুমদার বলেন, "গীতা পাঠের তুলনায় ফুটবল খেলা ভালো যারা বলছেন তারা বামপন্থী প্রোডাক্ট।" তিনি আরও বলেন, "ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নন, তিনি জীবনে চলতে গেলে কোন পথে চলতে হবে তার ধারণা দিয়ে গিয়েছেন।" এদিন গীতার বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর কথা ধার করে বলি, বিশ্বকে এর থেকে বড় কিছু আর দেওয়ার নেই ৷ বিশ্বেরও এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার নেই। বহুদিন ধরে বাংলা এই সনাতন সংস্কৃতির ধারক বাহক ছিল। মাঝে কিছুদিন বাংলা ভক্তি আন্দোলনের থেকে ডিরেলড হয়েছিল বামপন্থীদের জন্য। অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী, এখন যারা বলছেন গীতা পাঠের থেকে ফুটবল খেলা ভালো। তারা বামপন্থী প্রোডাক্ট। আগামী দিনে বাংলা সঠিক পথে যাবে।"
এদিন সুকান্ত মজুমদারের এই বক্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। উলটে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আসলে এসবের মাধ্যমে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিবেকানন্দকে অপমান করেছেন। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "সুকান্ত মজুমদার স্বামী বিবেকানন্দকে কার্যত অপমান করছেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের বক্তব্যের মূল স্পিরিট জানেন না। বক্তব্যের অভিমুখ তিনি বোঝেন না। স্বামী বিবেকানন্দ গীতাপাঠ এবং ফুটবল খেলার যে কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে গীতাকে অসম্মানের প্রশ্নই নেই। কেন বলেছিলেন এটা যদি বুঝতেন তাহলে একথা বলতেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি।" অন্যদিকে, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, "বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হোক বা রাজ্য নেতৃত্ব তাঁরা বারবার বাংলার মনীষীদের প্রতি অশ্রদ্ধা করেন। তারা ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের প্রতি কোনওরকমের ভক্তি, শ্রদ্ধা করতে আমরা দেখিনি। কবিগুরুর সম্পর্কে যা বলেছেন এবং অন্য মনীষীদের সম্পর্কে যা বলছেন এটা প্রমাণ করে বিজেপি মনীষীদের সম্মান করে না।। লক্ষ কণ্ঠের গীতাপাঠের মঞ্চে যেভাবে সুকান্ত মজুমদার স্বামীজীকে অপমান করলেন বাংলার মানুষ সেটা মেনে নেবেন না। আগামী 24 ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।"
এদিকে এদিন জমায়েত নিয়েও চলছে তরজা, বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এদিন ব্রিগেডে এক লক্ষের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, এক লক্ষ মানুষ গীতা পাঠ করে রেকর্ড তৈরি করেছে ব্রিগেডে। এর পালটা তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, কাঙ্খিত ভিড় হয়নি। ভিড় যে হবে না সেটা বুঝতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলেও শেষ মুহূর্তে আসেননি। এই কর্মসূচির জন্য শ্রদ্ধানন্দ পার্ক ভাড়া নিলেই চলত ৷ কেন ব্রিগেড ভাড়া নিলেন বুঝতে পারছেন না, বলছেন কুণাল ঘোষ। প্রসঙ্গত বিজেপি সূত্রে খবর, এদিন ব্রিগেডে মোট কুড়িটি ব্লক ছিল প্রত্যেক ব্লকে পাঁচ হাজার করে প্রায় এক লক্ষ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল বলে দাবি করছেন তারা। মোটের উপর উপরে এদিন লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের আসর থেকে আয়োজকরা দাবি করেছেন তিন তিনটে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে । তবে একে নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও কম হচ্ছে না ৷