কলকাতা, 9 নভেম্বর : রাজ্যে 25 থেকে 30 লাখ পরিযায়ী শ্রমিক । অন্তত লকডাউনের শেষে বাড়ি ফেরার নিরিখে এমনই একটা হিসেবে পেয়েছে রাজ্য সরকার । এই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ । তাঁরা বেশকিছু জেলায় আগামী বিধানসভা ভোটে হয়ে উঠতে পারেন নির্ণায়ক । বিহারের নির্বাচনের সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, পরিযায়ী শ্রমিকরা পাশে থেকেছেন তেজস্বী যাদবের । তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন NDA জোট থেকে । পরিযায়ী শ্রমিকদের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুরোমাত্রায় রয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূল । তাই তেজস্বী যাদবের মতোই পরিযায়ী শ্রমিক বিক্ষোভের ফসল তৃণমূল ঘরে তুলতে পারে বলে মনে করছে । আর সেই কারণেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম যাতে ভোটার তালিকায় থাকে সেই বিষয়ে জোর দিল তৃণমূল ।
লকডাউনের মাঝে বেজায় ফাঁপড়ে পড়েছিলেন ওঁরা । হারিয়েছিলেন কাজ । নিজের বাড়ি ফিরতে পড়তে হয়েছিল বড় সমস্যায় । অনেকেই দু'বেলা দু'মুঠো অন্নের সংস্থানটুকু করতে পারেননি । ফলে ওঁরা ক্ষোভে ফুঁসছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে । সেই ক্ষোভ উস্কে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি । তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে বারবার দেখা করেন । খোঁজ নেন তাঁদের অসুবিধার । তারপরেই দিল্লির রাস্তায় দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকরা বেরিয়ে পড়েন । জাতীয় সড়ক ধরে তাঁরা হাঁটতে শুরু করেন । মহারাষ্ট্রেও দেখা যায় একই চিত্র । সে সময় বিরোধীদের দাবি ছিল, পরিকল্পনাহীন লকডাউন এর জেরেই সমস্যায় পড়তে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের । তাঁদের প্রয়োজনীয় রেশনটুকু পর্যন্ত পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ । বিরোধীদের এই চাপের কাছে কার্যত মাথা নুইয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ ট্রেনে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে ।
প্যানডেমিকের সময় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে মানতে চায়নি রাজ্য । নবান্নের ভয় ছিল, এই শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে এলে বেড়ে যাবে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । যদিও পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সক্রিয় হয় রাজ্য সরকার । গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নে দাবি করেন, লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাংলায় অভূতপূর্ব সাফল্য মিলেছে । পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য গোড়া থেকেই রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করেছে । সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ ছিল, কোনওভাবে সরকারি প্রকল্পতে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হোক । 100 দিনের কাজ সহ একাধিক প্রকল্পে শ্রমিকদের কাজে লাগানোর ব্যাপারে অগ্রাধিকারের নির্দেশ দেন তিনি । পুরুলিয়াতে তৈরি করা হয় “মাটির সৃষ্টি" নামে প্রকল্প । যে প্রকল্প ইতিমধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখেছে । পুরুলিয়ার রুক্ষ মাটিতে শ্রমিকদের দক্ষতায় ফলেছে নানা রকমের সবজি । সেই সবজি পাওয়া যাচ্ছে সরকারি বিপণীগুলিতে । মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রাজ্যে 5 লাখ 44 হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে কাজ দেওয়া হয়েছে । সাড়ে তিন লাখের বেশি শ্রমিক নতুন করে জব কার্ড পেয়েছেন ।
তৃণমূল মনে করছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ পরিযায়ী শ্রমিকদের তাঁদের দিকে টেনে আনবে । আর সেই কারণেই আজ সর্বদলীয় বৈঠকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় । বৈঠকের পর তিনি বলেন, “ রাজ্যে বহু পরিযায়ী শ্রমিক এসেছেন । এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা হয়ত এখানে থাকতেন না বহু বছর । ফলে এখানকার তালিকায় তাঁদের নাম নেই । তাঁদের নাম যেন ভোটার তালিকায় উঠে তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে ।" তৃণমূলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে একই দাবি জানিয়েছে বামপন্থীরাও ।