পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Abhishek's Role in SSC Job Scam: নিয়োগ দুর্নীতিতে চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধানে অভিষেক-উদ্যোগ, ঝুঁকি নয়তো ? - অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

এসএসসি দুর্নীতি এখন শুধু রাজ্যের খবর নয়, দেশের শিরোনামে ৷ কোটি কোটি টাকা উদ্ধারে চোখ কপালে উঠেছে রাজ্যবাসীর ৷ কী হবে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের ? রাজ্য সরকারের কোনও পদে না থেকেও কার্যত তৃণমূলকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পরিণতি কী (Abhishek's Role in SSC Job Scam) ?

Abhishek Banerjee role over SSC Recruitment Scam
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

By

Published : Jul 31, 2022, 2:48 PM IST

Updated : Jul 31, 2022, 3:27 PM IST

কলকাতা, 31 জুলাই: এই মুহূর্তে রাজ্য তথা দেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলা । এই ঘটনায় 23 জুলাই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু'টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় 50 কোটি টাকা উদ্ধার করেছে । নজরে রয়েছে তাঁদের নামে থাকা একাধিক সম্পত্তি, যা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ।

এই বিতর্কে স্বভাবতই রাজ্যপ্রশাসনকে তুলোধনা করেছে বিরোধী দলগুলি ৷ কোটি কোটি টাকার বান্ডিল নিয়ে জনমানসেও প্রশ্ন জেগেছে ৷ অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে ৷ মন্ত্রিত্ব থেকেও অপসারিত হয়েছেন ৷ এই সময় শাসক দলের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC Leader Abhishek Banerjee role over SSC Recruitment Scam solution, risk or gain?) ৷

28 জুলাই, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন ৷ সেই অনুযায়ী পরের দিন 29 জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক হয় অভিষেক এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ৷ প্রসঙ্গত, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে নিজে থেকেই আন্দোলনকারীদের ফোন করেছিলেন অভিষেক ৷ এই বৈঠক সফল হয়েছে বলে দাবি করেন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের নেতা শহিদুল্লা ৷ ছিলেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও (Bratya Basu) ৷

এখানে প্রশ্ন, অভিষেক এই সমস্যার সমাধান করতে সফল হন, তাহলে রাজ্য তথা তৃণমূল কংগ্রেসের গা থেকে শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির দাগ ঘুচলেও ঘুচতে পারে ৷ কিন্তু যদি তিনি ব্যর্থ হন ? তাহলে সেই দায় তাঁর কাঁধে চেপে বসবে না তো ? বাস্তবিক এটা যে, তিনি কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও পদে নেই । আগ বাড়িয়ে তাঁর এই পদক্ষেপ উল্টে তাঁকে কোনও বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবে না তো !

আরও পড়ুন: অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক সফল, দাবি আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের

ইতিমধ্যে শুক্রবার এসএসসির আন্দোলনকারী চাকিরপ্রার্থীদের বৈঠকের পর তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসের সামনে বিক্ষোভে বসেছিলেন 2014 সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষা উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা ৷ তাঁদের অভিযোগ, 2020-র নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ সময় পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ হয়নি ৷ সেই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কিন্তু 'বৈষম্যমূলক আচরণের' অভিযোগ উঠেছে অভিষেকের বিরুদ্ধে ৷ শান্তিপূর্ণ ধরনায় বসলেও জায়গাটি সরকারের নয়, তাই সেখানে বসা যাবে না, জানানো হয় বিক্ষোভরত চাকরিপ্রার্থীদের ৷ শুক্রবার দুপুর থেকে সারারাত কাটিয়ে শনিবার সকালে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ সেই অবস্থাতে প্রায় 60 জনকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে 7-8টি প্রিজন ভ্য়ানে তুলে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ ৷ তাঁদের সঙ্গে দেখা তো করেনইনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদের উদ্দেশ্যে নিজে কোনও বার্তাও দেননি, জানান চাকরিপ্রার্থীরা ৷ যদিও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ তাতে রাজি হননি টেট প্রার্থীরা ৷ আর তার পরিণতি, পুলিশের গাড়িতে ঠাঁই পাওয়া ৷

তাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সমাধানে অভিষেক সফল হবেন কি ? এর জবাবে ঘাসফুল নেতা বৈষ্ণব চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন জনপ্রতিনিধি তথা সাংসদ । তিনি যদি সরকারের সঙ্গে মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের এই সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগী হন, সেটাকে নেতিবাচক মানসিকতায় দেখার কী আছে ? কারা এভাবে দেখছেন ? যাঁরা এই জটটাকে জিইয়ে রাখতে চাইছেন, তাঁরাই এসব প্রশ্ন তুলছেন । আদতে সমস্যা না মিটলে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ মিটবে, লাভ হবে ।

আরও পড়ুন: 'পুলিশকে বলুন আমাদের বুকে গুলি করতে', প্রিজন ভ্যানের জানলা দিয়ে 'আবেদন' টেট প্রার্থীদের

কী বলছেন রাজ্যে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ?

এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, অভিষেকের এই পদক্ষেপ তাঁকে রাজ্য-রাজনীতিতে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজা গোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপকে আর যাই হোক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলা যাবে না । বরং একে আমি 'ব্যাড পলিটিকাল স্ট্র্যাটেজি' বলব । কারণ তাঁর বয়স অল্প । অভিজ্ঞতাও কম । এই চাকরির সমস্যা এত সহজে মেটবার নয় । তিনি একজনকে মাত্র চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন । কিন্তু এত সহজে সবার চাকরি দিয়ে দেবেন, তা হয়ত সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে অভিষেক চাইলে তাঁর হয়ে প্রতিনিধি পাঠাতে পারতেন । পাঠাতে পারতেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে । তারপর ব্যর্থ হলে তিনি নিজে হস্তক্ষেপ করতেন । এতে সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কিছুটা সময় হাতে পেতেন । কিন্তু বর্তমানে তিনি যা করছেন, তাতে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া প্রায় অসম্ভব । কাজেই সেক্ষেত্রে তার জন্য এটা বড় ঝুঁকি হয়ে গেল বলে আমার মনে হয় ।"

একইভাবে অপর শিক্ষাবিদ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখাতেই হয়তো তিনি এই হস্তক্ষেপ করেছেন । বাস্তবে তিনি চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা না করতে পারলে, উলটে তাঁকেই আবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে । আর তিনি যদি চাকরি দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে অন্য বঞ্চিত প্রার্থীরা এসে তাঁর হস্তক্ষেপ চাইবেন । কাজেই এটা অভিষেকের জন্য উভয় সংকট বলা চলে ।"

আরও পড়ুন: তৃণমূলের সব পদ থেকে অপসারিত পার্থ, ঘোষণা অভিষেকের

Last Updated : Jul 31, 2022, 3:27 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details