কলকাতা, 10 এপ্রিল: তৃণমূলের শীর্ষস্তরের কোন্দল আরও গুরুতর আকার নিচ্ছে ৷ রবিবার দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ফেসবুক বার্তার পর অন্তত এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে শনিবার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সতীর্থ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কুণালকে বিঁধেছিলেন ফিরহাদ হাকিম ৷ পার্থকে নিয়ে কুণালের মন্তব্য প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেছিলেন, "কুণাল মন্ত্রিসভার কেউ নয় ৷" তার 24 ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুক ভিডিয়ো বার্তায় এর পাল্টা দিলেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh criticises Firhad Hakim) ৷ বললেন, "আমি মন্ত্রী নই । আর সে কথা আমাকে মনে করাতে হবে না । মন্ত্রী নই বলেই বলেছিলাম, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফরের তৎকালীন মন্ত্রী জবাব দিতে পারবেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ঈশ্বর জানেন আমি কখনওই মন্ত্রী হতে চাইনি । আমি ভুল করলে যদি কোনও ভাড়াটে সেনাকে সাফাই দিতে নামাতে হয়, তার থেকে থুতু ফেলে ডুবে মরা ভাল । "
আরও পড়ুন : কুণাল মন্ত্রিসভার কেউ নয়, এসএসসি দুর্নীতি প্রসঙ্গে পার্থর পাশে ফিরহাদ
উল্লেখ্য, তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ শুক্রবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই বলতে পারবেন । এটা প্রশাসনিক বিষয়, দলের বিষয় নয় ৷ পার্থদা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, এবিষয়ে কারও কোনও প্রশ্ন থাকলে তাঁর কাছে গেলে তিনি বলতে পারবেন ৷" রবিবারের ভিডিয়ো বার্তায় অনেকটাই আবেগঘন দেখিয়েছে কুণাল ঘোষকে ৷ বিশেষ করে ফিরহাদ হাকিমের দেওয়া খোঁচা তিনি যে ভালভাবে নেননি এই ভিডিয়ো থেকেই তা পরিষ্কার । এদিন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি । তাঁর অভিযোগ, মিডিয়ার ব্যাখ্যা শুনে পাল্টা মন্তব্য করা হচ্ছে দলের মধ্যে থেকে ।
আরও পড়ুন : ব্রাত্যর জমানায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম হয়নি, পার্থকে ইঙ্গিত কুণালের
কুণাল ঘোষ এদিন নিজের পক্ষে সাফাই দিতে গিয়ে যে কথাগুলি বলেছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ৷ তাঁর কথায়, "এটা ঠিক আমি তো মন্ত্রী নই । সরকারেরও কেউ নই । সে কারণেই তো আমি বলছি, প্রশাসনিক বিষয়ে ওটা । তা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না । পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের মহাসচিব এবং তৎকালীন মন্ত্রীও ছিলেন, এ বিষয়ে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ভাল করে বলতে পারবেন । এতে দোষের কি আছে? আমার জীবনে যে স্বর্গ-নরক আমি দেখেছি, সেক্ষেত্রে গরম আর নরম শব্দগুলো আমার থেকে দূরে রাখাই ভাল । আমি মন্ত্রিসভার লোক নই । যাঁরা জানেন না তাদের বলে রাখি, ঈশ্বর সাক্ষী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাক্ষী, আমার নেত্রীকে আমি বলেছি আপনার নেতৃত্বে এবং অভিষেকের সেনাপতিত্বে দল করতে ভাল লাগছে । কিন্তু কোনওরকম নির্বাচনে কোনও সাংসদ, কোনও বিধায়ক কিংবা কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হিসেবে আমার নাম বিবেচনা করবেন না । আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত নই । সিবিআই-ইডির বিরুদ্ধে লড়াই আমি আমার মত করে সামলেছি । পাশাপাশি দলের কাজ করেছি । কেউ যেন আমাকে মনে করিয়ে না দেন যে আমি মন্ত্রী নই ।" এরপরই বিস্ফোরক কুণালের সংযোজন, "মন্ত্রিত্ব নিয়ে আমার হ্যাংলামি নেই । মন্ত্রী হতে না পারলে যাঁদের জীবন ব্যর্থ এসব ক্রাইটেরিয়া তাঁদের জন্য । আমার জীবনে ঈশ্বর যে স্বর্গ-নরক দেখিয়েছেন আমি এসবের ঊর্ব্ধে আছি ।"